কর্মক্ষেত্রে নানান দুর্ঘটনায় পুলিশের প্রাণহানিতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলাটা কি যুক্তিযুক্ত? - News Portal 24
ঢাকাMonday , ২ অক্টোবর ২০২৩

কর্মক্ষেত্রে নানান দুর্ঘটনায় পুলিশের প্রাণহানিতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলাটা কি যুক্তিযুক্ত?

নিউজ পোর্টাল ২৪
অক্টোবর ২, ২০২৩ ৩:১০ অপরাহ্ন
Link Copied!

পুলিশ তো জনগণের বন্ধু, সাধারণের ভরসাস্থল।সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপরাধ দমনে গত কয়েক বছরে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে বাংলাদেশ পুলিশ। পেশাদারিত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অভাবনীয় সাফল্য তাঁদের।

কর্মক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনায় কিংবা জনগণের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশের মৃত্যুতে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ ‘আলহামদুলিল্লাহ’— লিখে এমন নেতিবাচক মন্তব্য করাটা আসলে কি ঠিক? সাম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তার রিপোর্ট প্রকাশ করে একটি গণমাধ্যম সেখানে ৭০% মানুষ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে আমাকে তাই নিজের পরিচয় গোপন করে পুলিশের কাজগুলো দেখার চেষ্টা করি।

প্রথম দিনেই মহিপুর থানায় গিয়ে বসলাম দেখলাম এক বয়স্ক পুলিশ সদস্য হাতে ভারী অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রাম—গঞ্জের মানুষ তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ওসির রুম কোথায়, এসআই বসে কোথায়, ডিউটি অফিসার কে, অভিযোগ কোথায় লিখে এসব নানান প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন ওই পুলিশ সদস্য জিজ্ঞেস করলাম কতদিন ধরে এমন সেবা দিচ্ছেন তিনি উত্তর দিলো ২৫ বছর ধরে।

পুলিশ তো দিনরাত মানুষের জন্যই কাজ করে , সততা মানেই সততা, শতভাগ সততা। একভাগও কম হলে সেখানে কাজ করা যায়না। পেশাদারিত্বের সাথে শতভাগ সততা নিয়ে কাজ করাই হবে পুলিশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। একটি মিথ্যা মামলাও দিয়ে কাউকে হয়রানি করেনা পুলিশ। মিথ্যা মামলা করার জন্য পুলিশের জন্ম না। পুলিশ মামলাবাজ না। মামলা করার জন্য পুলিশ না। পুলিশ মানুষের সেবা করার জন্য। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য। মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে সেটাই হচ্ছে পুলিশের কাজ। কাউকে ফাঁসানোর জন্য, কাউকে ধরে আনার জন্য, কারো বাড়ি দখল ছুটিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ না। পুলিশের জন্য আইন আছে। ১৮৬১ সালের আইনে যা বলা আছে পুলিশ সেভাবেই চলছে।

এরপর দেখতে চাইলাম রাতের পুলিশ কেমন হয় ইচ্ছে করেই বেশি রাত করে আলিপুর থেকে রওনা হলাম চাপলির যাওয়ার পড়ে আমার বাইকটি দাড় করালো এএসআই আলামিন। জিজ্ঞেস করলো এতরাতে কোথায় থেকে আসলেন, বললাম একটু কাজ ছিলো তাই দেরি হয়েছে। নম্রভাবে বললো কিছু মনে না করলে আপনাকে একটু সার্চ করবো আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে করেন এরপর আমাকে তল্লাশি করার পড়ে বললো। আসলে এই তল্লাশিটা কিন্তু আপনার এলাকার সমাজের ভালোর জন্যই করেছি এটা অনেকেই বুঝতে চায় না বিভিন্ন মন্তব্য করে দূরে গিয়ে। আসলে আমরা শারারাত না ঘুমিয়ে আপনার এলাকার মানুষকে সেবা দিচ্ছি এইযে দেখুন আপনি আমি আর আমার ফোর্স ছাড়া রাস্তায় কেউ নেই। সবাই গভীর ঘুমে অথচ আমরা শারারাত মানুষের জন্য কাজ করি রোদ বৃষ্টি বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই আমরা মাঠে কাজ করি। করোনাকালীন সময়ে কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে পুলিশ ছিলো দাফন সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিন্তু পুলিশই বহন করেছেন কিন্তু মানুষ তা মনে রাখেনা।

আরও পড়ুনঃ  গ্রাম বাংলার সাংবাদিকদের দেখার যেন কেউ নেই

 

কথার আলাপচারিতায় জানতে চাইলাম ওই পুলিশ সদস্যের কাছে, আপনারা আমাদের জন্য এত কাজ করেন আমাদের এলাকায় একটা দূর্ঘটনা ঘটলে সবার আগে আমরা আপনাদের পাই তবু আপনাদের প্রতি আমাদের এত আক্ষেপ কেন? জবাবে ওই পুলিশ সদস্য বললো, দেখুন আপনি বাসা থেকে বের হয়েছেন আপনার সাথে কোন অবৈধ জিনিস ছিলো না কিন্তু আপনি বাহির থেকে অবৈধ জিনিস ফিরছেন তখন আপনাকে আমরা হাতেনাতে ধরলাম এটা আপনার পরিবার অথবা আত্মীয় স্বজন কেউ মেনে নিবেনা সবাই বলবে আপনি নির্দোষ। আমরা আপনাকে ফাঁসাইছি এছাড়াও অনেক গুলো কারণ আছে ক্রাইম সহ বড় বড় আপরাধে মাঠ পর্যায়ে আমাদের কাজ করতে হয় এই জন্যই আমাদের বদনাম বেশি তাঁরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব কমেন্ট করে। তবে সব পুলিশ যে ভালো আমি সেটা বলছিনা কিছু পুলিশের জন্য আমাদের সারাদিনের পরিশ্রম গুলো নস্ট হয়। এমন অমানবিক কমেন্ট গুলো দেখলে সত্যি খারাপ লাগে আসলে সব দপ্তর ভালো মন্দ মিলিয়ে থাকেন কিন্তু আমাদের টা নিয়ে মানুষ বেশি খারাপ মন্তব্য করেন যেটা উচিৎ না।

এএসআই বাইজিদ বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যারা আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিংবা মুক্তিযুদ্ধ পাইনি তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কিংবা শহীদ হতে পারব না। তবে আমাদের জন্য একটাই সুযোগ জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মানুষকে সেবা দিতে পারব। মানুষকে সত্য ও ন্যায় বিচার দিতে পারব। মানুষের ন্যায় বিচারের জন্য যাতে কখনই পিছপা হব না। সততার নিরানব্বই ভাগ কিংবা আশিভাগ সততা বলে কোন শব্দ নেই। সততা মানে হচ্ছে শতভাগ সততা।

এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, দেখেন আসলে বেশির পুলিশের উপরে মানুষের আক্ষেপ শুধু রাজনীতির কারনে বিরোধী দল মনে করে শুধু প্রতিপক্ষ পুলিশ আর কেউ না।

সচেতন মহল মনে করেন— দুর্নীতির পাশাপাশি, এ সব থানা সম্পর্কে ব্যাপক মানুষের ধারণা এমন- এখানে অবৈধভাবে নিরীহ মানুষকে আটকে রাখা হয়, হাজতে মৃত্যু ঘটে, আটক ব্যক্তির কাছ থেকে নির্যাতন করে টাকা আদায় করা হয় ইত্যাদি। স্বাধীনতার পর থেকে কত কত কমিশন হলো, কমিটি হলো। কিন্তু কোনোভাবেই এ ‘থানা সংস্কৃতি’ থেকে আমরা আর বের হতে পারিনি। থানা নিয়ে মানুষের আতংক আছে। এই থানাই আবার মানুষের দোরগোড়ায় সাধারণকে রাষ্ট্রের পক্ষে ন্যায়বিচার দেওয়ার প্রথম প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মানুষ কেন তা মনে করে না? প্রথমত উন্নত বিশ্বে পুলিশ স্টেশন মানে সেবাকেন্দ্র। আমাদের দেশে তা রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রদর্শনের প্রধান কেন্দ্র। আর এভাবেই পুলিশ বাহিনী হয়ে উঠেছে, জনগণ থেকে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এক বাহিনী। কিন্তু এভাবে একটি বাহিনী যুগের পর যুগ মানুষ থেকে দূরে থাকতে পারে না। মানুষের হয়ে উঠতে এই বাহিনীর একটি বড় অন্তরায় হলো রাজনৈতিকভাবে তাদের ব্যবহার।

আরও পড়ুনঃ  গ্রাম বাংলার সাংবাদিকদের দেখার যেন কেউ নেই

মহিপুর থানার ওসি ফেরদৌস আলম খান বলেন,
বাংলাদেশ পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, মামলা গ্রহণ, বিচারে সহায়তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটোকলসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে। করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও। সেপ্টেম্বর মাসের হিসেব করলেই আমাদের দুটি সাফল্য আছে, প্রথমত জেলে ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা করে ৮০ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো আমরা নিরলসভাবে কাজ করে, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতারককে ধরতে সক্ষম হই। দ্বিতীয়ত হাত পা কাঁটার মত জঘন্য কাজ করা অপরাধীকে আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে আটক করি আসলে এই কাজ গুলো কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্যই।

বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করে তোলা, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে শিক্ষার্থীসহ অন্যদের আগ্রহী করে তোলা, হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে ওঠা—ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।

পুলিশের বিরুদ্ধে সদর দপ্তরে স্থাপিত ‘আইজিপি’স কমপ্লেন সেল’ ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে। পুলিশ সদস্যের যে কোনো অপেশাদার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এই সেলকে জানানো যায়। সরাসরি, কুরিয়ার সার্ভিস কিংবা ডাকযোগে তথ্য জানানো যায়। যা অনেক দপ্তরেই নেই তবুও আমাদের সব বদনাম আমাদের আরও মানবিক হতে হবে পুলিশ এই দেশের এবং দশের জন্যই কাজ করে।