সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, অনুচ্ছেদ লিখতে হবে অবশ্যই এক প্যারায়, সংক্ষেপে ১৫০-২০০ শব্দের মধ্যে। লেখাটি যেন তথ্যবহুল হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে তোমরা।
১. জাদুঘর
জাদুঘর বা সংগ্রহশালা বলতে এমন একটি ভবন বা প্রতিষ্ঠানকে বােঝায় যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে। এটি একটি দেশের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে। পৃথিবীর সব দেশেই তাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। জাদুঘরে সেই সব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জীবন সংগ্রামের ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ সংগৃহীত থাকে। পৃথিবীতে এমন অনেক জাদুঘর আছে, যেসব জাদুঘর তাদের সংগৃহীত নিদর্শনের সমৃদ্ধি ও বৈচিত্রের কারণে পৃথিবীব্যাপী প্রসিদ্ধ। যেমন— ফ্রান্সের লুভর মিউজিয়াম। এটি ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়। এখানে গ্রিক, মিশরীয়, রােমান ও প্রাচ্যদেশীয় অসংখ্য শিল্পনিদর্শন রয়েছে। এর পাশাপাশি সংরক্ষিত রয়েছে মধ্যযুগ, রেনেসাঁস ও আধুনিককালের বহু বিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্করের শিল্প ও ভাস্কর্য। লিওনার্দো দ্য ভিঞির ‘মােনালিসা’ লুভর মিউজিয়ামেই সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮০টিরও বেশি জাদুঘর রয়েছে। এগুলাের মধ্যে সবচেয়ে পুরােনাে রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর’। এটি ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। শাহবাগে অবস্থিত আমাদের জাতীয় জাদুঘরটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৈচিত্র্যময় নিদর্শন নিয়ে গড়ে উঠেছে অনেক জাদুঘর। জাদুঘর বর্তমানের সাথে অতীতের যােগসূত্র স্থাপন করে। জাদুঘরের মাধ্যমে আমরা অনেক জ্ঞান লাভ করতে পারি। একটি জাতির ঐতিহ্যসন্ধানে জাদুঘরের মতাে সহায়ক আর কিছু নেই। এনসাইক্লোপিডিয়া বা বিশ্বকোষে যেমন বিশ্বের খবর লিপিবদ্ধ থাকে তেমনি জাদুঘরে অতীত যেন জীবন্ত হয়ে দর্শকের কাছে ধরা দেয়। আর তাই জাতীয় জীবনে জাদুঘরের প্রয়ােজন সীমাহীন। এটি কোনাে জাতির শিকড় অনুসন্ধানে সাহায্য করে।
২. জাদুঘর
জাদুঘর বলতে এমন স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানকে বােঝায় যেখানে সভ্যতা ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করা হয়। অতীত কালের গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করাই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য। প্রাচীন মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পৃথিবীর প্রথম জাদুঘর স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত জাদুঘরগুলাের মধ্যে ফ্রান্সের ল্যুভর ও গিমে মিউজিয়াম, ব্রিটেনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ইতালির উপিজি মিউজিয়াম, রাশিয়ার হার্মিটেজ মিউজিয়াম উল্লেখযােগ্য। ঢাকার শাহবাগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়াে জাদুঘর অবস্থিত। এর নাম বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ধরনের পুরাকীর্তি এখানে সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশে আরাে কয়েকটি উল্লেখযােগ্য জাদুঘরের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, চট্টগ্রামের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর, ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত বাসভবনে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ লােকশিল্প জাদুঘর ইত্যাদি। জাদুঘরের পুরাকীর্তিসমূহ নিয়মিত প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকে। যে জাতির ঐতিহ্য যতাে সমৃদ্ধ, সে জাতির জাদুঘরও ততাে সমৃদ্ধ।
৩. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালি জাতির কাছে স্বর্ণময় এক গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তা জানানাের জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকাস্থ সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠার করা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য, প্রমাণ, বস্তুগত নিদর্শন, রেকর্ডপত্র ও স্মারক চিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের সুব্যবস্থা আছে এখানে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রবেশ পথের মুখেই রয়েছে শিখা ‘ চির অম্লান। তারকা আকৃতির একটি বেদির উপর জ্বলছে শিখা অনির্বাণ। দোতলাবিশিষ্ট ঘরের মধ্যে রয়েছে ছয়টি গ্যালারি। নিচতলায় তিনটি ও উপরতলায় তিনটি। প্রথম গ্যালারির নিদর্শনগুলাে দুটি পর্বে বিন্যস্ত।প্রথম পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। দ্বিতীয় পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগ্রামের চিত্র। দ্বিতীয় গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে পাকিস্তান আমলের ইতিহাস। তৃতীয় গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে ১৯৭১ সালের অসহযােগ আন্দোলন, ২৫ শে মার্চ রাতের সংঘটিত গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘােষণা, প্রাথমিক প্রতিরােধ, শরণার্থীদের জীবনচিত্র। দোতলার তিনটি গ্যালারি সাজানাে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, প্রমাণ ও চিত্র দিয়ে। প্রতিটি গ্যালারিতে আছেন একজন চৌকস গাইড। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংগৃহীত স্মারকসংখ্যা প্রায় এগারাে হাজার। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশ্বের আরও আটটি দেশের সমভাবাপন্ন জাদুঘরের সঙ্গে মিলে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব হিস্টরিক মিউজিয়াম অব কনসান্স গঠন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি স্মারক-দলিলপত্রের একমাত্র সংগ্রহশালা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে পারে, ভুলে না যায় সেই লক্ষ্যেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে।