নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো সেন্টু এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন - News Portal 24
ঢাকাThursday , ১৮ মে ২০২৩

নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো সেন্টু এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

নিউজ পোর্টাল ২৪
মে ১৮, ২০২৩ ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো মইনুজ্জামান এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে।

ঋণ নিয়ে একটি রিকশা কিনেছিলেন মইনুজ্জামান ওরফে সেন্টু। সেই রিকশা চুরি হয়ে যায়। নতুন করে ঋণ করে আরেকটি রিকশা কিনে চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে ফুসফুসের সমস্যার কারণে চিকিৎসকেরা নাকে অক্সিজেনের নল পরিয়ে দেন। সংসার চালাতে অক্সিজেনের নল পরেই রিকশা চালাচ্ছিলেন মইনুজ্জামান ওরফে সেন্টু।

ফুসফুসের সমস্যায় গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি আর রিকশা চালাতে পারবেন না।

রিকশাচালক মইনুজ্জামান ওরফে সেন্টুর বাড়ি রাজশাহী নগরের কলাবাগান মহল্লায়। দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে পবা উপজেলার দারুশা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। নগরের কলাবাগান এলাকায় দুই হাজার টাকার ভাড়াবাসায় মইনুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী চম্পা বেগম থাকেন। পাঁচ বছর ধরে ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন তিনি।

বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মইনুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে স্ত্রী চম্পা বেগমও ছিলেন। মইনুজ্জামান শয্যায় বসেছিলেন। নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো। নল খুলে কয়েক মিনিটও কথা বলতে পারছেন না তিনি।

মইনুজ্জামান বলেন, পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি রিকশা কিনেছিলেন। দুই বছরের মাথায় নগরের ঘোষপাড়ায় রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। পরে আবার ৮০ হাজার টাকা ঋণ করে আরেকটি রিকশা কেনেন। সেই রিকশাই চালাতেন। এরই মধ্যে ‘হার্নিয়া অপারেশনের’ জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে দুই জায়গায় ১ হাজার ৩৫০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। দিনে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। ওষুধ আর অক্সিজেন মিলিয়ে তাঁর দিনে ৬০০ টাকা খরচ হয়। দুই মাস ধরে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারছিলেন না। সর্বশেষ দুই দিন নাকে অক্সিজেনের নল নিয়েই রিকশা চালিয়েছেন। রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন।

আরও পড়ুনঃ  ওসমানীনগরে দশ লাখ টাকা উপহার পেল অগ্নিদগ্ধদের পরিবার

মইনুজ্জামান বললেন, ডাক্তার বলেছেন, তাঁর ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে। এখন একটি যন্ত্র কিনতে হবে। সেটা সব সময় নাকে লাগিয়ে রাখতে হবে। তাতে আপনাআপনি বাতাস থেকে অক্সিজেন আসবে। এই মেশিনের দাম ৫০ হাজার টাকা। মইনুজ্জামান চিকিৎসকের সই করা সেই কাগজ পকেট থেকে বের করে দেখালেন। তাতে লেখা আছে ‘কনসেনট্রেটর’।

রিকশাচালক মইনুজ্জামান আরও বলেন, তাঁর কাছে ওই যন্ত্র কেনার কোনো টাকা নেই। রিকশাও চালাতে পারবেন না। চিকিৎসক বলে দিয়েছেন, এখন থেকে রিকশা চালানো যাবে না। ওই যন্ত্র লাগিয়ে বসে থেকে যা করা যায়, এমন কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

কথা বলতে বলতে হঠাৎ মইনুজ্জামানের শরীর ঘেমে যায়। স্ত্রী চম্পা বেগম জামা খুলে শরীর মুছে দেন। তিনি বলেন, ‘এখন এই ঋণের কিস্তিই বা কে দেবে, মেশিন কেনার টাকাই বা কে দেবে, আর বসে থেকে করার মতো কাজই বা কোথায় পাবেন, এই চিন্তাই এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।’ আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে চম্পা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মইনুজ্জামানের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাসান তারিক বলেন, সিওপিডি ও যক্ষ্মা হওয়ায় তাঁর ফুসফুস দুর্বল ও হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন নিতে পারছেন না। ‘কনসেনট্রেটর’ নামের যন্ত্র লাগিয়ে তিনি বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে স্বাভাবিকভাবে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে পারবেন। তখন তাঁর অক্সিজেনের খরচ লাগবে না।