বিলীন হয়ে যাচ্ছ গ্রাম অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী কুপিবাতি - News Portal 24
ঢাকাFriday , ২৭ জানুয়ারী ২০২৩

বিলীন হয়ে যাচ্ছ গ্রাম অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী কুপিবাতি

মামুন আব্দুল্লাহ, বিশেষ প্রতিনিধি
জানুয়ারী ২৭, ২০২৩ ৯:২৮ অপরাহ্ন
Link Copied!

আধুনিকতার সংস্পর্শে এবং বৈদ্যুতিক যুগে বতর্মানে গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় কুপি বাতি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই কুপি বাতি শুধুই এখন স্মৃতি, কালের বির্বতনে কুপি বাতির স্থান দখল করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব, চার্জার, চার্জার ল্যাম্প, চার্জার লাইটসহ আরো অনেক কিছুই। গ্রামীণ জীবনে অন্ধকার দূর করার একমাত্র অবলম্বন ছিল কুপি বাতি। আবহমান গ্রামবাংলায় কুপি বাতির মত ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন আজ প্রযুক্তির কল্যাণে বিলীন হযে যাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এর কদর নেই বললেই চলে। এক সময় আবহমান গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এই কুপি বাতি আলো দিত। যা এখন খুব কমই চোখে পড়ে। কুপি বাতিগুলো ছিল বিভিন্ন ডিজাইনের ও বাহারি রঙের। এই কুপিগুলো তৈরি হত কাঁচ, মাটি, লোহা আর পিতল দিয়ে। গ্রামবাংলার মানুষ সামর্থ অনুযায়ী কুপি কিনে ব্যবহার করতেন। বাজারে সাধারনত দুই ধরনের কুপি পাওয়া যেত বড় ও ছোট। বেশি আলোর প্রয়োজনে কুপি বাতিগুলো কাঠ এবং মাটির তৈরি গাছা অথবা স্টান্ডের উপর রাখা হত। কিন্তু বর্তমানে গ্রামে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় কুপি বাতির কদর যেন হারিয়ে গেছে। আগের দিনে কুপিবাতি জ্বালিয়ে রাতে গৃহস্থালির কাজ করত গৃহিণীরা, রাস্তায় চলাচলসহ উঠানে কিংবা বারান্দায় অথবা ঘরে পড়াশোনা করত ছেলেমেয়েরা, পুথি পাঠ, কেচ্ছা কাহিনির নানা গল্প হতো।

কুপি বাতির কেরোসিন তেল আনার জন্য প্রতিটি বাড়িতেই ছিল বিশেষ ধরনের কাচের ও প্লাস্টিকের বোতল। সেই বোতলের গলায় রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো বাঁশের খুটিতে।এই কুপি বাতিগুলো ছিল বিভিন্ন ডিজাইনের ও বিভিন্ন রঙের।

গ্রামীণ সমাজের সন্ধ্যা বাতি ‘কুপি বাতি’ এখন সোনালী অতীত স্মৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ না থাকলেও গ্রামবাংলার মানুষ ব্যবহার করছে সৌর বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন রকমের চার্জার। গ্রাম বাংলার আপামর লোকের কাছে কুপি বাতির কদর কমে গেলেও এখনও অনেকে আকড়ে ধরে আছেন কুপি বাতির স্মৃতি।

দৌলতপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী ভাদ্রা গ্রামের নাসির উদ্দীনের বাড়িতে হঠাৎ কুপিবাতির দেখা মেলে। তিনি জানান বিদ্যুৎ চলে গেলে দাদার আমলের এই ঐতিহ্য আমি ধরে রেখেছি। তবে এর কদর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে জাদুঘরে এর স্থান দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। আধুনিক বৈদ্যুতিক যুগে বর্তমানে আবহমান গ্রাম বাংলার এক সময়ের কুপিবাতি এখন শুধুই স্মৃতি। মাত্র ৮/১০ বছর আগেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে অতি প্রয়োজনীয় কুপিবাতি আজ বিলুপ্তির পথে।

এবিষয়ে সাধারন মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আধুনিক বৈদ্যুতিক যুগে বর্তমানে কুপিবাতির স্থান দখল করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব, চার্জার লাইট, টর্চ লাইট, মোবাইল লাইটসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বাহারী যন্ত্র। ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় এই নিদর্শনটি। তবে সময়ের পরিবর্তনে এসব আর চোখে পড়ে না। ফলে এমন সময় আসবে যখন ভবিষৎ প্রজন্মদের কুপিবাতি চেনানোর জন্য জাদু ঘরে নিয়ে যেতে হবে।

তারা আরোও বলেন, গ্রামের অধিকাংশ লোকের কাছে কুপিবাতির কদর হারিয়ে গেলেও এখনও অনেক লোক আছে যারা আঁকড়ে ধরে আছেন কুপরি সেই স্মৃতি। গ্রামের সৌখিন গৃহস্ত বাড়ি ও অনেকে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বযত্নে কুপিবাতি সংরক্ষন করে রেখেছেন নিদর্শন হিসেবে।