মৌ মৌ করছে প্রকৃতি, দৌলতপুরে গাছে গাছে আমের মুকুল - News Portal 24
ঢাকাFriday , ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মৌ মৌ করছে প্রকৃতি, দৌলতপুরে গাছে গাছে আমের মুকুল

মামুন আব্দুল্লাহ, বিশেষ প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২৩ ১০:৫০ অপরাহ্ন
Link Copied!

আমের মুকুলে সয়লাব মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার জনপদ। চারদিকে আমের সোনালি মুকুলের ম-ম গন্ধ।

এ বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গৃহস্থবাড়ির আঙিনাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস ও আবাসিক ভবনের আশপাশে আম গাছের পাতা ঢেকে গেছে সোনালি মুকুলে। আমের সোনালি মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম প্রতিটি গাছের ডাল। এবার গাছে গাছে অনেক বেশি মুকুল হয়েছে বলে সবাই বেশ খুশি। এমন দৃশ্য দেখে অনেকে ভাবতে শুরু করেছে এবার এ উপজেলায় আমের ফলন ভালো হবে এবং স্বল্প আয়ের মানুষও আমের স্বাদ সহজেই নিতে পারবে।

স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতপুরে আম গাছগুলোতে প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে থেকেই সোনালী মুকুল দেখা দিতে শুরু করেছে। এখন সময়ের ব্যবধানে তা আরো বাড়ছে। তবে উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। এখানে বাগান করে আম চাষ কম হলেও প্রতিটি ভিটে বাড়ির আঙ্গিনার চারপাশে আমের গাছ রোপণ করা হয়। আর এসব আম গাছ গুলোতে শোভা পাচ্ছে আমের সোনালী মুকুল। আম চাষি এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন।

স্থানীয় বসতবাড়ীর আম চাষীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমের ফলন নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন মালিকরা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ক্ষতি না হলে ও সময়মতো পরিচর্যা হলে গত বছরের তুলনায় এবছর চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে। এছাড়া দৌলতপুরে প্রতিটি ইউনিয়নের বসতবাড়ি ও কিছু বাগানে আম চাষ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে উপজেলার চরাঞ্চল গুলোতে ইদানীং বিস্তৃর্ণ বাগান তৈরী করে আম চাষ করা হচ্ছে। তবে দৌলতপুরে বসত বাড়ীর আঙ্গিনার চারপাশ দিয়েই আম চাষ বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুনঃ  অফিসে অনৈতিক কাজে লিপ্ত ভূমি সহকারী নন্দলাল বরখাস্ত

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রেজাউল হক জানান, আমাদের দৌলতপুর উপজেলায় প্রায় ৭০ হেঃ জমিতে আমের আবাদ হচ্ছে। আমের ভালো ফলন পাওয়ার লক্ষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে মুকুল অবস্থায়, আম মটর দানা হওয়ার সময় ও আম মার্বেল আকৃতির সময় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করছি ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে এ বছর হেক্টর প্রতি ১২/১৩ টন ফলন পাওয়া যাবে।

আমের মুকুল ঝরা রোধে যা করবেন

মুকুলের যত্ন না নিলে আমের ভালো ফলন সম্ভব নয়। অনেকেই শখ করে আমগাছ রোপণ করি ভালো ফলনের আশায় কিন্তু সময় মতো সামান্য যত্নের অভাবে এবং পোকা ও রোগের আক্রমণের কারণে আমাদের সেই আশা পূরণ হয় না। আমের মুকুল ও গুটি ঝড়ে যায়। অথচ সময় মতো একটু যত্ন নিলেই আমরা পেতে পারি সুস্বাদু আমের স্বাদ।

আমগাছে বর্ষার আগে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে একবার এবং বর্ষার পর আশ্বিন-কার্তিক মাসে আর একবার সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের নিচে যতটুকু স্থানে গাছের ছায়া পড়ে, ততটুকু স্থানের মাটি কুপিয়ে এই সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই হালকা সেচ দিতে হবে।

গাছের বয়স ১ থেকে ৪ বছর হলে গোবর ১৫ কেজি, ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ১০০ গ্রাম, জিপসাম ১০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১০ গ্রাম ও বরিক এসিড ২০ গ্রাম দুই ভাগ করে বর্ষার আগে ও পরে প্রয়োগ করতে হবে।

গাছের বয়স ৮ থেকে ১০ বছর হলে গোবর ২৫ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, জিপসাম ২৫০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ৩০ গ্রাম এবং গাছের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছর হলে গোবর ৩০ কেজি, ইউরিয়া ১০০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ৩৫০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ৩০ গ্রাম একই নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  অফিসে অনৈতিক কাজে লিপ্ত ভূমি সহকারী নন্দলাল বরখাস্ত

এ ছাড়া গাছের বয়স ১৬ থেকে ২০ বছর হলে গোবর ৪০ কেজি, ই্‌উরিয়া ১৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ২০ গ্রাম ও বরিক এসিড ৪০ গ্রাম বছরে দুই বারে প্রয়োগ করতে হবে।

ফুল আসার আগে: আম গাছে ফুল আসার ১৫ দিন আগে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার ২০০-২৫০ গ্রাম করে দিতে হবে দুই-তিন বছর বয়সের গাছে। চার-পাঁচ বছর বয়সের গাছে ৩০০-৩৫০ গ্রাম। ছয়-সাত বছর বয়সের গাছে ৪০০-৫০০ গ্রাম। আট-নয় বছর বয়সের গাছে ৫০০-৮০০ গ্রাম। ১০ বছরের ঊর্ধ্বে ৮৫০ থেকে ১২০০ গ্রাম প্রতি গাছে।

ফুল ফোটার সময়: মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্পমঞ্জরিতে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমণ হতে পারে। এতে গাছের পাতা, কচি ডগা, মুকুল ও কচি আমে কালো দাগ পড়ে। প্রতিকার হচ্ছে- মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে একবার প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১ মিলিলিটার রিপকর্ড বা সিমবুস ১০ ইসি এবং ০.৫ মিলিলিটার টিল্ট ২৫০ ইসি একসাথে মিশিয়ে আমের মুকুল, পাতা, কাণ্ডে স্প্রে করতে হবে।

প্রাকৃতিক পরাগায়ণ: এর জন্য আম বাগানে মৌমাছি পালন, চারদিকে ফুলের গাছ রোপণ এবং বাগানে বিভিন্ন জাতের আম গাছ লাগানো প্রয়োজন। আম গাছে মুকুল আসার সময় হপার পোকা কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। এছাড়া রস চোষার সময় পোকা আঠালো পদার্থ নিঃসৃত করে। এতে ফুলে পরাগরেণু আটকে পরাগায়ণে বিঘ্ন ঘটে। এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড বা সিমবুস ও টিল্ট আগের নিয়মে স্প্রে করতে হবে।

পূর্ণাঙ্গ ফুল পেতে: ত্রুটিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ ফুল এবং বর্ধিষ্ণু ভ্রুণের পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য মুকুল ধরার ১৫ দিন আগে উপর্যুক্ত নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। একই ডালে অনেক ফল ধরলে পুষ্টির জন্য ফলগুলো প্রতিযোগিতা করে বলে ফল ঝরে যায়। অতিরিক্ত ফল পাতলা করে দিতে হবে। হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ স্প্রে করলেও আমের মুকুল ও কচি আম ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যায়।

আরও পড়ুনঃ  অফিসে অনৈতিক কাজে লিপ্ত ভূমি সহকারী নন্দলাল বরখাস্ত

গুটি বাঁধার পর: আমের মুকুল গুটি বাঁধার দুই সপ্তাহ পর ২০ পিপিএম মাত্রায় ২৪-ডি স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আমের গুটি মসুর দানার মত বড় হলে ১০ লিটার পানিতে দুই-তিন মিলিলিটার প্লানোফিক্স স্প্রে করলে ফল ঝরা বন্ধ হয়।