পাত্র-পাত্রী দেখার নিয়ম, পাত্রী দেখার সময় কি কি প্রশ্ন করতে হয়? – News Portal 24
ঢাকাTuesday , ৩১ মে ২০২২

পাত্র-পাত্রী দেখার নিয়ম, পাত্রী দেখার সময় কি কি প্রশ্ন করতে হয়?

নিউজ পোর্টাল ২৪
মে ৩১, ২০২২ ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

আমাদের সমাজে ১০-১২ জনের পাত্রপক্ষের একটা দল নিয়ে পাত্রী দেখার যে রীতি রয়েছে, তা ইসলাম সমর্থন করে না। পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখা, পাত্রীর অহেতুক পরীক্ষা নেয়া ইত্যাদি পাত্রীপক্ষের জন্য বিব্রতকর। পাত্রী দেখার সময় আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামিক নিয়মকানুন মানতে হবে।

আগে বিয়ে করার সময় মেয়ে দেখতে গেলে মুরুব্বীরা থাকতেন । এখন ছেলেরা বন্ধুদের সাথে নিয়ে বা কাজিনদের সাথে মেয়ে দেখতে যায়। অনলাইনে ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে ইদানিং অনেকেই প্রশ্ন করেন এরকম, ”ভাইয়ের জন্য বা বন্ধুর জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছি, পাত্রীকে কি কি প্রশ্ন করতে পারি”?

এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

ইসলামের দৃষ্টিতে কেমন পাত্রী বিয়ে করা উচিত?
হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন-

‌’’নারীদেরকে চারটি জিনিসের জন্য বিয়ে করো। সম্পদের জন্য, বংশের জন্য, সৌন্দর্যের জন্য এবং দ্বীনদারীর জন্য। এর মধ্যে দ্বীনদারীকেই অগ্রাধিকার দাও।’’

আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলতেন-

’’কোনো মুত্তাকি ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ভীতির পর উত্তম যা লাভ করে তা হলো পুণ্যময়ী স্ত্রী। স্বামী তাকে কোনো নির্দেশ দিলে সে তা পালন করে, সে তার দিকে তাকালে (তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও প্রফুল্লতা) তাকে আনন্দিত করে এবং সে তাকে শপথ করে কিছু বললে সে তা পূর্ণ করে। আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে তার সম্ভ্রম ও সম্পদের হেফাজত করে।’’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৫৭)

পবিত্র কোরআন ও অনেক হাদিসের আলোকে সুখী জীবনের জন্য যে পরহেজগার ও মুত্তাকি মেয়েকে বিয়ে করা উচিত। বিয়ের জন্য এমন একজন নারীকে পছন্দ করা উচিত যার ঈমান ও আমলের প্রতি প্রবল ঝোঁক রয়েছে। এমন নারী, যে সর্বাবস্থায় মহান রাব্বুল আলামিনের উপর সন্তুষ্ট থাকে।

পাত্রী দেখার বিষয়ে সাহাবীদের কিছু ঘটনা
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-

“তোমাদের কেউ যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় এবং তার এমন কিছু দেখতে পারে- যা তাকে আগ্রহশীল করবে, তবে সে যেন তা করে নেয়।”

একদিন মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন রাসূল (সাঃ) বলেন-

“যাও, তাকে দেখে এসো। কারণ, এ দেখা তোমাদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।”

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জানালেন যে, তিনি জনৈক আনসারী মেয়েকে বিবাহ করতে চান।

তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে দেখেছো?

উত্তরে তিনি বললেন, না, দেখিনি ।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “যাও, দেখে এসো।

কারণ, আনসারদের চোখে কিছুটা ভিন্নতা আছে।

পাত্রী দেখার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?

বিয়ের আগে পাত্রীকে এক নজর দেখা জায়েজ আছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই শালীনতা বজায় রাখতে হবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, কনে দেখা আবশ্যকীয় বিষয় নয়। মেয়ের পরিবার যদি পাত্রী দেখাতে রাজি না থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে জোরাজুরি, ঝগড়া-ঝাটি করা যাবে না। সেক্ষেত্রে মেয়ের পরিবারের কোনো অভিজ্ঞ নারী পাত্রীর বর্ণনা পাত্রপক্ষের কাছে বলবে। এতে যদি সে সন্তুষ্ট হয়, তাহলে বিয়ের দিকে আগাবেন। আর মেয়ে দেখার সময় পার্টির আয়োজন করা, মেয়েকে পার্লারে নিয়ে সুন্দর করে সাজানো এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না।

ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী কোনো মেয়ে যদি সাধারণ পরিচ্ছন্ন কাপড়, অলঙ্কারাদি পরিধান করেন, যেগুলো তিনি সবসময় ব্যবহার করেন সেভাবেই ছেলের সামনে হাজির হওয়া সবচেয়ে উত্তম। এছাড়া বিয়ের উদ্দেশ্যে মেয়ের কোনো ছবি ছেলের পরিবারকে দেয়া ঠিক নয়। কারণ ছবি দেয়ার ক্ষেত্রে ছেলে ছাড়াও অন্য কোনো গায়রে মাহরাম দেখে ফেলার আশঙ্কা থাকে।

পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে মেয়ের কোন মাহরাম ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকা আবশ্যক।  বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাত্রীকে শুধুমাত্র পাত্র দেখতে পারবে,পাত্র ছাড়া পাত্রের ভাই, পিতা, চাচা বা কোন গায়েরে মাহরাম পুরুষ পাত্রীকে দেখতে পারবে না।

পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে শুধু মেয়ের চেহারা, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা দেখা যাবে। এছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ এমনকি মাথাও চুলও দেখা যাবে না। আর পাত্র-পাত্রী বিয়ের আগে একে অন্যকে স্পর্শ করতে পারবে না।

পাত্রী দেখার সময় করণীয় 

বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে এলাকার মানুষের মেয়ের বা মেয়ের পরিবার সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। তাদের থেকে মেয়ের চরিত্র, আদব-কায়দা এবং দ্বীনদারী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন। যদি এতে ভালো মনে হয় তাহলে বাবা-মা, বড় ভাই-ভাবী বা বোনদের কনে দেখতে পাঠাবে। ইসলামের দৃষ্টিতে পাত্রী দেখতে গিয়ে বড়সর অনুষ্ঠান করে খাওয়া-দাওয়া, তাদের বাড়িতে বিভিন্ন জিনিস নেয়ার কোনো দরকার নেই।

বিয়ের আগে আংটি বদলের পরে বা বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীদের ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া অথবা একান্তে সময় কাটানোর প্রবণতা ইসলামে নিষিদ্ধ। বিয়ের আগে অবাধ মেলামেশা অনেক সময় বিয়ের সম্ভাবনা নষ্ট করে। রাসূল (সা) বলেন-

’’যখন কোনো নারী-পুরুষ নির্জনে একত্রিত হয়, তখন সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’’ (সুনানে তিরমিজী: ২১৬৫)

পাত্রী পছন্দ না হলে কি করা উচিত?

পাত্রী দেখার পর কখনই পাত্রীপক্ষকে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাতে বেশী দেরী করবেন না। বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে পাত্রীকে পছন্দ হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। পাত্রী পছন্দ না হলে অপছন্দের বিষয়টট খুব শালীনতার সঙ্গে বুদ্ধি বিবেচনা করে পাত্রীপক্ষকে যতদ্রুত সম্ভব জানিয়ে দেয়া উচিত। রুঢ়ভাবে কখনই কাউকে প্রত্যাখান করবেন না। পাত্রীর মুখ দেখার সময় যদি কোনো উপহার দেয়া হয় সেটা আর ফেরত নেওয়া উচিত নয়। পাত্রীপক্ষের পরিবার অথবা খুবই বিশ্বস্ত লোক ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কথায় কান দিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া উচিত নয়।

আজকাল দেখা যায়, মেয়ে পছন্দ না হলে মেয়ের বা তার পরিবারের দোষ আছে ইত্যাদি বলে পাত্রপক্ষ কেটে পড়ার চেষ্টা করে। মেয়ে পছন্দ না হলে তাকে দোষারূপ করা অনেক বড় গুনাহ। এসব নিন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

পাত্রী দেখার সময় কি কি প্রশ্ন করতে হয়?

আপনি যখন প্রথমে পাত্রীকে দেখবেন তার নাম কি, বাবার নাম কি, তার কি করতে ভালো লাগে ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে নিতে পারেন। এমন কোনো প্রশ্ন করবেন না যে সে উত্তর দিতে অপ্রস্তুত হয়ে  পড়ে ।

এরপর আপনি পাত্রীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে– আপনাকে তার পছন্দ হয়েছে কিনা। সেই সাথে আপনার মতামতও জানাতে ভুলবেন না। অনেক ছেলে-মেয়ে শুধুমাত্র দেখতে সুন্দর হয় বলে বা টাকা পয়সা থাকে বলে তাদের পছন্দ করে নেয় । আসল জিনিস সেন্দর্য বা টাকা পয়সা নয়, মানুষের স্বভাব, আচার, ব্যবহার এগুলোই আসল। এজন্য যদি দেখেন আপনার টাকা পয়সা দেখে বা আপনি দেখতে ভাল বলে পছন্দ করেছে তাহলে তাদের থেকে দূরে থাকুন।

মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করবে কিনা এটা নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের চাপে পড়ে সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে, সেটা জেনে নিন। মেয়ের অমতে জোর করে বিয়ে দিলে সে সংসার বেশিদিন টেকে না।

এখনকার মডার্ন ফ্যামিলির মেয়েরা চায় বিয়ের পর স্বামীর সাথে আলাদা থাকতে, তারা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে থাকতে চায় না। পাত্রী দেখার সময় মেয়ের কাছ থেকে জেনে যে– সে বিয়ের পরে সবার সাথে এক সংসারে থাকতে চায় নাকি আলাদা থাকতে চায় ।

আবার অনেক চাকুরীজীবী মেয়ে চায় বিয়ের পরও চাকরিটা কন্টিনিউ করতে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা এটাকে ভালো চোখে দেখে না। পরবর্তীতে এটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝামেলার সৃষ্টি হয়। তাই বিয়ের আগেই এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবেন। মেয়ের কাছ থেকে তার বিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা জানবেন এবং আপনার মতামতও জানিয়ে দেবেন।

পাত্রী দেখার সময় যে প্রশ্নগুলো করবেন না

পাত্রী দেখার সময় যেমন কিছু বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি কিছু কিছু প্রশ্ন পাত্রীকে বিব্রত করতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে চলাই উত্তম। যেমন আজকাল প্রায় সব ছেলেমেয়েই বিয়ের আগে প্রেমঘটিত ব্যাপারে জড়িয়ে থাকে। আপনি যদি বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিয়ে পাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘’আপনি কখনো প্রেম করেছেন?” এই প্রশ্নে বিয়ে তো হবেই না বরং অপমানিত হতে পারেন আপনি। কারণ বিয়ের আগে সবাই প্রেম করবে এমন কোনো কথা নেই।

বিয়ের কতদিন পরে সন্তান চান। বা এছাড়া আপনি বাচ্চা কতটা পছন্দ করেন— এই প্রশ্নও এড়িয়ে যাবেন। পাত্রীর বন্ধুবান্ধবের বিষয়ে শুরুতেই খুব বেশি প্রশ্ন করবেন না। এতে মেয়ে বিরক্ত হয়ে ভাবতে পারে আপনি বিয়ের আগেই সব ব্যক্তিগত তথ্যগুলো জেনে নিতে চাচ্ছেন। মনে রাখবেন, যে কোনও সম্পর্কই দাঁড়িয়ে থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপরে।

পবিত্র কুরআনের একটি বৃহৎ এবং পূর্ণাঙ্গ সূরার নাম আল্লাহ পাক নারীদের (সূরা নিসা) নামে রেখেছেন। ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছে, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে প্রিয়নবী (সা.) নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের কর্তব্য।

বরপক্ষের সম্পদের প্রভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে যে বাবারা নিজের মেয়ের সম্মতি ছাড়াই তাকে তুলে দেয়, তারপর জীবনভর দু’জনের সংসারে লেগে থাকা মনোমালিন্যের দায়ভার তিনি কীভাবে এড়িয়ে যাবেন! মেয়ের মুখ বুঁজে সব সয়ে যাওয়া মানে আল্লাহ পাকের কাছে পার পাওয়া নয়। সে হিসেব বড়ই কঠিন।

বিয়ে অত্যন্ত সহজ একটি কাজ। কিন্ত আমরাই দিনকে দিন এই কাজটাকে জটিল করে ফেলেছি। মহান রাব্বুল আলামিন ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক মুসলিম উম্মাহর সকল পুরুষকে বিয়ে করার তাওফিক দান করুন। আমিন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট