স্বাধীনতা কোথায়, “স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে চাই” - News Portal 24
ঢাকাThursday , ২৪ অগাস্ট ২০২৩

স্বাধীনতা কোথায়, “স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে চাই”

সাকিব আহমেদ
অগাস্ট ২৪, ২০২৩ ১২:৫২ অপরাহ্ন
Link Copied!

একটি দেশ তথা একটি জাতিকে যিনি তার জীবনের সর্বত্র দিয়ে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন! সারাজীবন যার কেটেছে সংগ্রাম-সাধনায়। এই দেশকে শকুনদের হাত থেকে মুক্ত করায়। দেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলায়। যিনি স্বাধীনতা অর্জনকালে ৪ হাজার ৬৭৫ দিন কারাভোগ করেও স্বাধীনতা অর্জনে থেমে থাকেননি, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালের ২৬’শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, তিনি বেঁচে থাকাকালীন দেশে স্বাধীনতা থাকলেও এ দেশে এখন স্বাধীনতা বলতে শুধু ‘স্বাধীন’ শব্দটুকু আছে। এখানে কোন স্বাধীনতা নেই! নতুন করে আবারও দেশ কে স্বাধীন করতে হবে, দেশের সাধারণ জনগণ কে স্বাধীনতা দিতে হবে, তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন নতুন করে চলতে শুরু করল তখন শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের শিক্ষিত দুর্নীতিবাজদের খুব সহজে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তিনি দেশের ভবিষ্যৎ মনোনিবেশন করে অনিয়ম-দুর্নীতি দেখে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, যাও ভিক্ষা করে আনি— তাও চাটার গুষ্টি চাইটা খাইয়া ফালাইদেয়— আমার গরীব পায়না। এতো চোরের চোর, চোর কই থিকা যে পয়দা হয়েছে আমি জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে। এই চোর টুক থুয়ে গেছে আমা-গ কাছে। এই চোর নিয়ে গেলে আমি বাঁচতাম। কিছু দালাল নিয়ে গেছে, চোর গেলি বাঁচা যাইতো।’ তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো এই চোরের খনি এবং দুর্নীতিবাজদের নিষ্ক্রিয় করে যেতে পারতেন কিন্তু বাংলাদেশের রাজাকারদের জন্য তিনি এ সুযোগ পায়নি। এটা অবশ্যই আমাদের সাধারণ জনগণের জন্য বড় দুঃখ এবং কষ্ট-সাধ্য ব্যাপার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে হয়তো আবারও এদেশ স্বাধীনতা ফিরে পেতো। দেশের একজন নিম্নপদস্থ-লোক তার স্বাধীনতা পেতো। তিনি বেঁচে থাকলে দেশের ঘুষ-দুর্নীতি কমিয়ে ফেলতেন। তিনি শুধু এদেশের একজন রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, বরং তিনি এদেশের সাধারণ জনগণের একজন বিশ্বস্ত নেতা ছিলেন। যিনি বাঙ্গালীদের নতুন দেশ তথা স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার নতুন সম্ভাব্য-ময় পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।

তিনি যা অনুধাবন করেছিলেন দেশে এখন তাই হচ্ছে। শিক্ষিত লোকেরাই চোরা-কারবারির সাথে যুক্ত। ভেবে দেখুন, দেশে যতো অর্থপাচারকারী, ঘুষ-খোর,দুর্নীতিবাজ আছে তাদের মধ্যে অশিক্ষিত লোক ক-জন? স্বাধীনদেশের একজন শ্রমিক কিংবা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সাথে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যেমন আচার-আচরণ করার কথা তারা কি তা করছে? পুলিশ হলো বাংলাদেশের একমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। কিন্তু বর্তমান সাধারণ জনগণের সাথে তারা ঠিক কেমন শৃঙ্খলা দেখাচ্ছেন?

দেশের রাজনৈতিক অবস্থার কথা তেমন ভাবে নাই বল্লাম! একটু ভাবুন তো, বঙ্গবন্ধু যেমন রাজনীতি চেয়েছিলেন স্বাধীন দেশে সত্যি কি আমরা তেমন রাজনীতি পেয়েছি? বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীদের কথা আমি বলব না বা বলতে চাইও না। বর্তমান রাজনীতির মধ্যে কোন স্বাধীনতা নেই সব এক প্রন্থা রাজনীতি। যে রাজনীতির কোন ভিত্তি হয় না।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের মধ্যে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি (জাপা), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহ বেশ কিছু দল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। দীর্ঘদিন ধরে দেখে এসেছি, যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন তারা সাধারণ জনগণ কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে এক দল অপর দলকে হোটানোর জন্য ব্যবসায়ীদের দিয়ে সিন্ডিকেট করান কিংবা সিন্ডিকেট হয় রাষ্ট্র আন্দোলনের মাধ্যমে। সিন্ডিকেটের জন্য অবশ্যই ক্ষমতার বিপরীতে থাকা রাজনৈতিক দল যুক্ত থাকেন। এখানে অবশ্য ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর দায়-ভার নিতে হবে, তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কি-ভাবে সিন্ডিকেট হয়? নাকি এই সিন্ডিকেটের সাথে সরকার কিংবা সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত আছে। তা অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ঘেটে দেখা উচিৎ। কিন্তু আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা তা কখনও করে না। তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের শুভাকাঙ্খী হয়ে উঠেন। যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক বয়ে আনে। তা হলে এদেশের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা কোথায়?

এ সব সিন্ডিকেট কিংবা দুর্নীতির কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় এদেশের সাধারণ জনগণের। রাজনৈতিক দল একে-অপরের বিরোধিতা করবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তারা শুধু বিরোধিতা নয় বরং কি ভাবে ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতন ঘটানো যায়, হোক সেটা অবৈধ ভাবে সে কথাই ভাবতে থাকেন ক্ষমতাসীন বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতারা। অপর দিকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল অবৈধ পথ বেছে নিতেও পেছনের কথা ভাবেন না।

এটা কি স্বাধীন দেশের সুস্থ রাজনীতি?

একটি দেশের উন্নয়নের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সে দেশের রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থান। যদি বাংলাদেশের রাজনীতি কখনও পরিবর্তন না ঘটে তবে আমরা বিশ্বের মধ্যে আমাদের সোনার দেশ নিয়ে এগিয়ে যাব কি-ভাবে?

সত্যি এটা কি স্বাধীন দেশের রাজনীতির মধ্যে পড়ে? এ রাজনীতি যেন জোর যায় মুল্লুক তার পন্থা ভেবে, যুগ-যুগ ধরে আমাদের সাধারণ জনগণের উপর মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সে ভাবছে কি ভাবে বিএনপি কে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যায়! অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারা ভাবেন কি ভাবে আওয়ামী লীগ কে নিষ্ক্রিয় করা যায়। এ ধরনের রাজনীতির কারণে প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করার সুযোগ পাচ্ছে- একবার তেলে, নয়-তো সাধারণ মানুষ আন্দোলনে গেলে (আইন, প্রশাসনের সিন্ডিকেট)!

এ দেশের একজন রাজনৈতিক নেতা আন্দোলনে গেলে তার উপর আইন কতোটুকু প্রয়োগ করা হয়? অথচ একজন সাধারণ নাগরিক তার অধিকার পাওয়ার জন্য আন্দোলন করলে তার উপর দেশের সর্বচ্চ আইন প্রয়োগ করা হয়। আমরা সাধারণ নাগরিকেরা যেন এদেশে ভেসে আসা কচুরিপানা! যাদের কোন অধিকার দেখানোর দু-সাহস নেই। এ দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সরকারি একজন অফিস সহায়ক পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ। যাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পর্যন্ত পায় না একজন সাধারণ নাগরিক।

একজন সাধারণ নাগরিক তার অধিকার পাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে দেখুন, তার অবস্থা কি হয়!

বর্তমানের রাজনৈতিক পেক্ষাপটে, দল-মত নির্বিশেষে আমাদের দেশে কোন রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশকে ভালোবাসে এবং দেশের সাধারণ জনগণের কথা ভাবেন? না তার মতো করে কেও এ-দেশ কে নিয়ে ভাবেন না। বড়-বড় সকল রাজনৈতিক নেতারা দেশের বাহিরে ব্যাংক ভরে তাদের অট্টালিকা গড়ে-তুলেছেন। দেশ এখন রসাতলে গেলেও কারো কিছু যাবে-আসবে না। মরলে এদেশের সাধারণ মানুষেরা মরবে। নতুন করে কেউ বঙ্গবন্ধুর মতো দেশের মানুষের কথা কিংবা দেশের কথা চিন্তা করবে না।

এদেশে আবারও একজন বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজন। যে নতুন করে আবার স্বাধীনতার ঘোষণা দিবেন। এদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে ঐতিহাসিক ভাষণে বলবেন, “আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কিন্তু যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে–শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় দুর্গ গড়ে তুলবেন এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক তরুণ সাহিত্য ম্যাগাজিন।