গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত ৫০০ জনের মধ্যে ৩০০ জনই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের নাগরিক। রোববার (১৮ জুন) পাকিস্তানে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১২ মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পুলিশ। খবর সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবা।
গত বুধবার (১৪ জুন) গ্রিসের উপকূলে শতাধিক শিশুসহ কমপক্ষে ৭৫০ নারী-পুরুষবাহী পুরোনো নৌকাটি ডুবে যায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন প্রত্যাশী এসব যাত্রীদের মধ্যে আরও ছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও মিশরের নাগরিক।
কয়েকশ অভিবাসীর প্রাণহানির পর রোববার পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারীদের গ্রেপ্তার করেছে। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। লিবিয়া হয়ে এসব যাত্রীদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচারের উদ্দেশ্য ছিল তাদের। যাত্রীদের অধিকাংশই যুবক।
আজাদ কাশ্মীরের বান্দিয়ান গ্রামের বাসিন্দা রাজা সাকুন্দর জানিয়েছেন, তার চার ভাতিজা যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৬ বছর গত কয়েক সপ্তাহ নিখোঁজ রয়েছে। তিনি বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছেন তারা ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে। তিনি তাদের মরদেহ দেশে আনার দাবি জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বেকারত্বসহ নানা সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের। তাই কর্মের সন্ধানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ছাড়ছে হাজারো মানুষ। পাশাপাশি উন্নত জীবনের আশায় প্রতি বছর হাজারো পাকিস্তানি যুবক অবৈধভাবে বিপজ্জনক পথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, গত বুধবার গ্রিসের পেলোপনিস উপদ্বীপের কাছে মরিচা ধরা একটি নৌকা ডুবে ৩০০ জনের মতো পাকিস্তানি মারা গেছেন।
পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা চৌধুরী শওকত বলেছেন, ‘অভিবাসীদের ইউরোপে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার যৌথ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নৌকাটিতে ৪০০ থেকে ৭৫০ জন অভিবাসী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে, শনিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রিসে নৌকাডুবির ওই ঘটনায় ১২ পাকিস্তানিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নৌকাটিতে ঠিক কতজন পাকিস্তানি ছিলেন সেবিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনও তথ্য নেই।
একজন অভিবাসন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেছেন, পাকিস্তানিদের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এর আগে, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় একদিনের জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। একই সঙ্গে মানবপাচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানবপাচারকারীদের ‘কঠোর শাস্তি’ দেয়া হবে।
শেহবাজ শরিফের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মানবপাচারের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা জোরদারের জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা আর পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হাজার হাজার পাকিস্তানি বৈধ এবং অবৈধ উপায়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।