প্রশ্ন: রাতে স্বপ্নদোষ হলে এই শীতের সকালে গোসল সম্ভব নয়। তাহলে এ ক্ষেত্রে নামাজ পড়তে চাইলে কী করা উচিত?
উত্তর: স্বপ্নদোষ হওয়া বড় নাপাকির অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরজ। সুতরাং এমনটি ঘটলে প্রচণ্ড ঠান্ডার সময় পানি গরম করে গোসল করতে হবে। কিন্তু যদি এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন যে, সেখানে পানি গরমের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং ঠান্ডা পানিতে গোসলের কারণে অসুস্থ হওয়ার কিংবা রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে তাহলে এক্ষেত্রে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ। কিন্তু পানি গরমের ব্যবস্থা থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।’ (সুরা তাগাবুন: ১৬) নবী (সা.) বলেন, ‘আমি যদি তোমাদেরকে কোনো বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে তা পালন করবে।’ (সহিহ বুখারি)
হাদিসে আরও এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সময় এক প্রচণ্ড শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হলো, আমি যদি গোসল করি তাহলে শেষ হয়ে যাব। তাই আমি তায়াম্মুম করে লোকজনকে নিয়ে সালাত আদায় করলাম। পরে তারা বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জানালে তিনি বললেন, ‘হে আমর, তুমি নাকি জুনুবি (নাপাক) অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করেছো?’
গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাকে অবহিত করে বললাম, আমি আল্লাহর এই বাণী শুনেছি, (আল্লাহ বলেছেন,) ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান।’ (সুরা নিসা : ২৯)। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন এবং কিছুই বললেন না।’ (আবু দাউদ)
এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মতির মাধ্যমে এমন পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করার বৈধতা প্রমাণিত হয়।
সৌদি আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতি শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ.) বলেন, ‘যদি এমন জায়গায় থাকে যেখানে সে পানি গরম করতে পারে না এবং গরম পানি দিয়ে গোসল করার জন্য সেখানে এমন কোনো ঘর না থাকে যেখানে (ঠান্ডা থেকে) আত্মরক্ষা করবে এবং (ঠান্ডা পানি ব্যবহারের কারণে) শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করবে। এতে কোনও আপত্তি নেই।’
উল্লেখ্য, এই বিধান স্বপ্নদোষের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী মিলন কিংবা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের মাধ্যমে জুনুবি (নাপাক) হওয়ার ক্ষেত্রে, মহিলাদের ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়া ও প্রসূতি নারীর পবিত্রতার জন্য গোসলের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।
উত্তর প্রদান: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।