ধানের কুঁড়ায় ভোজ্যতেল সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত - News Portal 24
ঢাকাWednesday , ১৮ মে ২০২২

ধানের কুঁড়ায় ভোজ্যতেল সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

নিউজ পোর্টাল ২৪
মে ১৮, ২০২২ ৬:৪৭ অপরাহ্ন
Link Copied!

ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেল বা রাইস ব্রান অয়েল সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কারণ দেশে উৎপাদিত ধানের কুঁড়া থেকে বছরের চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ ভোজ্যতেল দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব।

আর এতে তেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। একই সঙ্গে তৈরি হবে ব্যাপক কর্ম সংস্থান। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদফতরের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বছরে প্রায় ১৩-১৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ তেল আমদানি করা হয়। বাকি ৫ শতাংশ অভ্যন্তীরণভাবে উৎপাদন করা হয়।

ধানের কুঁড়ায় ভোজ্যতেল সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

ধানের কুঁড়া থেকে চাল উৎপাদনের ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নিলে সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টন দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে চাহিদা মেটাতে দেশীয় ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেলের (রাইস ব্রান অয়েল) ও সরিষা চাষ বাড়িয়ে অভ্যন্তীরণভাবে তেল উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সয়াবিন তেলের পাশাপাশি মানুষ এখন রাইস ব্রান অয়েলের দিকে ঝুঁকছে। কেন না, এটি সয়াবিনের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর। এ কারণে দেশে রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন বাড়াতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ হাজারের বেশি রাইস মিল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০০টি অটোরাইস মিল এবং ৪০০টি সেমি অটোরাইস মিল। বাকিগুলো ম্যানুয়াল পদ্ধতির রাইস মিল। প্রতিটি অটোরাইস মিল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬ টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয়। সেই হিসাবে ৬০০ অটোরাইস মিল থেকে এক দিনে ৩ হাজার ৬০০ টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয়। এ হিসাবে বছরে অটোরাইস মিল থেকে ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয় ১৩ লাখ ১৪ হাজার টন।

অন্যদিকে প্রতিটি সেমি অটোরাইস মিলে প্রতিদিন গড়ে ৩ দশমিক ৮০ টন চালের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে। সেই হিসাবে ৪০০টি সেমি অটোরাইস মিল থেকে বছরে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ১৬ হাজার সাধারণ রাইস মিল। প্রতিটি সাধারণ রাইস মিল থেকে প্রতিদিন গড়ে এক টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন এসব সাধারণ রাইস মিল থেকে ১৬ হাজার টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে। এ হিসাবে বছরে উৎপন্ন হচ্ছে ২৮ লাখ ৮০ হাজার টন কুঁড়া। আর সবমিলে দেশে বছরে চালের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ টন।

উৎপাদিত এ ধানের কুঁড়াতে তেলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে- পালিস, সেমি অটো পালিস, নোটিং পালিস এবং চাকী। পালিসে শতকরা ২৫-২৬ শতাংশ, সেমি অটো পালিসে ১৬-১৮ শতাংশ, নোটিং পালিসে ১৪-১৫ শতাংশ এবং চাকীতে ৮-১০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। এ হিসাবে ধানের কুঁড়া থেকে বছরে ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৬ টন ভোজ্যতেল উৎপাদন করা সম্ভব। উৎপাদিত এ তেল দিয়ে দেশের চাহিদার ৫০ শতাংশ মেটানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ৬-৭ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না।

ধানের কুঁড়ায় ভোজ্যতেল সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

এ ছাড়া দেশে স্থাপিত প্রায় ১৭ হাজার রাইস মিলকে সরকারি ও বেসরকারি উপায়ে ধানের কুঁড়া দিয়ে তেল উৎপাদনে উপযোগী করা গেলে বছরে প্রায় ২২ লাখ টন ভোজ্যতেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। কেন না, তখন সারা দেশের ধানের কুঁড়াকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। তখন এ তেল থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করাও সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপ-পরিচালক (গবেষণা) দেওয়ান আসরাফুল হোসেন বলেন, ধানের কুঁড়া দিয়ে তেল উৎপাদন নিয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে যে পরিমাণ ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয় তা থেকে দেশের চাহিদার অর্থেক তেল উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এই গবেষণাটি আমরা আরও আপডেট করছি।

কারণ ৮ ঘণ্টার মধ্যে ধানের কুঁড়া থেকে তেল না বের করা হলে তা নষ্ট হয়ে যায়। গবেষণায় যে পরিমাণ তেল উৎপাদন হবে বলে উল্লেখ আছে তা আরও আপডেট হবে। তখন কুঁড়া দিয়ে কী পরিমাণ তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে তা আরও ভালোভাবে জানা যাবে। এ নিয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে কাজ চলছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে এ খাতে বিনিয়োগে ৬টি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। গত বছরে তারা ১ দশমিক ১৮ লাখ টন তেল উৎপাদন করে বাজারজাত করেছে। প্রতিটি মিলে প্রায় ২৫০-৩০০ লোক কাজ করছে।

এ খাতে মিল বাড়ানো গেলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বর্তমানে নষ্ট হওয়া চালের কুঁড়ার উপযুক্ত ব্যবহার হবে। অন্যদিকে ভোজ্যতেলে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে।