সিলেটের ওসমানীনগরে ফুল তুলতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৭ বছরের এক কিশোরী। বর্তমানে ৮ মাসের অন্তসত্বা হয়ে বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। থানায় মামলা দায়ের হলেও গ্রেফতায় হয়নি ধর্ষক সজু (৩৩)। সে উপজেলার নিজ বুরঙ্গা গ্রামের রাখাল দেবের পুত্র।
ঘটনাটি জানা জানি হলে সজুর পরিবারের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকায় দফারফা করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে নির্যাতিতার পরিবারকে অব্যাহত হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল সোমবার ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করেন নির্যাতিতা কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে প্রতিবেশী সজু বিভিন্ন সময় ওই কিশোরীকে উত্যাক্ত করে আসছিলো। গত বছরের অক্টোবর মাসে ওই কিশোরী পূজার ফুল তুলতে সজুর বাড়িতে যায়। তখন কৌশলে সজু তাকে ঘরের ভিতর ডেকে নিয়ে মুখ চেপে কিশোরীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে জানালে কিশোরী ও তার পিতাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। পরবর্তীতে একাধিক বার ভয় দেখিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করে সজু।
একসময় কিশোরীর শারিরিক পরিবর্তন হলে বিষয়টি সজুকে জানালে সে কিশোরীকে বিয়ের আশ্বস্ত করে। শর্ত দেয় গর্ভপাত করাতে হবে। তার এই অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হলে সজু কিশোরীর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে কিশোরী তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। পরেও বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কিশোরীর গর্ভে থাকা সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করে সজু। সজুর পরিচিত বুরুঙ্গা বাজার এলাকার কথিত ডাক্তার বাসু দাশ কিশোরীকে চেকআপ করার কথা বলে তার চেম্বারে ডাকে। সেখানে গর্ভপাত করার জন্য সজুর কাছ থেকে বাসু নগদ ৩০ হাজার গ্রহণ করেছে বলে জানায়।
এমন প্রস্তাবে কিশোরী দৌঁড়ে চেম্বার থেকে পালিয়ে আসেন। পরে বুরুঙ্গা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবু নগদ ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে কিশোরীর পিতার কাছে গিয়ে গর্ভপাত করে বিষয়টি মিমাংসা করতে চাপ প্রয়োগ করেন। এতে কিশোরীর পরিবার সম্মত না হয়ে টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সন্তানের পিতার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে ইউপি সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেকে প্যানেল চেয়ারম্যান দাবি করে বলেন, থানায় গিয়েও কোন লাভ হবে না। নিরুপায় হয়ে পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতার পরিবার। পঞ্চায়েতের লোকজন শালীশে বসলে নির্ধারতি দিনে ইউপি সদস্যসহ সজুর পরিবারের কেউ উপস্থিত হননি।
পরে পঞ্চায়েতের পরামর্শে ২ মে ওসমানীনগর থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে সজুকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন কিশোরীর পিতা। মামলা দায়েরের করলে বিপত্তি বাদে ওই পরিবারের। চলতি মাসের ৬ তারিখ রাতে মামলার বাদিকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কথিত ডাক্তার বাসু দাশের চেম্বারে আটকে রাখা হয়। সেখানে বাসু দাশসহ সজুর ভাই রঞ্জু দেব, দিপংকর দেব শিবু পুনরায় ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণের মাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়া এবং কিশোরীর গর্ভপাত করাতে চাপ সৃষ্টি করে নির্যাতন করেন। ঘটনাটি থানায় জানালে সাধারণ ডায়রী করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। পুলিশের পরামর্শক্রমে তিনদিন পর নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি দায়ের করে নির্যাতিতার পিতা। ডায়রি দায়ের পরও নির্যাতনকারীরা অব্যাহত হুমকি প্রদান করছে। ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর আশংকা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন কিশোরী পিতা।
এদিকে, মামলা দায়েরের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ এখনো পর্যন্ত আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি। একাধিকবার থানা পুলিশের দ্বারস্থ হলেও আসামী গ্রেফতার ও দায়েরকৃত সাধারণ ডায়রির বিষয়ে থানা পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
নির্যাতিতা কিশোরী বলেন, আমি আমার গর্ভের সন্তানের জন্ম দিতে চাই। সন্তানের পিতা ও সজুর বৈধ স্ত্রীর পরিচয় এবং যারা আমার সন্তানকে ভূমিষ্ট হতে বাধা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত বাসু দাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সজুর পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ নেই। ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করে গর্ভপাত চেষ্টার অভিযোগটি মিথ্যা।
ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবু বলেন, আমি চাই মেয়েটি সঠিক বিচার যেন পায়। ৫ লক্ষ টাকায় দফারফার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য মাকছুদুল আমিন বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে আসামী গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি।