ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় প্রেমের সম্পর্কের জেরে শারীরিক সম্পর্কের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এক তরুণী। বিয়ের প্রলোভনে গর্ভপাত করানোর পর প্রেমিক পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় প্রেমিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে ভুক্তভোগী তরুণী ওই মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের ছেলে প্রেমিক হৃদয় বিশ্বাস (২০), হৃদয়ের মা করবী দস্তীদার বিশ্বাস (৫০), তার বোন ডা. সুরঞ্জনা বিশ্বাস (৩০) ও কাকা বিমল বিশ্বাসের (৩৮)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হৃদয় বিশ্বাস দুই বছর আগে এইচএসসি অধ্যয়নরত এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রথমে রাজি না হলেও একপর্যায়ে হৃদয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। কিছুদিন পর হৃদয় ভুক্তভোগী তরুণীকে তার এক বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। এ সময় মেলামেশার নগ্ন ছবি ধারণ করে রাখে অভিযুক্ত প্রেমিক। এরপর ওই নগ্ন ছবি দিয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে ব্ল্যাকমেল করে একাধিকবার জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করে। একপর্যায়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে তরুণী।
এদিকে বিষয়টি অভিযুক্ত হৃদয়ের পরিবারকে জানায় ভুক্তভোগী তরুণী। তখন হৃদয়ের মা-বাবা হৃদয়ের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে দেবে এমন কথা দিয়ে তাকে গর্ভপাত করান। আর এই গর্ভপাতে সহযোগিতা করেন হৃদয়ের মা করবী দস্তীদার বিশ্বাস ও তার বোন ডা. সুরঞ্জনা বিশ্বাস। কিন্তু এরপরই পালিয়ে যান হৃদয়। পরিবারের সদস্যরাও সব কিছু অস্বীকার করেন। উপায়ন্তর না পেয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবির ত্রপার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সদ্য এইচএসসি পাস করা ভুক্তভোগী তরুণী। ইউএনও এক সপ্তাহের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দেবে বলে গত ৯ এপ্রিল বদলি হয়ে যান তিনি। এরপর গত ১১ এপ্রিল চরভদ্রাসন থানায় গিয়ে ভুক্তভোগী ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে হৃদয়। প্রেমের অভিনয় করে আমাকে ব্ল্যাকমেল করে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি ওর থেকে দূরে সরে আসতে চাই। কিন্তু হৃদয় তখন আমার নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিয়ে দেবে বলে ভয় দেখায়। তখন লোকলজ্জার ভয়ে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি পুনরায় ওর কথায় রাজি হয়ে একাধিকবার শারীরিক মেলামেশা করি। আমি একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। তখন হৃদয়, ওর মা, বাবা ও বোন আমাকে বলে পেটে বাচ্চা থাকলে বিয়ে কীভাবে হবে। সমাজের মানুষ কি বলবে। তুমি গর্ভপাত করে ফেলো, তারপর বিয়ের ব্যবস্থা করছি।
তিনি আরও জানান, তাদের ছলনায় পড়ে আমি রাজি হয়ে যাই। হৃদয়ের মা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের বাড়িতে এসে বিয়ের কথা বলে আমাকে চারটি ট্যাবলেট দিয়ে খেতে বলে। ওষুধ খাওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এই খবর হৃদয়ের মা আমাকে পাশের সদরপুর উপজেলার পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে হৃদয়ের বোন ডা. সুরঞ্জনার চেম্বার আছে। তিনি আমার ভ্রণ নষ্ট করার যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। এরপর সেখান থেকে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর আমি সুস্থ হই। কিন্তু তারা আর কোনো খবর নেয়নি। যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি এইচএসসি পাস করেছি। কিন্তু কোথাও ভর্তি হতেও পারছি না। কোনো উপায় না পেয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবির ত্রপার কাছে অভিযোগ দিই। কিন্তু তিনি এক সপ্তাহে আপোষ মীমাংসা করে দেবে বলে আমাকে ঘোরায়। এরপর গত ৯ এপ্রিল বদলি হয়ে যান। পরে মঙ্গলবার চরভদ্রাসন থানায় মামলা দায়ের করেছি।
অভিযুক্ত হৃদয় বিশ্বাস মোবাইলফোনে কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে হৃদয় বিশ্বাসের কাকা বিমল বিশ্বাস জানান, হৃদয় এখন বাড়িতে নেই। জমিজমা নিয়ে একটি পক্ষের সঙ্গে আমাদের বিরোধ আছে। সেই বিরোধী পক্ষের লোকজনই ওই মেয়েটিকে দিয়ে সমাজে আমাদের হেয় করতে এসব গুজব ছড়াচ্ছে।
চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাদ জানান, ওই তরুণী যেদিন ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেয়, সেদিন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ইউএনও চেষ্টা করেছিলেন মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু ছেলের পরিবার ঘোরানোর কারণে তা সম্ভব হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা জানান, এক কলেজছাত্রী বাদী হয়ে মঙ্গলবার তার প্রেমিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।