ঢাকাWednesday , ২৪ মে ২০২৩

মুসলিম জাতির আধ্যাত্মিক রাহবার ছিলেন আব্দুল হালীম হুছাইনী (রহঃ)

Link Copied!

কিশোরগঞ্জের শীর্ষ আলেম, সকলের নিকট অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব, আশেকে মাদানী, আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শক, মেধাবী আলেম, পরিশুদ্ধ সাধক, দূরদর্শী পীরে কামেল আলহাজ্ব আবু বক্কর আব্দুল হালীম হুাছাইনী (রহঃ)। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে ১৯১১ সনে শরতের এক স্বর্ণোজ্জ্বল প্রভাতে জন্ম গ্রহণ করেন।

তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন প্রাইমারী মক্তবে কোরআন শিখেন তাঁর মায়ের কাছে। ১৯১৯ সালে তারাকান্দি সিনিয়র মাদ্রাসা স্থাপিত হওয়ার পর ১৯২৬ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন এবং কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে শেষ পরীক্ষায় ৩য় স্থান অর্জন করেন। ১৯২৭ সালে ঢাকা হাম্মাদিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে এফএম পাশ করেন।

১৯৩০ সালে তিনি দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় দাওরা হাদিসে ভর্তি হন। সেখানে দাওরায়ে হাদিস ও তাফসীরে ১ম স্থান অর্জন করেন এবং দারুল উলুম দেওবন্দ টাইটেলের বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৩১ সালে তিনি লাহোর ওরিয়েন্টাল কলেজে শিক্ষা অর্জন করার পর পাঞ্জাব (লাহোর) ইউনিভার্সিটি থেকে ফাজেল উপাধি লাভ করেন।

এর পর তৎকালীন ভারতের ওলীকূল শিরোমণি আরব আজমের উস্তাদ শায়খুল ইসলাম, সাইয়্যেদ হুছাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) এর দরবার শরীফে নিজেকে সোপর্দ করেন। মাদানী (রহঃ) এর দরবার শরীফে অবস্থান কালে লাহোর ওরিয়েন্টাল কলেজ ও মাতৃভূমি তারাকান্দি থেকে আব্দুল হালীম হুছাইনী (রহ.) কাছে শিক্ষকতার প্রস্তাব আসে। লাহোর ওরিয়েন্টাল কলেজের অধ্যাপকের পদ মর্যাদাকে উপেক্ষা করে মাতৃভূমির ডাকে সাড়া দিয়ে নিজ গ্রাম তারাকান্দি সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন।

নিজ গ্রামে ফিরে ১৯৩৭ সালে তিনি বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হন।

তারাকান্দি সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা সহ অনান্য মাদরাসায় কয়েক বছর শিক্ষকতা শেষে ১৯৬২ সালে প্রিয় মাতৃভূমি তারাকান্দি গ্রামে গড়ে তুলেন তারাকান্দি জামিয়া হুসাইনীয়া আছআদুল উলুম কওমি ইউনিভার্সিটি নামে একটি কওমী মাদরাসা। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার প্রাচীন এবং প্রশিদ্র মাদরাসা। তাঁর জীবদ্দশায় এই মাদরাসায় সহীহ বুখারীর দরস দিতেন।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্বম্ভরপুরে ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

তিনি ছিলেন অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ট কণ্ঠস্বর। কুফর, শিরক, যাত্রা, জুয়া, গান, বাজনার বিরুদ্ধে ছিলেন বজ্র-হুংকার।

আল্লাহ্‌ তায়ালা নবী রাসূলদেরকে মনোনীত করেছিলেন তাঁর দ্বীনকে বান্দার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আর নবী রাসূলগণ আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বিশেষ শক্তি মুজিযার মাধ্যমে দ্বীনের এই দাওয়াতকে অত্যান্ত শক্তিশালীভাবে উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ্‌ তায়ালা তাঁর নিকটবর্তী বান্দাদের কেও একটি বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে থাকেন। সেই সকল ব্যক্তিরা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শক্তি দিয়ে কারামতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তায়ালার কুদরত প্রদর্শন করে থাকেন।

ইব্রাহিম (আঃ) এর জন্য যেমন আগুন ঠান্ডা ও আরামদায়ক ছিল এবং আগুন এর ভিতরেও তিনি সুস্থ এবং ঠিকঠাক ছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে হুসাইনি রহঃ আল্লাহর উপর ভরসা করে জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করে আল্লাহর কুদরতকে মানুষের সামনে ফুঠিয়ে তুলেছিলেন। রাসূল (সাঃ) যেমন এক পিয়ালা দুধ দিয়ে আসহাবে সুফফার পুরো জামাতকে পরিতৃপ্ত করেছিলেন, হুছাইনী (রহঃ) ও তেমনি এক প্লেট খাবার দিয়ে বহু মানুষকে তৃপ্ত করেছিলেন।

হুছাইনী (রহঃ) এর সবচেয়ে বড় কারামতি ছিল তিনি কুরআন এবং সুন্নাহকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেছিলেন এবং তার থেকে কখনও কোরআন হাদিস বিরোধী কোন কর্মকান্ড কখনোই প্রকাশ পায়নি, বরং কোরআন হাদিস বিরোধী কোন কর্মকান্ড কাহারো থেকে প্রকাশ পেলে তিনি তা বীরদর্পে প্রতিহত করতেন।

এছাড়াও হুছাইনী (রহঃ) এর থেকে অনাবৃষ্টিতে দোয়ার মাধ্যমে বৃষ্টি হওয়া, মূষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ হঠাৎ থেমে যাওয়া, গাছ নিজ জায়গা থেকে সরে যাওয়া সহ অসংখ্য কারামতি প্রকাশ পেয়েছিল যার কিছুটা প্রসিদ্ধ আবার কিছুটা অগোচরেই রয়ে গেছে।

আল্লামা আব্দুল হালীম হুছাইনী (রহঃ) পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মহান এই সাধক, নিজ বাড়িতে ১৯৮৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, ২৭ ভাদ্র, ৮ মহরম শুক্রবার দিবাগত রাত্রে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবী হতে চির বিদায় গ্রহণ করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর পাকুন্দিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহনে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাঁর নিজ হাতে গড়া জামিয়া হুছাইনী মাদরাসার পাশে দাফন করা হয়।