এবার ৩ মাস তেরো দিন পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। যা কিনা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অঙ্কের দান। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই টাকায় পাগলা মসজিদকে আন্তর্জাতিক মানের কমপ্লেক্স বানানো হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, আগের বার খোলার সাড়ে তিন মাস পর শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে আবারও খোলা হয় কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। ৮টি দানবাক্স খুলে বের করা হয় ২৩ বস্তা ভর্তি টাকা এবং টাকাগুলো গণনার জন্য মসজিদের দোতলায় নেওয়া হয়।
পাগলা মসজিদে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত আলী জানান, টাকা ছাড়াও দানবাক্সে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ এবং রূপার তৈরি অলঙ্কার। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা।
টাকা গণনা কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ.টি.এম ফরহাদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মহুয়া মোমতাজ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি), এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাশিতা-তুল ইসলাম, তানিয়া আক্তার, নাবিলা ফেরদৌস, মাহমুদা বেগম সাথী, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মো. আনোয়ার কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা ও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলুসহ মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নেন।
এর আগে গত ৬ মে ১৯টি বস্তায় পাওয়া গিয়েছিল ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। এছাড়া চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ৩ মাস ১ দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২০টি বস্তায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া যায়।
দান করলে রোগ-বালাই দূর হওয়াসহ মনোবাসনা পূর্ণ হয়, এমন বিশ্বাস থেকেই এখানে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। নগদ অর্থ ছাড়াও দান হিসেবে পাওয়া গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির টাকা রাখা হয় ব্যাংকে।
জনশ্রুতি আছে, প্রায় ২৫০ বছর আগে নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে আসেন এক আধ্যাত্মিক পুরুষ। তাঁর মৃত্যুর পর কবরের পাশে গড়ে ওঠে মসজিদ, যা পরে পরিচিতি পায় পাগলা মসজিদ নামে। তবে পাগলা মসজিদ বর্তমানে দেশ-বিদেশে কিশোরগঞ্জের পরিচিতি স্মারক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন যত যাচ্ছে পাগলা মসজিদের খ্যাতি ও জৌলুস ততই যেন বাড়ছে। স্বভাবতই ঐতিহাসিক এই মসজিদকে নিয়ে জেলার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই গর্ববোধ করেন।