অণুগল্প : ভালো থেকো - News Portal 24
ঢাকাFriday , ২৩ জুন ২০২৩

অণুগল্প : ভালো থেকো

নিউজ পোর্টাল ২৪
জুন ২৩, ২০২৩ ১:২৩ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

– চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমার স্বামী বললো, বিয়ের পূর্বে তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিল আগে বলোনি তো। তাও আবার তিন বছরের কঠিন প্রেম, আচ্ছা তুমি তাকে রেখে আমাকে বিয়ে করলে কেন?

আমি তখন কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আবার মাথা উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্র তিনমাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে, আমি চাইনি আমার অতীত সে জানুক। এর প্রধান কারণ ছিল, যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে ইচ্ছে ছিল না।

আমি আস্তে করে বললাম,
– আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি তাই আর বলিনি, তাছাড়া আপনি প্রথম রাতেই বলেছিলেন যে জীবন নতুন করে শুরু করেছি। তাই সবকিছু যেন নতুন করে ভাবতে পারি।

– আচ্ছা সমস্যা নেই, আজকে হঠাৎ করেই জানতে পারলাম তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম। এসব নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো।

– ঠিক আছে।

– তোমার হাতের কাজ শেষ হয়েছে?

– হ্যাঁ।

– তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসো ঘুমিয়ে পড়ি। আগামীকাল সকালে সাতটার দিকে তুলে দেবে, জরুরি একটা কাজ আছে হাসপাতালে।

– আপনি তো ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হন, কালকে হয়তো হাঁটতে হাঁটতেই সাতটা বেজে যাবে।

– হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো।

উনি বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। আমি বেসিনে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। টগর আমার সঙ্গে এমনটা না করলেও পারতো, আমি তো সবকিছু ছেড়ে তাকে ভালোবেসিছিলাম। তাহলে সে কেন আমাকে শেষ মুহূর্তে একা ফেলে পালিয়ে গেল?
আচ্ছা, সে কীভাবে টগরের কথা জানলো?

– কি করো এখনো?

হাসবেন্ডের ডাক শুনে দ্রুত মুখ ধুয়ে বিছানায় চলে গেলাম। বাতি বন্ধ করে তার শরীরে একটা হাত রেখে চুপচাপ চোখ মেলে অন্ধকারে তাকিয়ে আছি। বারবার নিজের সঙ্গে শপথ করি ওর কথা মনে করবো না, স্বামী সংসার নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি। তবুও অবসরে কিংবা দিনশেষে অন্ধকারে কীভাবে যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় চোখের সামনে।
একজনের বুকে মাথা রেখে মনের মধ্যে আরেকজনের জন্য ডুকরে কেঁদে ওঠার অভিজ্ঞতা যাদের হয়। তারা আদৌও কখনো ভালো থাকতে পারে কি না আমার জানা নেই। যদি কেউ পারে তাহলে তার কাছ থেকে শেখার খুব তীব্র বাসনা আমার।

– ঘুমাওনি?

চমকে উঠলাম।
– আমি তো সারাদিন বাসায় থাকি, সন্ধ্যার দিকে ঘুমিয়েছিলাম তাই ঘুম পাচ্ছে না। আপনি ঘুমান।

– একটা কথা বলি?

– বলেন।

– যে মানুষটাকে এতো ভালোবাসলে সেই মানুষটা হঠাৎ কেন বদলে গেল জানতে ইচ্ছে হয়নি?

– আপনি কিছুক্ষণ আগে বলেছেন যে আমার অতীত নিয়ে আর কথা বলবেন না।

– তোমার কাছে অনুমতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

– যদি বুঝতে পারতাম প্রশ্নটা আমার অতীত নিয়ে করবেন তাহলে অনুমতি দিতাম না।

– টগর সাহেব আজকে সকালে মারা গেছে।

আমি আৎকে উঠলাম। কি বলছেন উনি? টগরের নাম জানে, টগর নাকি মারা গেছে, এসব কি বলে। শোয়া থেকে ধপ করে উঠে বসলাম, অন্ধকারে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে ওভাবেই শুয়ে শুয়ে বললো,

– টগর সাহেব কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিল। তোমাদের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসার পরিকল্পনা করার কদিন পরে সে জানতে পারে। তারপর সে তোমাকে রেখে একা একা পালিয়ে চলে আসে ঢাকায়। এখানে সে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয় কিন্তু আমি তো বিয়ে করার জন্য গ্রামের বাড়িতে গেলাম। তারপর শহরে এসে ছুটি কাটিয়ে যোগ দিলাম হাসপাতালে, কিন্তু ততদিনে টগর সাহেবের চিকিৎসা করতেন আমাদের আরেক ডাক্তার।
দুদিন ধরে তিনি অসুস্থ তাই আমাকে বললেন টগরের দিকে নজর রাখতে। আমি তার মোবাইলের স্ক্রিনে তোমার ছবি দেখে অবাক হলাম। তারপর একজন বন্ধু হয়ে ডাক্তারের মতো জিজ্ঞেস করলাম। সে তোমার আর তার ভালোবাসার গল্পটা আমাকে বললো গতকাল রাতে। ভেবেছিলাম আজকে সকালে তোমাকে নিয়ে যাবো কিন্তু তুমি বললে তোমার শরীর বেশি ভালো না তাই আর জোর করিনি। তবে যদি জানতাম কালকে সকালে নতুন সূর্য দেখার জন্য সে থাকবে না তাহলে তোমাকে নিয়ে যেতাম।

* আমি শব্দ করে কেঁদে ফেলেছি, উনি সেভাবেই চুপচাপ শুয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে বললাম,

– টগর এখন কোথায়?

– বিকেলে ওর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবার কথা ছিল, আমার ধারণা মধ্যরাতে কিংবা ভোরবেলা পৌঁছে যাবে।

– আমি চুপচাপ বসে রইলাম। তিনিও অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ, তারপর বললো,

– তোমাকে এই কথা বলতাম না, অবশ্য গ্রামের বাড়িতে কল দিয়ে জানতে পারার সম্ভাবনা ছিল। আবার তার বাসা তো অনেক দুরে তাই নাও জানতে পারতে। কিন্তু তার কথা শুনে বুঝতে পেরেছিলাম তোমার মনের মধ্যে তার প্রতি প্রচুর ঘৃণা জন্মে আছে। যদিও সে নিজেই সেটা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আমি চাই তুমি তাকে ঘৃণা না করে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করো। এমনিতেও তুমি তাকে ভুলতে পারবে না, তাই ঘৃণার চোখে স্মরণ না করে ভালোবাসা আর সম্মান দিয়ে স্মরণ করো। এতদিন তোমার তার কথা মনে হলে বারবার হয়তো তার প্রতি রাগ হতো। কিন্তু আজ থেকে দেখবে তার কথা মনে পড়লে দোয়া করতে ইচ্ছে করবে। একজন ভালো মানুষ হিসেবে আমি চাই তুমি ওই মানুষটার জন্য অভিশাপ নয়, দোয়া করো।

সমাপ্ত।

অণুগল্প।
ভালো থেকো।

মোঃ আবীদ আবরার।