পর্দা : জান্নাতুল মাওয়া তামান্না – News Portal 24
ঢাকাSunday , ২ এপ্রিল ২০২৩

পর্দা : জান্নাতুল মাওয়া তামান্না

নিউজ পোর্টাল ২৪
এপ্রিল ২, ২০২৩ ১:৪৪ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

গত রমজানেরটা সহ ১০ বার আমার বিয়ে ভেঙেছে। মা-বাবার কথা না শুনলেও, এলাকার গুনীজনদের কথা মা-বাবাকে ঠিকই শুনতে হয়। আমার নাকি কখনো বিয়ে হবেনা। আমি অলক্ষ্যে। আমার ছোট অনেক মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের সন্তানের আমাকে আন্টি বলে ডাকে। অথচ আজ অবধি আমার বিয়েটাই হলোনা। আল্লাহ আমার কপালে কি রেখেছেন? কেমন হবে আমার ভবিষ্যৎ? জানিনা।

আমি সুমাইয়া। ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। আমরা ভাই-বোন ৩ জন। আমার বাবা একজন কৃষক। মা গৃহিণী। অনেক কষ্ট করে চলতে হয় আমাদের। তবে ছোটকাল থেকেই আল্লাহর বিধান ‘পর্দা’ মেনে চলার চেষ্টা করি। আমার জানামতে আজ পর্যন্ত আমার কথা বা কন্ঠ কোনো পরপুরুষ শুনেনি, দেখবেতো দূরের কথা।

আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন আমাদের পাশের বাড়িতে তাবলীগের মাসতূরাত জামাত আসে। সেই জামাতে আসা মহিলাদের মুখে পর্দা সম্পর্কে বয়ান শুনি। বয়ানগুলো আমার মনে বেশ জায়গা করে নিয়েছে। বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

২০১৮ সাল। রমজানের দু’দিন আগে ১০ নাম্বার পাত্র পক্ষ দেখতে আসে। ছেলে ব্যাবসায়ী। অনেক টাকাপয়সার মালিক। তার মা’কে খুব বিশ্বাস করে আমাদের বাড়িতে পাঠায়। আমি এটা খুব করে বিশ্বাস করি যে, যেই ছেলে তার মা’কে ভালোবাসতে পারে সেই ছেলে বৌকেও ভালোবাসবে। ছেলের মা আমাকে দেখে পছন্দ করে। বায়না করে আর ঈদের একসপ্তাহ পর বিয়ে ঠিক করে যায়।

ঈদের দু’দিন আগে ওই ছেলে (যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়) আমাদের বাড়িতে ফোন করে। পরিবারের সবার সাথে কথা বলে। কথা বলার একপর্যায়ে বাবার কাছে আমার কথা জিজ্ঞেস করে। উত্তরে বাবা বললো;- “সুমাইয়া তার নানার বাড়িতে। ওই বাড়িতেই ঈদ করবে।”

কিভাবে যেনো আমার ছোট ভাইকে ম্যনেজ করে আমার নানুর নাম্বার নেয়। নানুর ফোনে কল দিয়ে অনেকটা সময় কথা বলে। আমাকে ফোন দিতে নানুকে বার বার বলে। কিন্তু নানু ভালো করেই জানে আমি কখনোই বিয়ের আগে ওনার সাথে কথা বলবোনা। তারপরেও নানু অনুরোধ করে “ঈদ মোবারক” কথাটি বলে কেটে দিতে। কিন্তু আমি বলিনি। রাগে অভিমানে ছেলেটি বিয়ে করবেনা বলে তার মাকে বলে। তার মা আমাদেরকে জানিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আমিও খুশী হয়েছি। যেই ছেলের মধ্যে একসপ্তাহ অপেক্ষা করার ধৈর্য নেই সেই ছেলের সাথে সারাজীবন কাটাবো কিভাবে?

২০১৮ সাল। কোরবানের ঈদের কিছুদিন পরে আমাকে দেখতে আমাদের পাশের এলাকা থেকে একজন পাত্রপক্ষ আসে। সাথে ছিলো পাত্রের মা। বরাবরের মতো এবারও পাত্রের মা আমাকে পছন্দ করে। বিয়ে ঠিক করে যায়।

ইসলামের নিয়ম-নিতী আইন অনুযায়ী আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের দিন প্রচুর বৃষ্টি ছিলো। তাই বাধ্য হয়ে মসজিদে আমাদের বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়। ছোট বেলা থেকে আমার খুব ইচ্ছে ছিল আমার বিয়েটা যেনো মসজিদেই হয়। আল্লাহ আমার আশা পূরণ করেছেন।

বিয়ের কয়েকদিন পরে আমার স্বামী আমাকে তার কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলো;-
-আচ্ছা সুমাইয়া একটা কথা বলতো;-
“গোসল করে তুমি ভেজা কাপড় বাহিরে শুকাতে দাওনা কেনো?”
উত্তরে বললাম ;-
– বাহিরে শুকাতে দেইনা কারণ, “আমার ব্যাবহৃত পোশাক গুলো যাতে কোনো মাহরাম কোনো পুরুষের নজরে না পড়ে!”
-মাঝে মাঝে আমাকে ডাকার জন্যে দরজাতে টোকা দাও কেনো?
– এটাতো সবসময় করিনা। যখন আপনার সাথে বাসায় কোনো মেহমান থাকে, তখন আপনাকে ইঙ্গিত করে দরজায় কষাঘাত করি। যাতে আমার কন্ঠ বাহিরের কোনো পরপুরুষ শুনতে না পায়।
আপনার প্রশ্নের আগেই আরো কয়েকটা কথা বলে রাখি শুনেন;-
আমি বাহিরে বের হলে সবসময় হাত মোজা, পা মোজা ও ফুল নিকাবওয়ালা গোলপার্ট ঢিলেঢালা বোরকা পরে বের হই। কখনো সেন্ট অথবা সুগন্ধিজাতীয় কোনো কিছু ব্যাবহার করিনা যাতে তার ঘ্রান পরপুরুষের নাকে না যায়।

এটা খুব ভালো করে শুনে রাখেন আমি কেমন? কালো নাকি ফর্সা? মোটা নাকি চিকন? এগুলো কখনো বাহিরের পরপুরুষকে বলবেননা। যাতে কোনো বেগানা পুরুষ আমাকে কখনো কল্পনাও করতে না পারে।
সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবান তোমার মত একটা দ্বীনি স্ত্রী পেয়ে। আর পর্দা এমনই হওয়া উচিত। আসলে এসবই ইসলামের নিয়ম যা সব মেয়েদের পালন করা কর্তব্য।

(“সব মুসলমান মেয়েরা যদি সুমাইয়ার মতো হতো তাহলে ঘুনেধরা সমাজের চেহারাই পাল্টে যেত। সমাজে বিরাজ করতো শান্তি আর শান্তি।”)

#লেখাঃ_পর্দা
#লেখিকাঃ_জান্নাতুল_মাওয়া_তামান্না