শীতকালে ঠোঁট ফাটে সঠিক পরিচর্চার অভাবে, এ কথা কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও ঠোঁট ফাটা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছেন কেউ কেউ। শুধু ঠোঁট ফাটছে না, কারও কারও চামড়াও উঠছে।
মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মেও ত্বক ও ঠোঁট রুক্ষ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। গরমে শরীরে পানির পরিমাণ কম থাকে। ফলে ঠোঁটের জলীয় ভাব ক্রমশ হ্রাস পায়। ঠোঁটের চামড়া খুব পাতলা হওয়ার কারণে অল্পেতেই রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে।
গরমকালে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ক্ষতি হয় ঠোঁটের। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ঠোঁটের ত্বক অত্যন্ত শুকনো হয়ে যায়, আর তা থেকেই ঠোঁট ফাটার সমস্যা দেখা দেয়।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ছাড়াও গরমের সময় ঠোঁট ফাটার আরও অনেক কারণ রয়েছে। শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা এর অন্যতম একটি কারণ। এ কারণে ত্বকের পাশাপাশি শুষ্ক হয়ে ওঠে আমাদের ঠোঁট। তাছাড়া গরমের এ সময়ে রমজান মাস পড়ায় রোজা রাখার কারণে এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে অনেকেই।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক প্রফেসর মোস্তফা জামান বলছেন, আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগের মতো শীতকাল এখন আর হয় না এবং একই সাথে ঋতুগুলোর বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন আসার প্রভাব পড়ছে মানবশরীরেও।
তিনি বলেন, এখন রোজার সময় আবার গরমও অনেক পড়ছে, যে কারণে অনেকেই পানিশুন্যতায় ভুগছেন।গরমের কারণেই কারও ঠোঁট ফাটছে, আবার কারও কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে। কারণ চামড়া শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে দ্রুত।
তিনি জানান, শুষ্কতার কারণে স্কীনের জলীয় অংশ দ্রুত কমে যাচ্ছে। ঠোঁট বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, কারণ ঠোটের বাইরের দিকটার চামড়া থাকে খুবই পাতলা ধরণের।
মি. জামান বলেন, যারা রোজা পালন করেন, তাদের এটা বেশি হতে পারে। কারণ সেহেরি থেকে ইফতার পর্যন্ত প্রায় ১৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয় এই গরমে। তবে এটা কোন বড় সমস্যা নয়। তাপমাত্রার স্বাভাবিক প্রভাব। সচেতন থাকলেই এটি এড়ানো সম্ভব।
সাধারণত ঠোঁট ফাটে কেন?
শরীরের চামড়ার তুলনায় ঠোঁট বেশি ফাটে, কারণ এটি মূলত চামড়ার উপরিভাগের খুব পাতলা স্তর।
তাই শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হলে শরীর থেকে জলীয় অংশ কমে যায় এবং তখন চামড়ার এই স্তরটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ শুকিয়ে ফেটে যায়।ঠোঁটের এই স্তরটিকে আমরা এপিডারমিস বা বহিঃস্তর বলি। এটি পাতলা হওয়ায় তাপমাত্রার হেরফেরে বা বাতাস আদ্র হলে দ্রুত প্রভাব পড়ে এর ওপর।
আবার ঠোঁট সামান্য শুষ্ক হলে অনেকে জিহ্বা দিয়ে ভেজানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরে স্যালাইভা শুকিয়ে গেলে ঠোট আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে ও ফেটে যেতে পারে।
অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, কিডনি বা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ঔষধও শরীর থেকে পানি বের করে নেয় এবং সে কারণেও অনেকের ত্বক বিশেষ করে ঠোঁটে প্রভাব পড়ে।
আবার অনেক সময় ঠোঁটের অবস্থান নাকের ঠিক নিচে থাকার জন্য নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা গরম বাতাসের প্রভাবেও ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ওঠে।
তাহলে সমাধান কী?
চিকিৎসকরা ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা পেতে কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো হলো-
>> প্রচুর পানি পান করা।
>> ঠোঁটের যত্ন নেয়া।
>> তীব্র সূর্যালোক ও ধুলোবালি এড়ানো।
>> সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
>> ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজ করার জন্য ব্যবহার করুন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধক উপাদান সম্পন্ন লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি। (তবে রাসায়নিক মিশ্রিত কোন কিছু ব্যবহার থেকে সাবধান থাকার কথা বলেন চিকিৎসকরা)।
>> গড়ে তুলুন স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস।