মশা সবাইকেই কামড়ায়। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই মাত্রা যেন একটু বেশি। ভিড়ের মধ্যে থাকলেও দেখা যায়, অন্যদের থেকে তাদের মশা বেশি কামড়াচ্ছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ কিছু গ্রুপের রক্তের গন্ধে মশা বেশি আকৃষ্ট হয়।
তবে কেবল রক্তের গ্রুপ নয়, এর জন্য বিশেষ কিছু খাবার ও পানীয়ও দায়ী। এসব খাবার খেলে শরীর থেকে বা ঘাম থেকে যে গন্ধ বের হয়, তাতেও মশা বেশি আকৃষ্ট হয়। ফলে বেশি কামড়ায়। এমন কিছু খাবার সম্পর্কে চলুন জেনে নিই-
অ্যালকোহল
গবেষণা অনুযায়ী, যারা অ্যালকোহল সেবন করেন, তাদের বেশি মশা কামড়ায়। কারণ, অ্যালকোহল সেবনের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এই অবস্থায় ভিওসিএস পরিবর্তন হতে শুরু করে।
ক্যাফেইন
যারা বেশি কফি বা চা পান করেন তাদের বেশি মশার কামড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাফেইনের কারণে মেটাবলিজমের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। আর উষ্ণ রক্ত মশাকে দ্রুত আকৃষ্ট করে।
লো কার্ব ডায়েট
একাধিক গবেষণা অনুযায়ী, যারা কম কার্বযুক্ত খাবার খান, তাদের মশা বেশি কামড়ায়। এ ছাড়া অপরিচ্ছন্ন ত্বকও মশাকে আকৃষ্ট করতে পারে।
ময়লা মোজা
অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন লিমবার্গার পনিরের গন্ধ পছন্দ করে মশারা। আর কী কী পদার্থের গন্ধ আকর্ষণ করে মশাদের, সেটি বের করতে গিয়ে অদ্ভুত এক আবিষ্কার করে বসেন মার্কিন কীটতত্ত্ববিদ ড্যান ক্লাইন।
গবেষণাগারে মশার সামনে একদিন বিভিন্ন পদার্থ রেখে পরীক্ষা চালানোর চেষ্টা করলেও কোনো কিছুর গন্ধই কাছে টানতে পারছিল না মশাদের। বিরক্ত হয়ে ড. ক্লাইন নিজের পায়ের মোজা খোলে রাখেন ল্যাবের টেবিলে, যে মোজা বিগত চারদিন ধরে পরছিলেন তিনি।
“এটা সবচেয়ে সেরা প্রতিক্রিয়া ছিল। আর কোনো কিছুর গন্ধই মশাকে এতো আকর্ষিত করেনি,” বলেন ড. ক্লাইন।
পরবর্তীতে জানা যায়, আমাদের পায়ের আঙ্গুলের মধ্যে যেসব ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেগুলো লিমবার্গার পনিরের মধ্যেও পাওয়া যায়। এই বিশেষ পনিরের কারিগররা পা ব্যবহার করেই বানাতেন এই খাবার।
গায়ের ‘গন্ধ’
মশা কার্বন ডাই-অক্সাইড ভালোবাসে। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে বের হওয়া এই উদ্বায়ী রাসায়নিকের পাশাপাশি ঘামের কারণে ত্বকে জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলোও আকর্ষণ করে মশাদের।
আবার কিছু মানুষের ত্বক থেকে আলাদা কিছু উদ্বায়ী রাসায়নিক বের হয়, যা মশারা অপছন্দ করে।
ড. ক্লাইনের একজন সহকর্মী একদিন জানান, বাকিদের চেয়ে তিনি মশার কামড় খান। এরপর তার ত্বকের গন্ধ বিশ্লেষণ করে ক্লাইন আবিষ্কার করেন, সেই সহকর্মীর ত্বক থেকে বাকিদের তুলনায় কিছু প্রাকৃতিক রাসায়নিক বেশি নির্গত হয়।
কার্বন ডাই-অক্সাইড ও শরীরের তাপমাত্রা
কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রতি মশাদের আকর্ষণ প্রবল। মশারা ১০ মিটার দূর থেকেই আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গন্ধ টের পেয়ে যায়।
আর আমাদের শরীরের তাপমাত্রাও মশাকে আকর্ষিত করে। তাই শরীরের উষ্ণতা যত বেশি, মশার কামড় খাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি।
এছাড়া, আমাদের বংশগত জিন, গায়ে মাখা প্রসাধনী; এসবও মশা আকর্ষণের মাত্রা নির্ধারণ করে। যে কারণে নির্দিষ্ট কোনো কারণকে আলাদা করাটা কঠিন।
সবশেষে, মশার কামড়ের একেকজনের প্রতিক্রিয়াও কিন্তু একেকরকম। মশার কামড়ে সবাই সমান ব্যথা অনুভব করে না। কেউ হয়তো মশার কামড় টেরই পায় না, আবার কেউ মশার কামড় সহ্যই করতে পারে না।
প্রতিরোধের কি কোনো উপায় আছে?
কলা বা বিয়ার খেলে মশা বেশি কামড়ায়, আর রসুন ও ভিটামিন সি মশাকে দূরে ঠেলে দেয়; এরকম কথা হয়তো শুনে থাকবেন। কিন্তু এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু খাবার বা পানীয় মশার আকর্ষণকে সূক্ষ্মভাবে পরিবর্তন করতে পারলেও খাবারের ডায়েট পরিবর্তন কখনোই আপনার মশা নিরোধক হিসেবে কাজ করবে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, কারা বেশি মশার কামড় খায়? ছেলেরা নাকি মেয়েরা?
ড. ক্লাইন বলেন, “সাধারণত পুরুষদের ত্বকে উদ্বায়ী রাসায়নিক বেশি থাকে, যা মশাদের আকৃষ্ট করে। তবে সেটা সব নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে খাটে না।”
তবে গর্ভবতী নারীরা বেশি মশার কামড় খান। কেননা, গর্ভাবস্থায় নারীরা বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়েন। যার ফলে মশারা তাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।