পটুয়াখালীর বাউফলে একই পরিবারে ৬৩ জন কুরআনে হাফেজ। নিজে হাফেজ না হতে পেরে পরিবারের সদস্যদের হাফেজ বানিয়ে দেশজুড়ে পূর্বের ন্যায় আলোচনা সৃষ্টি করেছে উপজেলার ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার। এলাকায় হাফেজ পরিবার নামে পরিচিতি তাদের।
জানা গেছে , উপজেলার ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামের হাজি নূর মোহাম্মদ হাওলাদারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে শাহজাহান হাওলাদার। ৩ বছর বয়সে মা কে হারান তিনি। ৭ বছর বয়সে বাবাকে ও হারান। বাউফল সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে এইচএসসি পাস করেন। নিজের পৈতৃক সম্পত্তি ও মামাবাড়ির ৩ একর সম্পত্তি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেন ১২ টি হাফিজি মাদ্রাসা এবং ৩ টি মসজিদ। তার ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ে কোরআনের হাফেজ। তাদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এভাবে তার পরিবারের হাফেজদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ২ বছর আগেও তার পরিবারে হাফেজদের সংখ্যা ছিল ৪৩ জন আর এখন হাফেজের সংখ্যা ৬৩ জন।
শাহজাহান হাওলাদারের বড় ছেলে হাফেজ মাওলানা মজিবর রহমানের বিয়ে হয় হাফেজা মানসুরার সঙ্গে। তিনি সৌদি আরবে আছেন তার ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে ৬ সন্তান কোরআনের হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ৮ জন।
দ্বিতীয় ছেলে হাফেজ মাওলানা নূর হোসেন বিয়ে করেন হাফেজা শামসুন্নাহারকে। তিনি বাউফল বিলবিলাস দারুন কুরআন নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক। তার ৩ ছেলে ৩ মেয়ে মধ্যে ২ সন্তান কোরআনে হাফেজ। আরও এক মেয়ে জামাই হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ৮ জন।
তৃতীয় ছেলে হাফেজ মাওলানা আবু বকর বিয়ে করেন হাফেজা নাছিমাকে। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে দারুল আকরাম নামে একটি মাদরাসা পরিচালনা করছেন। তার ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্য ৩ জন হাফেজ। আরও এক মেয়ে জামাই হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ৬ জন।
চতুর্থ সন্তান হাফেজ ইবরাহিম বিয়ে করেন হাফেজা মনিরাকে। হাফেজ ইবরাহিম বরিশালের হাটখোলায় পাইকারি শস্যের দোকান পরিচালনা করেন। তাদের সংসারে ১ মেয়ে ৪ ছেলের মধ্যে হাফেজ ৩ জন। আরও এক মেয়ে জামাই হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ৬ জন।
পরের সন্তান হাফেজ জোবায়ের বিয়ে করেন হাফেজা নাসরিনকে। তিনি বাউফলে ব্যবসার পাশাপাশি আছিয়া খাতুন মহিলা মাদরাসা পরিচালনা করেন। তাদের পরিবারের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে তারা সবাই হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ৬ জন।
ছোট হাফেজ হুজাইফা বিয়ে করেছেন মাওলানা হাজেরাকে। হাফেজ হুজাইফা ঢাকার বেগম বাজারে ব্যবসা করেন। তাদের সংসারে ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে ১ জন হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ২ জন।
শাহজাহান হাওলাদার তার ৪ মেয়ের মধ্যে হাফেজ খাদিজাকে বিয়ে দেন হাফেজ মাওলানা ইমদাদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বাঁশবাড়িয়াতে একটি হাফিজিয়া মাদরাসা পরিচালনা করেন। তাদের ৪ ছেলে ও ৫ ছেলের মধ্যে ৫ জনই হাফেজ। তারও ছেলের বউ ও মেয়ে জামাই মিলে ৩ জন হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ১০ জন।
দ্বিতীয় মেয়ে হাফেজা আসমার বিয়ে হয় মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি রিয়াদে থাকেন। তাদের সংসারে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ে। তন্মধ্যে ৬ জনই হাফেজ। আরও ২ জন মেয়ে জামাই হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ১০ জন।
হাফেজ খানজার বিয়ে হয় হাফেজ মাওলানা সোলাইমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকার চিটাগাং রোডে অবস্থিত দারুন নাজাত হাফিজিয়া মাদরাসার পরিচালক। তাদের সংসারে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে ১ জন হাফেজ। আরও একজন মেয়ে জামাই হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ৪ জন।
সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে হাফেজ আম্মারার স্বামী হাফেজ মাওলানা তালহা। তিনি লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক। তাদের সংসারে ২ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে ১ হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ৩ জন।
শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে হাফেজ জোবায়ের হাওলাদার বলেন, বাবার পাঁচ নম্বর ছেলে আমি। আমরা ৬ ভাই ৪ বোন। বড় ভাই সে সৌদি আরবে জেদ্দায় থাকেন সেখানে মসজিদের ইমাম। তার ৬ সন্তান হাফেজ। আমাদের অন্যান্য ভাইয়েরা ও বোনেরা তাদের সন্তানরা হাফেজ হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদ্রাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। আমি এই মাদ্রাসার পরিচালনা করতেছি এখানের প্রধান শিক্ষক আমার স্ত্রী তার। হাতে এখানের শত শত মেয়েরা হাফেজ হয়ে এইসব অঞ্চলে শিক্ষকতা করছেন।
শাহজাহান হাওলাদার বলেন, আমার পরিবারের ছেলে মেয়ে নাতি বউসহ ৬৩ জন হাফেজ হাফেজা রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনই আন্তর্জাতিক হাফেজ, আমি সাতখানা কিতাব লিখেছি, সবার কাছে আমার অনুরোধ রইল আপনারা আপনাদের ছেলে মেয়েদেরকে হাফেজ হাফেজা বানাবেন।
আমার ছেলে ছেলের বউয়েরা বিভিন্ন মাদ্রাসায় এখন হাফেজ বানানোর শিক্ষা দিচ্ছে। আমি কোন দান বা সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি, আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি ও মামাবাড়ির সম্পত্তি থেকে তিন একর জমি বিক্রি করে মাদ্রাসা মসজিদ করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা তিনি হাফেজদের খুব ভালবাসতেন, ছোটবেলা থেকেই কেমন যেন হাফেজদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও সম্মান বেশি ছিল। বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই মারা যাওয়ায় আমার পক্ষ থেকে হাফেজ হওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি চিন্তা করেছি আমার ছেলে সন্তানদের সবাইকে হাফেজ বানাবো। তারা ইসলাম প্রচার করবে। আল্লাহ কবুল করছে। তাই আজ পরিবারে এতো হাফেজ হয়েছে।