ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল পালনে কোনো অসুবিধা নেই। তবে বিড়ালকে পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতে হবে। বিড়ালের প্রতি যথাযথ দয়া-অনুগ্রহ দেখাতে হবে। বিড়ালকে কোনো ধরনের কষ্ট দেওয়া যাবে না। তবে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, বিড়াল কোথাও নোংরা বা অপবিত্র করলে— সেটা যেন পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া হয়।
বিড়ালের ওপর কোনো ধরনের অবিচার হলে গুনাহগার হতে হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে—
“এক মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য আজাব দেওয়া হয়েছে। কারণ, বিড়ালটিকে আটকে রাখায় সেটি মারা গিয়েছিল। ফলে সে জাহান্নামে গেছে। বিড়ালটিকে সে আটকে রেখে সে খাবার-পানীয় দেয়নি। আবার ছেড়েও দেয়নি যাতে করে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।” (মুসলিম, হাদিস : ৫৭৪৫)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ আল্লামা ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, এ হাদিস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খানাপিনা দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়। (ফাতহুল বারি : ৬/৪১২)
পশু-পাখিসহ আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে মহান আল্লাহও দয়া করেন। অজস্র সওয়াবে ঋদ্ধ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন—
“দয়াবানদের ওপর দয়াময় আল্লাহও দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! পশুপাখিদের মধ্যেও কি আমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন, “প্রতিটি তাজা কলিজায় সওয়ব রয়েছে।’’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬৭; মুসলিম, হাদিস : ২২৪৫)
এছাড়াও রাসুল (সা.) নিজের ওজুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করানোর কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-এর বিড়ালপ্রীতির কথাও প্রসিদ্ধ।
প্রাক-ইসলামি যুগেও বিড়াল পোষা হতো। ইসলামের আবির্ভাবের পরও অনেকে বিড়াল পুষতেন। সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রার (রা.) নামই পরিবর্তিত হয়েছে বিড়াল লালন-পালন করাকে কেন্দ্র করে। তার প্রকৃত নাম আবদুর রহমান ইবনে সাখর।
বিড়ালের পিতা বলে ডেকেছেন নবী করিম (সা.)। তিনিও বিশ্ববাসীর কাছে আবু হুরায়রা নামে পরিচিত।
‘আবু হুরায়রা’ (বিড়ালের বাবা) নামটির পেছনে একটি মজার কাহিনী রয়েছে। একদিন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়ালছানা নিয়ে হজরত মুহাম্মদের (সা.) দরবারে উপস্থিত হন। সে সময় বিড়ালটি হঠাৎ করে সবার সামনে বেরিয়ে পড়ল। এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে রসিকতা করে, ‘হে বিড়ালের পিতা’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর থেকে তিনি ‘আবু হুরায়রা’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। আর সেদিন থেকে তিনি নিজেকে ‘আবু হুরায়রা’ নামেই পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন।
এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ইসলামে বিড়াল পালনে বাধা নেই। এমনকি মসজিদে হারাম কিংবা মসজিদে নববিতে অনেক বিড়াল ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। আগত মুসল্লিরাও তাদের পানি-খাবার দিয়ে থাকেন।
অনেকেই জানতে চান, বিড়াল পোষা কি জায়েজ? এর উত্তরে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেছেন, হ্যাঁ, বিড়াল পোষা বৈধ। তবে তাকে কোনো ধরনের কষ্ট দেওয়া যাবে না। বিড়ালকে পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতে হবে। তার প্রতি যথাযথ দয়া-অনুগ্রহ দেখাতে হবে। শুধু বিড়াল নয় কোনো প্রাণীর উপর অমানবিক নির্যাতন, খাবারের কষ্ট বা অবিচার করলে গোনাহগার হতে হবে।
অবশ্য সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, বিড়াল কোথাও নোংরা বা অপবিত্র করলে সেটা যেন পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া হয়।
দুনিয়ায় আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে সবকিছুর প্রতি দয়া অনুগ্রহ করতে হবে। বিশেষ করে, মানুষের পরম বন্ধু বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা বা মমত্ববোধ দেখাতে হবে। সমাজের অনেকেই আছে, যারা বিড়াল দেখলে তাড়িয়ে দেয়, অকারণে পেটায়, গায়ে গরম পানি ছুড়ে মারে এসব পাপের কাজ; যা মোটেও কাম্য নয়।