সরকারের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা গেছে: প্রধানমন্ত্রী – News Portal 24
ঢাকাWednesday , ৩১ মে ২০২৩

সরকারের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা গেছে: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ পোর্টাল ২৪
মে ৩১, ২০২৩ ১১:৪৪ অপরাহ্ন
Link Copied!

সব ধরণের পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।

বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং নিরীহ মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ব্যবসায়ী নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নিয়মিত সভা আয়োজন করা।

এসব সভায় নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, চাহিদা নিরূপণ, স্থানীয় উৎপাদন, মজুত পরিস্থিতি, আমদানির পরিমাণ ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির বাধাসমূহ দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এলসি খোলার সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখা বিষয়ক বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে মার্জিন নির্ধারণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

‘দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো কোনো পণ্যের মূল্য (যেমন-ভোজ্যতেল ও চিনি) সমন্বয় করা হয়ে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত বাজার মনিটরিং টিম ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজার নিয়মিত পরিদর্শন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য, মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনোরূপ অস্বাভাবিক অবস্থা বা পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকাসহ সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং অভিযান পরিচালনা করে। সারাদেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলায় গঠিত জেলা বা উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি মাসিক সভা করে থাকে। এসব টাস্কফোর্স কমিটি জেলা ও উপজেলার বাজারসমূহে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাজারে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, মনোপলি, ওলিগোপলি অবস্থা, জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় তথ্য সংগ্রহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনে মামলা দায়েরসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের প্রথম পর্ব পবিত্র রমজান উপলক্ষে গত ৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল।

দ্বিতীয় পর্ব ৩ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান ছিল। এই পণ্যগুলো হল পরিবারপ্রতি ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি ও ১ কেজি ছোলা এবং শুধু ঢাকা মহানগরীতে অতিরিক্ত ১ কেজি খেজুর।

তিনি আরও বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তি সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সুলভ মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন ওএমএসের সংস্থান থাকলেও সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ৫ দশমিক ৫০ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়েছে।

পৌরসভা ও শহরাঞ্চলের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও ওএমএস কার্যক্রমকে বিস্তৃত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওএমএস কর্মসূচিতে সারাদেশে সর্বমোট ২ হাজার ৪১৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৪৮২টি কেন্দ্রে শুধু চাল, ৯৩৫টি কেন্দ্রে চাল ও আটা এবং দুটি কেন্দ্রে শুধু আটা বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ওএমএস কার্যক্রমে দৈনিক মোট ২ হাজার ৮৩৫ টন চাল এবং ১ হাজার ৫০ টন আটা বিক্রয় করা হচ্ছে। এ সব বিক্রয়কেন্দ্রে ৩০ টাকা কেজি দরে মাথাপিছু সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে আটা সপ্তাহে ৫ দিন বিক্রি করা হচ্ছে। এতে পবিত্র রমজান মাসে চাল ও আটার বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ স্বল্পমূল্যে চাল ও আটা কিনতে পারছে।

তিনি বলেন, কাজের সংকট ও রমজান (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল) সামনে রেখে দেশের ৫০ লাখ নিম্ন-আয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে পরিবারপ্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণপূর্বক খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এসব কার্যক্রম নেওয়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যরোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং দরিদ্র মানুষ এতে উপকৃত হচ্ছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।