দেনমোহর নির্ধারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ যা বলেছেন - News Portal 24
ঢাকাWednesday , ১১ জানুয়ারী ২০২৩

দেনমোহর নির্ধারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ যা বলেছেন

নিউজ পোর্টাল ২৪
জানুয়ারী ১১, ২০২৩ ৩:৩৪ অপরাহ্ন
Link Copied!

পৃথিবীর সব দেশে যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় রীতিতেই বিয়ে-বাগদান সম্পন্ন হয়ে আসছে। অনুরূপভাবে মুসলমানদের বিয়েও ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক হয়ে আসছে। সহি আকিদা-অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে এ মহতি কাজ বাস্তবায়নে সবার একাগ্রতা লক্ষণীয়। সবাই চায় বিয়েতে ইসলাম সমর্থন করে না এমন কিছু না করতে। তাই কাজের বেলায়ও মোহর, খোরপোষ ও আনুষঙ্গিক খরচাদি যথা সম্ভব ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে পরিমিতভাবে সম্পাদন করা সমীচীন।

বিয়ের জন্য দেনমোহর অপরিহার্য। এটি নিছক কোনো দান নয়, স্ত্রীর পাকাপোক্ত অধিকার। এ অধিকার আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্ত্রী নিজেকে স্বামী থেকে দূরে রাখতে পারে। বস্তুত মোহরানা সতীত্বের বিনিময়, পবিত্র বন্ধনের বাহ্যিক দায়বদ্ধতা আর নারীর ভবিষ্যৎ জীবনের গ্যারান্টি। মোহর কোনো অর্থ-বিত্তের প্রতিযোগিতা নয়, এটি স্বামীর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত কর্তব্য। এ কর্তব্য পালনে কোনো ধরনের এসপার-ওসপার করার অবকাশ নেই।

মোহর আল্লাহর বিধান হলেও সেটি ধার্য করার কর্তব্য দায়িত্বশীল বর কনে কিংবা তাদের অভিভাবকদের। আমাদের সমাজে সাধারণত উভয়পক্ষের মুরব্বিরাই সেটি নির্ধারণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে মুরব্বিরা বর-কনে উভয়ের নিকটাত্মীয় মা-বাবা-ভাই-বোন ও ভাবি, খালা, ফুফুকে প্রদত্ত মোহরের সাথে তুলনা করে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এটি ধার্য করে থাকে। মোহরের সুনির্দিষ্ট কিংবা সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নেই। তবে হানাফি মাজহাবের মতে, সর্বনিম্ন মোহর ১০ দিরহাম অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দশ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই’ (বায়হাকি)।

অবশ্যই আল্লাহর রাসূল মদিনায় হিজরত করার পর অসচ্ছলতার কারণে নিঃস্ব এক সাহাবির কাছে কোরআন জানার বিনিময়ে একটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ‘কোরআনের যা কিছু তোমার জানা আছে, তা স্ত্রীকে শিক্ষা দেবে এর বিনিময়ে আমি মেয়েটিকে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম।’ (মুসনাদে আহমদ) আরেকজন গরিব সাহাবিকে রাসূল সা. বলেছিলেন, ‘মোহরানা বাবদ তাকে কিছু দিতে চেষ্টা করো, তা যদি একটি লোহার আংটিও হয়’। সামর্থ্যবান স্বামী-স্ত্রীকে অধিক মোহর দিতে পারে। তাতে ইসলামে কোনো আপত্তি নেই। তবে তা যেন লৌকিকতা না হয়। ইসলামে লৌকিকতা বা রিয়া ছোট শিরকের সমতুল্য। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সবসময় যেহেতু এক রকম নয়, সেহেতু মোহরও ইসলামে নির্ধারিত নয়। এটি স্বামীর সামর্থ্য, স্ত্রীর মর্যাদা ও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। রাসূলে আকরাম সা. বলেছেন, ‘সর্বোত্তম পরিমাণের মোহর হচ্ছে তা, যা পরিশোধ করা সহজসাধ্য।’

আরও পড়ুনঃ  জনমানবহীন এলাকায় একাকি নামাজ পড়ার ফজিলত

পরস্পর পছন্দ হওয়ার পর সহজ উপায়ে বিয়ে সম্পাদন করা উচিত। লোক দেখানো ও ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে দেনমোহরের ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছু ধার্য করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামী শরিয়তে যৌতুক নেওয়া যেমনি বৈধ নয়, তেমনি বরপক্ষকেও বেশি চাপাচাপি করা যুক্তিসঙ্গত নয়। সহজ ও অনাড়ম্বরভাবে বিয়ে সম্পাদন প্রসঙ্গে রাসূল সা. ফরমায়েছেন, ‘নিশ্চয় বরকতের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও গ্রহণযোগ্য বিয়ে হলো, যে বিয়ে সবচেয়ে স্বল্প খরচে সম্পাদিত হয়’ (বায়হাকি শোয়াবুল ঈমান)।

জাহেলিয়া যুগে মোহরানা নিয়ে কনেপক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলত এবং অধিক পরিমাণ মোহর ধার্য হতো। পরবর্তীকালে মোহর আদায় নিয়ে শুরু হতো নানা জটিলতা ও ঝগড়া-ঝাটি। বর্তমানে মুসলিম সমাজেও একই অবস্থা। মোহরের প্রকৃত গুরুত্ব ও মর্যাদা বাকি নেই। এখন স্রেফ রসম-রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অনেকে এটা প্রথাগত ব্যাপার বলে মনে করে। মেয়েপক্ষ বিরাট অঙ্কের মোহর দাবি করে তারা এটাকে সামাজিক মান-সম্মানের বিষয় কিংবা তালাকের প্রতিবন্ধক হিসেবে ভেবে থাকে। বস্তুতপক্ষে ইসলামে মোহরের সাথে বংশীয় মানমর্যাদা ও তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই।

ইসলামী শরিয়ত স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা স্বামীর ওপর ফরজ করে দিয়েছে। আর মোহর পরিশোধ করা ছাড়া বিয়েই হতে পারে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের থেকে যে স্বাদ গ্রহণ করো তার বিনিময়ে অপরিহার্য ফরজ হিসেবে তাদের মোহর পরিশোধ করো’- সূরা নিসা : ২৪। দেখা যায়, অনেকের মোহর পরিশোধের নিয়তই থাকে না। প্রচারের উদ্দেশ্যে এটাকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মনে করা হয়। এ সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো একটা পরিমাণ মোহরানা ধার্য করে কোনো নারীকে বিয়ে করল, অথচ আল্লাহ জানেন তা পরিশোধ করার ইচ্ছে তার নেই, এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে তার স্ত্রীকে প্রতারিত করল এবং নাহকভাবে তার সতীত্ব নিজের জন্য হালাল মনে করে ভোগ করল এমন ব্যক্তি কিয়ামতে ‘জিনাকারী ব্যভিচারী হিসেবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে’ (মুসনাদে আহমদ)।

আরও পড়ুনঃ  কন্যা সন্তান আল্লাহর উপহার

দেনমোহরের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে বেশি প্রচলিত পরিমাণ হলো মোহরে ফাতেমি। মোহরে ফাতেমি বলা হয় ওই পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা যা রাসূলুল্লাহ সা.-এর মেয়ে হজরত ফাতিমা রা.-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এর পরিমাণ ছিল ৫০০ দিরহাম যা ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপার সমতুল্য (জাওয়াহিরুল ফতোওয়া, ৪/৩৫০)।

বিয়ে পবিত্র বন্ধন। প্রজন্ম সৃষ্টির চিরায়ত প্রক্রিয়া। সৃষ্টি সুখের উল্লাস। নৈতিক সম্পর্কের যোগসূত্র। অনন্তকালে নিজের জীবনের ঠিকানা গড়ে নেওয়া আর চরিত্র হিফাজতের উত্তম প্রতিষেধক। তাই ন্যূনতম অর্থ ও স্বাস্থ্য থাকলে বিয়ে ছাড়া শান্তির কোনো পথ নেই। এ শান্তির সমাজ সৃষ্টির জন্য আমাদের উচিত দেনমোহরের বেলায় কড়াকড়ি আরোপ না করে বিয়ের সামগ্রিক পরিবেশকে সহজ ও প্রাণবন্ত করে তোলা।