গরম নয় ঠাণ্ডা জলেই রান্না হয় এই চাল! জেনে নিন এই জাদুকরী ধানের কাহিনী।
আপনি শুনে অবাক হবেন যে ভারতবর্ষে এমন এক ধরণের চাল জন্মায় যা রান্না করার জন্য আপনার গরম জল বা ফুটন্ত জলের প্রয়োজন হয় না, এই চাল রান্না করার জন্য শুধুমাত্র ঠান্ডা জলের প্রয়োজন হয়। আসামে জন্মানো বোকা চাল ম্যাজিক রাইস নামেও পরিচিত।প্রাকৃতিক উর্বরতার আশীর্বাদপুষ্ট আসামের মাটি ও জলবায়ু এই চালকে একটি অনন্য স্বাদ এবং সুগন্ধ দেয়।
বোকা ধান মূলত আসামের কোকরাঝাড়, বারপেটা, নলবাড়ি, বক্সা, ধুবরি, দারাং, কামরূপ এলাকায় চাষ করা হয়।
খরিফ মৌসুমে অর্থাৎ জুন মাসে আসামে বোকা ধান বপন করা হয়। তারপর অক্টোবরে ফসল প্রস্তুত হয়।বোকা ধান বা বোকা চাল আসামের পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসীরা চাষ করে। এই চালে ১০.৭৩% ফাইবার এবং ৬.৮% প্রোটিন রয়েছে। এছাড়া বোকা চালে শরীরের প্রয়োজনীয় অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা ওজন কমাতে খুবই সহায়ক।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে বোকা ধানের সোনালি ইতিহাস আমরা অবশ্যই পড়ব। এই চাল থেকে রান্না করা ভাত অনেক শত্রুকে নির্মূল করতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও, এই ধানের সাহায্যে, অনেক যুদ্ধ জয় করা হয়েছে। এই গল্পটি ১৭ শতকের। যখন আহোম সৈন্যরা মুঘল সেনাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে বোকা ভাত খাচ্ছিল।যেহেতু এই চাল রান্না করার প্রয়োজন ছিল না, তাই সৈন্যদের পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে সময় বাঁচানোর জন্য সুবিধাজনক ছিল।
বোকা চাল ৫০ থেকে ৬০ মিনিট/ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভাত প্রস্তুত হয়। এই চাল বোকা রাইস, বোকা চোলে এবং ওরিজা স্যাটিভা নামে পরিচিত। আসামের বোকা চাল থেকে বিভিন্ন ধরণের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা হয় যা দই, গুড়, দুধ, চিনি বা অন্যান্য খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়।
ভারত সরকার আসামে উৎপাদিত এই ধানকে জিআই ট্যাগ দিয়েছে। এখন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশেও এই ধানের চাষ হয়। বোকা চাল রান্না করা যতটা সহজ,এই চাল উৎপাদন করাটা ঠিক ততটাই কঠিন। আধা একর জমিতে মাত্র পাঁচ বস্তা ধান পাওয়া যায়। এই ধান পাকতে প্রায় ১৪৫ দিন লেগে যায়।