প্রয়োজনীয় সবকিছু খুব সহজেই পাওয়া যায় অনলাইনে। ঘরে বসে যেকোনো পণ্য অর্ডার করতে পারেন। এরপর সেই পণ্য পৌঁছে যায় আপনার দরজায়। অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে ছড়াছড়ি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঢুকলেই বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বেশিরভাগ এই বিজ্ঞাপনে পণ্যের মূল্য উল্লেখ করা থাকে না। পণ্যের দাম জানতে কমেন্ট করা হলে উত্তর আসে ‘ইনবক্স প্লিজ’ বা ‘বিস্তারিত জানতে ইনবক্স করুন’। এরপর সেখানেই চলে দরকষাকষি! এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
গ্রাহকদের যুক্তি
ফেসবুকের মাধ্যমে যারা ব্যবসা করেন তারা পণ্যের দাম কেন প্রকাশ্যে উল্লেখ করেন না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই বিষয়টিকে অনেক ক্রেতারই প্রতারণার কৌশল বলে মনে করছেন। তারা দাবি করছেন, ইনবক্সে ভিন্ন ভিন্ন দাম বলে প্রতারণা করা হয়। আবার অনেকে ইনবক্সে উত্তর দেন না। পণ্যের দাম উল্লেখ থাকলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে বলেও মনে করেন তারা। অনেকেই বলছেন, দাম উল্লেখ করা থাকলে ক্রেতা পণ্যের বিষয়ে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এতে তার সময় নষ্ট হতো না। কারণ, সময় নেই বলেই ক্রেতা অনলাইনে পণ্য কিনতে আসে। সেখানে এসে পণ্যের দাম জানতে ইনবক্স পর্যন্ত যাওয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক।
একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যায়। কোনো পণ্যের উৎপাদনকারী পণ্যের বিক্রয়মূল্য ঠিক করেছেন ১০০ টাকা। আরেকজন সেই পণ্য ১০০ টাকায় কিনে আরও অধিক মূল্যে বিক্রয় করল। এভাবে দুই থেকে তিন হাত ঘুরে পণ্যটি ভোক্তার হাতে পৌঁছায়। এক্ষেত্রে ভোক্তা প্রতারণার শিকার হয়।
অনলাইন উদ্যোক্তাদের যুক্তি
‘ইনবক্স প্লিজ’ —এই বিষয়টিকে প্রতারণা নয়, বরং কৌশল হিসেবে উল্লেখ করছেন ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়ীরা। তারা দাবি করেছেন, অনলাইনে ব্যবসার জন্য এটাই নিয়ম। এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ বড় প্রভাব ফেলে। তারা বলছেন, যদি দাম উল্লেখ্য করা থাকে তখন কেউ কমেন্ট করেন না। ফলে পোস্টের রিচ কমে যায়। উল্লেখযোগ্য হারে গ্রাহকও পাওয়া যায় না। তাই গ্রাহক দাম জানতে চেয়ে মন্তব্য করলে পোস্টটির রিচ অনেক বেড়ে যায়। ফলে পণ্য বিক্রির সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। এমনকি কোনো ক্রেতা যদি পণ্যের দাম প্রকাশ করে সেক্ষেত্রে তাকে ব্যান করেও দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে অনেকেই আবার দেখাচ্ছেন ভিন্ন যুক্তি। তারা বলছেন, ইনবক্সে কথা হলে কাস্টমারের সঙ্গে একটি সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যও কাস্টমারের কাছে বিক্রি করা যায়। তাই এটি অনলাইনে ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
আইন কী বলছে?
‘ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯’ এর ৩৮ ধারা অনুযায়ী, পণ্যের দাম সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে না রাখলে ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এটি অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলছেন অনেকেই। অনলাইন ব্যবসার কোনো নীতিমালাও এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তাই এই বিষয়ে সঠিক কোনো নীতিমালা নেই।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। আর ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায় প্রতিদিনই নতুন নতুন উদ্যোক্তার জন্ম হচ্ছে। এদের অধিকাংশই নারী। তাই ব্যবসার এত বড় বাজারে নীতিমালা এখন সময়ের দাবি।