বাংলা রচনা : শৃঙ্খলাবোধ - News Portal 24
ঢাকাTuesday , ৭ জুন ২০২২

বাংলা রচনা : শৃঙ্খলাবোধ

নিউজ পোর্টাল ২৪
জুন ৭, ২০২২ ১:৫৪ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

শৃঙ্খলাবোধ

সূচনা : ‘Man is born free, but everywhere he is in chain’ -মহান দার্শনিক রুশোর এ বক্তব্যের অর্থ হলো, মানুষ মুক্তভাবে এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলেও প্রতি পদেই সে শৃঙ্খলিত। এ পৃথিবীর সবকিছুই প্রকৃতির নিয়মে বাঁধা। প্রকৃতির নিয়মের সামান্যতম ব্যত্যয় ঘটলেই মানবজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। নিয়ম মেনেই প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। আসে দিন আসে রাত।

শৃঙ্খলাবোধের স্বরূপ : শৃঙ্খলাবোধ বলতে সাধারণত জীবনযাপনে নিয়মনীতি, মূল্যবোধ ও আদর্শের প্রতি অনুগত থাকাকে বোঝায়। সমাজজীবনে কোনো মানুষই আপন খেয়াল অনুযায়ী চলতে পারে না। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই তাকে লক্ষ্যে পৌছে দিতে পারে। প্রচলিত নিয়ম-কানুন ও রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে জীবন পরিচালনাই হলো শৃঙ্খলাবোধ।

শৃঙ্খলাবোধের গুরুত্ব : মানবজীবনের জন্য শৃঙ্খলাবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। শৃঙ্খলার কারণেই মানবজীবনে সুখ-শান্তি নেমে আসে। স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি কখনোই সুখী হতে পারে না। সে শুধু নিজেরই নয়, সমাজেরও শান্তি নষ্ট করে । শৃঙ্খলাহীন জীবন লক্ষ্যহীন নৌকার মতো পানিতে ভেসে বেড়ায়। তার কোনো ঠিকানা থাকে না। মানুষ যদি নিজের ভেতর শৃঙ্খলা ধারণ করতে না পারে, তবে সমাজেও নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা নেমে আসে। তাই সুখী জীবনযাপনের জন্য শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই ।

শৃঙ্খলা চর্চার সময়: শৈশব হলো শৃঙ্খলা চর্চার উপযুক্ত সময়। নিয়ম মানেই শৃঙ্খলা। এটি রপ্ত করে চর্চার মাধ্যমে জীবনকে সুখী করা যায়। মানবজীবনে সফলতার চাবিকাঠি হলো শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলার ফলেই মানুষ সমাজের আচরণবিধি মেনে চলে এবং সফলভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা : ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা বিশেষ গুরুত্ব পালন করে। কারণ এ সময়েই ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ রোপিত হয় । শৃঙ্খলাবোধ একজন ছাত্রকে দায়িত্বশীল করে তোলে। পড়াশোনার প্রতি তার মনোযোগ বৃদ্ধি করে। ভবিষ্যতে শৃঙ্খলাবোধই তাকে সুনাগরিক হতে সাহায্য করে।

মানবজীবনে শৃঙ্খলা : সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষ উন্নত, কারণ সে নিয়মবদ্ধ জীবনযাপন করে। জীবনকে সার্থক করতে শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ শুধু নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, রাষ্ট্রের জন্যও সম্পদ। মানবজীবনে লক্ষ্যকে জয় করতে শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই ।

সমাজজীবনে শৃঙ্খলা : আদিম যুগ থেকেই মানুষের সমাজে কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা হয়। বর্তমান যুগেও নিয়ম-শৃঙ্খলা সমাজের জন্য অপরিহার্য। সত্যিকার অর্থে নিয়ম-শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো সমাজ চলতে পারে না। নিয়মবদ্ধভাবেই সমাজের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। শৃঙ্খলাই সমাজকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলে। অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। সমাজকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তোলার জন্য শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই।

শৃঙ্খলা সৃষ্টির উপায় : পরিবার শৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রধান কেন্দ্র। একটি শিশু পরিবার থেকেই প্রথম শৃঙ্খলা শেখে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শিশুর শিক্ষা শুরু হয় বিদ্যালয়ে। শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিশুর শৃঙ্খলাবোধকে জাগিয়ে তোলে । উত্তরোত্তর এ শৃঙ্খলাবোধের মধ্য দিয়েই শিশু একদিন উন্নত চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা : মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শৃঙ্খলা মেনে না চললে জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানুষকে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তার জীবনে নেমে আসে পরাজয়ের গ্লানি। খুব সমৃদ্ধ কোনো সমাজ বা প্রতিষ্ঠানও শৃঙ্খলার অভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অতএব শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।

বিশৃঙ্খলার পরিণতি : বিশৃঙ্খলার পরিণতি ভয়াবহ। বিশৃঙ্খলতা শুধু ধ্বংসই ডেকে আনে। যুদ্ধক্ষেত্রে একজন সৈনিক যতই দক্ষ হোক না কেন, তাকে শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয়। একমুহূর্তের বিশৃঙ্খলা তাকে এবং তার সহযোগীদের মারাত্মক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। খেলার মাঠে কোনো খেলোয়াড় যদি বিশৃঙ্খল আচরণ করে, তবে তার দল নিশ্চিত অর্থে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। বিশৃঙ্খলা এভাবেই মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় ৷

উপসংহার : একজন মানুষ, একটি সমাজ, একটি জাতি তখনই সভ্য হয়ে ওঠে, যখন তার মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ থাকে। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একটি সভ্যতা তথা জাতি তখনই ধ্বংস হয়েছে, যখন তার মধ্যে শৃঙ্খলাবোধের অভাব দেখা গিয়েছে। শৃঙ্খলাহীন মানুষের যেমন কোনো মর্যাদা নেই, তেমনি শৃঙ্খলাহীন জাতিরও কোনো সম্মান নেই। এ কারণেই সমাজজীবনে শৃঙ্খলা এত অত্যাবশ্যকীয় ।


বাংলা অনুচ্ছেদ : নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধ

মানুষ সামাজিক জীব। তাকে সমাজের অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করতে হয়। সমাজের একজন সদস্য হিসেবে তাকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। সামাজিক রীতিনীতির প্রতি এ শ্রদ্ধাবোধকেই নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধ বলে। মানুষের জীবনের একটি শৃঙ্খলা হলো অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শৃঙ্খলার নানা বন্ধন তৈরি করেই মানুষ অর্জন করেছে শ্রেষ্ঠত্ব, নির্মাণ করেছে সভ্যতা। এভাবেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনে শৃঙ্খলার পাঠ নিয়েছে মানুষ। সে অভিজ্ঞতায় দেখেছে, তার প্রতিটি কর্মের জন্যে প্রয়োজন হয় সুষম সমন্বয়ের। তার জন্য দরকার শৃঙ্খলা। সুশৃঙ্খল জাতিই নিশ্চিত করতে পারে জাতীয় জীবনে ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি। একটি সমাজের জন্য নিয়মানুবর্তিতা অতীব প্রয়োজনীয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন অফিসে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

নিয়মানুবর্তিতার অনুপস্থিতি বিশৃঙ্খলা এবং অনিয়মের সূত্রপাত করে। একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক। কিন্তু যদি প্রতিরক্ষা বিভাগ শৃঙ্খলহীনভাবে চলে, তবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই শিশুদের স্কুল পর্যায় থেকেই নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেওয়া দরকার। একজন সুশৃঙ্খল মানুষ জীবনে উন্নতি করতে পারে। অন্যদিকে, একজন শৃঙ্খলাহীন মানুষ জীবনে উন্নতি করতে পারে না। প্রকৃতির সর্বত্র শৃঙ্খলা বিরাজমান। সেখানে কোথাও শৃঙ্খলার অভাব নেই। তার সবকিছুই সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতির সুশৃঙ্খল নিয়মে উঁকি দেয় চাঁদ ও তারা। দিবারাত্রির এই পরিক্রমার পথ বেয়ে প্রকৃতিতে চলে ষড়ঋতুর আবর্তন। প্রকৃতির এই নিয়মের বন্ধনে বাঁধা মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব। তাই প্রকৃতির মতোই মানুষের জীবনে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে শৃঙ্খলার দায়। নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবোধ একটি মহৎ গুণ। আমাদের প্রত্যেকেরই এই গুণটির চর্চা করা উচিত।