বেশি বেশি সওয়াব অর্জন করতে চাইলে ইবাদতের কোনো বিকল্প নেই। ইবাদত বলতে আমাদের মাথায় সবার প্রথমে আসে সালাত পড়া, সিয়াম পালন করা, কুরআন তিলাওয়াত করা। সন্দেই নেই, এসব খুবই মর্যাদাময় ইবাদত। তবে আরও কিছু কাজ আছে, যেগুলো করলে আল্লাহ তা’য়ালা নিজেই সে আমল বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। তেমনই একটি কাজ হচ্ছে, “মানুষকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া”।
আবু দারদা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,
কাউকে দুই দিনার ঋণ দেওয়া আমার কাছে এই দুটি দিনার কাউকে সদকা হিসেবে দিয়ে দেওয়ার চেয়ে বেশি প্রিয়।” ( ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং : ২২৬৮২)
অনেকে হয়তো ভাবছেন, যদি সে আমাকে ঋণ ফেরত দিতে না পারে? মজার ব্যাপার, দুনিয়া যখন তার দুয়ার আমাদের জন্য বন্ধ করে দেয়, তখন আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদের জন্য তার অসীম ভান্ডার উন্মুক্ত করেন। যাকে ঋণ দেয়া হয়েছে, সে যদি তা ফেরত দিতে দেরী করে তখন আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের জন্য সে ঋণের সওয়াব বহুগুণে ফিরিয়ে দেন।
রাসুলুল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি-ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নির্দিষ্ট সময়ে পুরো ঋণ ফিরিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছে এমন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে যে দেনা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সময় দেয়, ওই ব্যক্তিকে এমন সওয়াব দেয়া হবে যেন সে প্রতিদিনই সমপরিমাণ টাকা সদকা করেছে। আর যে সময় চলে যাওয়ার পরেও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে আরও সময় দেয়, তাকে অতিক্রম হওয়া প্রতিদিনের জন্য এমন সওয়াব দেয়া হবে, যেন সে প্রতিদিন ধার দেয়া টাকার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা সদকা করেছে।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং : ২৩০৪৬)
এ হাদিসে যে কী বিশাল সওয়াবের কথা বলা হয়েছে তা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেননি।
একটা উদাহারণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি:
ধরা যাক, আব্দুর খালিদ আব্দুর করিমকে ২, ০০০ টাকা ধার দিল জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। তারা একমত হলো যে, জুলাই মাসের ১ তারিখে আব্দুর করিম সে টাকা ফেরত পাবে। তাহলে আব্দুর খালিদ এ ছয় মাসে কত টাকা সদকা করার সওয়াব পেল? এটা বের করতে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার দরকার নেই।
৬ মাসে ১৮০ দিন। ওপরের হাদিস অনুযায়ী,আব্দুর খালিদ প্রতিদিনই ২,০০০ টাকা সদকা দেওয়ার সওয়াব পাচ্ছে।
তাহলে, ৬ মাসে সে পাচ্ছে ➤( ১৮০ × ২,০০০ ) তিন লক্ষ ষাট হাজার টাকা সদকা করার সওয়াব।
কিন্তু কোন কারনে আব্দুর করিম ৬ মাস পর সে টাকা ফেরত দিতে পারলো না। তাহলে এরপরের প্রতিদিনের জন্য খালিদ পাচ্ছে (দু’হাজার টাকার দ্বিগুণ) ৪, ০০০ টাকা সদকা করার সওয়াব।
যদি আরও ৬ মাস পর আব্দুর করিম টাকা ফেরত দেয় তাহলে আব্দুর খালিদ এ ৬ মাসে আরও (১৮০× ৪,০০০) সাত লক্ষ বিশ হাজার টাকা সদকা করার সওয়াব পেয়ে গেল।
আব্দুর খালিদ কিন্তু আব্দুর করিমকে দিয়েছিল মাত্র ২, ০০০ টাকা। দুনিয়ার হিসাব অনুযায়ী, তার ২, ০০০ টাকার পুরষ্কারই পাওয়া উচিত।
কিন্তু ইসলামে সে পাচ্ছে (৩,৬০,০০০ + ৭,২০,০০০) সর্বমোট দশ লক্ষ আশি হাজার টাকা সদকা করার সওয়াব।
একজন মধ্যবিত্ত মানুষ হয়তো সারাজীবনেও এত টাকা সদকা করতে পারবে না। কিন্তু তার ভাইকে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে সে সহজেই সমপরিমাণ টাকা সদকা করার সওয়াব পেতে পারে।
“আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তার জন্য বাড়িয়ে দেন।” (সূরা বাক্বারা, ২ : ২৬১)
📘 হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
✍️ শিহাব আহমেদ তুহিন