গতকাল সোমবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে একটি খবর। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, দেশের বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র সনাতন ধর্ম থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। প্রমাণ হিসেবে এই অভিনেতার পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হচ্ছে। আসলে গুঞ্জনটি শুধুই গুঞ্জন। এর কোনো সত্যতা নেই। এ নিয়ে প্রবীর মিত্রের পরিবার বিব্রত ও বিরক্ত। এই গুঞ্জনের উৎস কোথায়, সেটাও জানে না পরিবার।
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে শুরু করে অনেকের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে খবরটি দেখা যাচ্ছে। তবে কি সত্যিই মুসলিম হয়েছেন প্রবীর মিত্র? বিষয়টি নিয়ে তাঁর ছেলে মিঠুন মিত্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি একেবারেই গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দিলেন প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন চাঁদ। তিনি বলেন, “আমার বাবা ধর্মান্তরিত হননি। এই গুজব কোথা থেকে ছড়াল জানি না। আমাকে বেশ কয়েকজন ফোন দিয়েও জানতে চাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশ বিব্রত একই সঙ্গে বিরক্ত। এসব গুজব কারা ছড়ায়, কিভাবে ছড়ায় আমি ঠিক জানি না।”
মিঠুন আরও বলেন, “আমার মা মুসলিম ছিলেন। তবে বাবা তার সনাতন ধর্মই পালন করছেন। যারা এমন খবর ছড়াচ্ছেন তারা ঠিক কাজ করছেন না। বাবার মতো একজন অভিনেতার নামে এমন গুঞ্জন গ্রহণযোগ্য নয়। আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি, না জেনে কোনো তথ্য ছড়াবেন না।”
এদিকে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন প্রবীর মিত্র। সারাদিন বাসায় সময় কাটে। নানারকম অসুখ বাসা বেঁধেছে শরীরে।
তিনি জানান, বাবা অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। নতুন করে যোগ হয়েছে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার সমস্যা। প্রায়ই তিনি কিছু মনে করতে পারেন না। বাবার শ্রবণশক্তিও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। উচ্চস্বরে কথা বললে উত্তর দিতে পারেন। হৃদরোগের জটিলতাও রয়েছে।
এর আগেও একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছিল। যা সবই পরে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এবারও অভিনেতাকে ঘিরে নতুন গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পরিবারের মানুষও বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
এদিকে, গুঞ্জনের উৎস জানা না গেলেও শোবিজ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কিছুই ইউটিউব চ্যানেল থেকে নিয়ম করে এমন গুঞ্জন ছড়ানো হয়। মূলত ভিউ বাড়ানোর জন্য এমন কাজ করা হয়। কিছু ফেসবুক পেইজ রিচ বাড়ানোর জন্যও এমন কাজ করে থাকে। কিছু অখ্যাত অনলাইন পোর্টাল এসব সোর্স থেকে নিউজ করে দেয়, ফলে গুঞ্জন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যক্তিজীবনে অজান্তা মিত্রকে বিয়ে করেছিলেন প্রবীর মিত্র। তার স্ত্রী ২০০০ সালে মারা যান। অভিনেতার সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা হলেন মিঠুন মিত্র, ফেরদৌস পারভীন, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এর মধ্যে সামিউল মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখেন প্রবীর মিত্র। ‘লালকুটি’ থিয়েটারে কাজ করেছেন অনেক দিন। এরপর পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। প্রবীর মিত্রের প্রথম সিনেমার নাম ‘জলছবি’।
ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় তিনি ছিলেন নায়ক। এ ছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাতেও তিনি ছিলেন মূখ্য চরিত্রে। এরপর ধীরে ধীরে প্রবীর মিত্র মনোযোগী হন চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ে।