বসন্তে বসন্ত হলে যা করতে হবে – News Portal 24
ঢাকাThursday , ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বসন্তে বসন্ত হলে যা করতে হবে

নিউজ পোর্টাল ২৪
ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২৩ ১০:০০ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

বসন্ত শুধু ঋতুই নয়, বসন্ত একটা রোগেরও নাম। এখন আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়। এই সময়ে জলবসন্ত রোগের প্রকোপ কিছুটা বাড়ে। কুসংস্কার দূরে সরিয়ে, নিয়ম মানলে এবং ঠিকমতো যত্ন নিলে সে ভাবে ভয়ের কিছু নেই। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শুধু বসন্তকালে নয়, বছরের যে কোনও সময়েই এই রোগ হতে পারে। তবে বছরের প্রথম ছ’মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

বসন্ত রোগ এবং এ রোগে করণীয় সম্পর্কে কী বলেছেন হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম, আসুন তা জেনে নিই-

জলবসন্ত ও গুটিবসন্ত
বসন্ত রোগের এই দুটি ধরনেরই প্রাদুর্ভাব ছিল একসময়। ‘চিকেন পক্স’ বা জলবসন্তের প্রকোপ এখনো থাকলেও ‘স্মল পক্স’ বা গুটিবসন্ত এখন আর দেখা যায় না। গত শতকের আশির দশকেই পৃথিবী থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়ে গেছে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চিকেন পক্স বা জলবসন্ত ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ। ভ্যারসিলো জস্টার নামের একটি ভাইরাসের কারণে জলবসন্ত হয়। যেকোনো বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও শিশু ও অল্পবয়সীরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

জলবসন্তের লক্ষণ
শুরুর দিকে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, মাথাব্যথা করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা এমনকি পিঠেও ব্যথা হতে পারে। একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এরপর জ্বর জ্বর ভাব হবে। এগুলো রোগের পূর্ব লক্ষণ। এরপর শরীরে ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। খুব দ্রুতই শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। আর এভাবে জলবসন্ত হয়ে গেলে রোগীর অনেক জ্বর আসবে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে আর সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকবে।

বসন্ত রোগের সংক্রমণ
বসন্ত সংক্রামক রোগ হওয়ায় কোনো সুস্থ ব্যক্তি বসন্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে এতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ করার বিষয় হলো জলবসন্ত রোগের সংক্রমণটা মূলত হয় রোগীর দূষিত চামড়া থেকে। জলবসন্তের গুটির ভেতরে পানি জমা থাকে। গুটি শুকিয়ে যেতে থাকলে ওপরের চামড়াটা ঝরে পড়ে। এই কালো হয়ে যাওয়া চামড়ায় জীবাণু থেকে যায় এবং এটা খুবই সংক্রামক। গুটি শুকিয়ে যেতে থাকলে শরীর অনেক চুলকায়। অনেকে তখন এগুলো চুলকিয়ে টেনে তুলে ফেলে। কিন্তু এটা করা একেবারেই ঠিক না। আর শুকনো চামড়াগুলো জমিয়ে পুড়িয়ে ফেলাই ভালো।

এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে রোগীকে অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে। তাকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং তার বিছানাপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। শরীরের ফুসকুড়ি পুরোপুরি শুকানো এবং ঝরে না যাওয়া পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহ রোগীকে এভাবে আলাদা রাখাটাই শ্রেয়। তবে, রোগীর ঘর যেন পরিষ্কার ও আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে।

জলবসন্তের প্রতিষেধক
যদিও চিকেন পক্স বা জলবসন্ত একটা ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ, তার পরও এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখন বসন্তের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আছে। শিশুর জন্মের ৪৫ দিন পর থেকে যেকোনো বয়সে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। আর যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে, তাদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা নেই। অযথা রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ারও প্রয়োজন নেই। চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ রোগ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সাধারণত ভালো হয়ে থাকে।

রোগীকে কী খাওয়াবেন?
এ সময়ে রোগীকে অনেক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন হয়। তবে খাবারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবজি সবকিছুই খাওয়া যাবে। আর শরীরের দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে রোগীকে বেশি বেশি করে খেতে হবে।

কীভাবে গোসল করবেন?
জলবসন্ত হওয়ার পরও নিয়মিত গোসল করা যায়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে গোসল শেষে শরীর ঘষে মোছা যাবে না, আলতো করে মুছে নিতে হবে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। আর রোগীর ব্যবহূত পোশাক, বিছানার চাদর, শোবার ঘর অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এ রোগে শরীরে দাগ হয়, তাই এ সময়ে ডাবের পানি খুব উপকারী এবং ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া এবং গোসল করলেও উপকার পাওয়া যাবে।

কোন বয়সের মানুষের মধ্যে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে?
এটা নির্ভর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই এই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তবে ১-১৪ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।

কোন ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি মারাত্মক?
গর্ভবতী মায়েদের, বয়স্ক মানুষদের এবং সদ্যজাতদের ক্ষেত্রে এই রোগটি মারাত্মক। এ ছাড়া যাঁরা ‘ইমিউনো কম্প্রোমাইজড’ এবং যারা ‘স্টেরয়েড থেরাপি’-তে আছেন, অর্থাৎ যারা এমন কিছু ওষুধ খান, যে ওষুধ খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগটি মারাত্মক হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের চিকেন পক্স হলে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি থাকে। আর যদি প্রসবের দিন সাতেকের মধ্যে মায়ের এই এই রোগ হয়, তখন নবজাতকের মারাত্মক ধরণের জলবসন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন ওই শিশুর বিশেষ চিকিৎসা ও যত্ন দরকার।

এই রোগ থেকে কোনও জটিলতা তৈরি হতে পারে কি?
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে বা কম থাকলে নানা জটিলতা হতে পারে। সাধারণ ভাবে যে সমস্যাগুলি হয় সেগুলি হল, র‌্যাশ বের হওয়ার সময় চুলকানি এলে অনেকে চুলকিয়ে ফেলেন। তখন তা থেকে ক্ষত এবং সংক্রমণ হতে পারে। নিউমোনিয়া বা মস্তিষ্কে প্রদাহও হতে পারে। এ ছাড়া স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি বা লিভারের সমস্যাও হতে পারে।

চিকেন পক্স হলে কী ভাবে বোঝা যাবে?
ক্লিনিক্যালি দু’-একটি র‌্যাশ না বের হওয়া পর্যন্ত সাধারণ ভাবে দেখে বোঝা যায় না। ওই র‌্যাশের রস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সব সময় তা করার দরকার হয় না। প্রাথমিক ভাবে র‌্যাশের প্রকৃতি ও ধরন দেখেই রোগ নির্ণয় করা হয়।

এই রোগ প্রতিরোধে টিকাকরণের কোনও ব্যবস্থা আছে?
হ্যাঁ আছে। যাঁরা চিকেন পক্সে আক্রান্ত হননি, তাঁদের টিকা দেওয়া যেতে পারে। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের এই টিকা দেওয়া হয়। তবে, বেশি বয়সের ব্যক্তিরাও এই টিকা নিতে পারেন।

এই রোগে আক্রান্ত হলে দেখা যায় খাবারের ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ মানার প্রথা রয়েছে। এটি কতটা বিজ্ঞানসম্মত?
এটি বিজ্ঞানসম্মত তো নয়ই, বরং অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এমনকি, কুসংস্কারও বলা যেতে পারে। এই সময় রোগীর শরীরে দুর্বলতা তৈরি হয়। তাই রোগীকে উচ্চ প্রাণীজ প্রোটিন সম্বৃদ্ধ খাবার দেওয়া উচিত। বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি প্রাণীজ প্রোটিন জাতীয় খাবার দিতে হয়। তবে অবশ্যই তা সহজপাচ্য হতে হবে।

কারও এক বার চিকেন পক্স হয়ে গেলে তাঁর কি ফের ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
না। কারণ, যার এক বার চিকেন পক্স হয়েছে, তাঁর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। তাই পুনরায় ওই রোগে হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।