পবিত্র রমজান মাসে তীব্র দাবদাহের মধ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের দিয়ে বাধ্যতামূলক মঙ্গল শোভাযাত্রা করার নির্দেশনা বাতিল চেয়েছে অভিভাবকরা।
আজ ১৩ই এপ্রিল, ২০২৩ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। ‘সচেতন অভিভাবক মহল’ ব্যানারে অভিভাবকরা এ সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনকে ‘অমানবিক প্রজ্ঞাপন’ বলে উল্লেখ করেন।
অভিভাবকরা বলেন, চলমান পবিত্র রমজান মাসে বড়দের সাথে শিশু-কিশোররাও সিয়াম সাধনা করছে। একইসাথে দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর লু-হাওয়া বিরাজ করছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌছেছে। তীব্র দাবদাহের মধ্যে বাইরে বের হওয়া খুবই কষ্টকর। তাই এ তীব্র গরমে শিশু ও বৃদ্ধদের সাবধানে থাকতে বলেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আশ্চর্যকজনভাবে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবশ্যিক বা বাধ্যতামূলক মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক র্যালি করতে বলেছে, যা খুবই দায়িত্বহীনতার পরিচয়।
অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের উপর রাষ্ট্রের সকল শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব অর্পিত। তারা কিভাবে এ রকম একটি দূর্যোগময় পরিবেশের মধ্যে শিক্ষার্থীদের র্যালি করতে বাধ্য করতে পারেন? তাও আবার রমজান মাসে? এটা স্পষ্ট জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ১৯ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক, যা শিশু নির্যাতনের সামিল। অভিভাবকরা আরো বলেন, আমাদের সন্তানরা যদি এ গরমে মঙ্গল শোভাযাত্রায় নেমে অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে ? আমরা সচেতন অভিভাবক হিসেবে আমাদের শিশুদেরকে এ র্যালিতে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ মেনে নিতে পারি না।
অভিভাবকরা আরো বলেন, পবিত্র রমজান মাস তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনের মাস। এ মাসে পবিত্রতা বজায় রাখা প্রত্যেক নাগরিকেরই দায়িত্ব। ভিন্ন ধর্মের অনুসঙ্গ ও সংস্কৃতি হওয়ায় বর্ষবরণ বা মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন নিয়ে ধর্মীয় আলেমরা প্রায়শঃই নিষেধ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে রমজানের মত একটি পবিত্র মাসে কিভাবে সেই ভিন্ন ধর্মীয় অনুসঙ্গ পালন বাধ্যতামূলক হতে পারে ? এক্ষেত্রে মুসলিম শিশুদের মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাধ্য করা অবশ্যই সংবিধানের ৪১(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
অভিভাবকরা বলেন, আমরা গণমাধ্যম থেকে জানতে পারি যে, এ বিষয়ে অতি সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্টের একজন বিশিষ্ট আইনজীবি মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতার আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সংশ্লিষ্ট পক্ষদেরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
এছাড়াও ইতোপূর্বে ২০১৭ সালেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি মুসলিম শিশু কিশোরদের দিয়ে ভিন্ন ধর্মের অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছিলো। ফলে সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিভাবে শিক্ষা মন্ত্রাণালয় বা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ ধরনের শিশু অধিকার পরিপন্থী প্রজ্ঞাপন আসতে পারে, তা আমাদের খুবই বিস্মিত করেছে।
অভিভাবকরা অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবী জানান। মানববন্ধনে অভিভাবকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুহম্মদ জাইদুল ইসলাম, মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, মুহম্মদ নুরুল ইসলামসহ আরো অনেকে।