‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা ইডি বা ধ্বজভঙ্গ’ এমন একটি সাধারণ সমস্যা যাতে সব বয়সের পুরুষরাই কম বেশি ভুগে থাকেন। বলা হয়ে থাকে জীবনের কোন না কোন সময় অধিকাংশ পুরুষই এতে ভুগে থাকেন। একে পুরুষত্বহীনতাও বলা হয়।
‘ইরেক্টাইল ডিসফাংশন’ এমন একটি অবস্থার ইঙ্গিত করে যখন যৌন মিলনের সময় পুরুষের যৌনাঙ্গ বা লিঙ্গের পূর্ণাঙ্গ উত্থান হয়না বা উত্থান হলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যৌনতার প্রতি আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়াও ইডির লক্ষণ।
রাস্তা ঘাটে আপনি প্রায়শই বিভিন্ন ঔষধ বিক্রয়কারী দেখবেন যারা কিনা ‘জোকের তেল, তাছাড়াও বিভিন্ন মালিশ বিক্রি করে বেড়াচ্ছে’। এদের বিক্রিও বেশ ভাল কারণ অজ্ঞতাবশত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ফুটপাত থেকে এইসব ঔষধ কিনে ব্যবহার করে।
এমন কোন যাদুকরী ঔষধ নেই যা হঠাৎ করে কয়েক দিনেই আপনার যৌনাঙ্গের উত্থান জনিত সমস্যা দূর করে দিতে পারে। তবে কিছু প্রাকৃতিক নিরাময় রয়েছে যা নিয়মিত অনুসরণ করলে সাধারণ যৌন উত্থান জনিত দুর্বলতা দূর হবে।
১. নিয়মিত শরীরচর্চা হতে পারে যৌন অক্ষমতার একটি কার্যকর চিকিৎসা:
অনুশীলন আপনার শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে লিঙ্গের শক্তিশালী উত্থানের জন্য দরকার প্রচুর রক্ত সরবরাহ আর তার জন্য প্রয়োজন সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম হৃদপিণ্ড। নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস আপনার হৃদয়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিনের শরীরচর্চার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। নিদ্রাহীনতা এবং স্ট্রেস হ্রাস করে। এই তিনটি নিয়ামককে পুরুষের উত্থান জনিত সমস্যার অন্যতম কারিগর মনে করা হয়। তাছাড়া এই অভ্যাস আপনার দেহে টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেবে। এই টেস্টোস্টেরনকে বলা হয় সেক্স হরমোন যা আপনার সেক্স ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে। রক্তে টেস্টোস্টেরন কমে গেলে উত্থান জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
আবার, রক্তে শর্করা বেড়ে গেলেও লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা যৌন দুর্বলতায় ভুগে থাকেন। নিয়মিত শরীরচর্চা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। কেগেল পেশী অনুশীলন একটি বিশেষ শরীরচর্চা অনুশীলন যা আপনার যৌনাঙ্গকে শক্তিশালী করে তুলবে।
২. ধূমপান ত্যাগ করাও ইরেকটাইল ডিসফাংশনের একটি নিরাময়:
নিকোটিন আপনার উত্থান জনিত যৌন দুর্বলতা আরও খারাপ করে দিতে পারে, বিশেষত যদি আপনি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ধূমপান বা তামাক আপনার ধমনী এবং রক্তনালীগুলি সঙ্কুচিত দেয়। শক্তিশালী উত্থানের জন্য রক্ত প্রবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে গেলে পুরুষের উত্থান জনিত সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং, আপনার যদি ধূমপানের অভ্যাস থেকে থাকে তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম পুরুষের যৌন দুর্বলতা দূর করার একটি প্রাকৃতিক উপায়:
আপনি যদি নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হন তাহলে উত্থানের জনিত জটিলতাতে ভোগা খুব স্বাভাবিক। কারণ ঘুমের অভাবে যৌন হরমোন বা টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। মনে রাখবেন আমাদের ঘুম চক্রের সময় টেস্টোস্টেরন বিকাশ করে। সুতরাং, রাতে কমপক্ষে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম সেক্স হরমোন বা লিবিডো বাড়িয়ে তুলবে এবং আমরা জানি যে এটি স্বাস্থ্যকর যৌনজীবনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. চিনি গ্রহণ বন্ধ করুন যৌন ক্ষমতা বাড়ান:
লিঙ্গ উত্থানের একটি বড় শত্রু হলো চিনি। চিনি আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ইনসুলিনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং উচ্চ মাত্রার ইনসুলিন রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস করে। এতে করে যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায় বা লিঙ্গ পুরোপুরি শক্ত হতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ‘চিনি আপনার দেহের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ২৫ শতাংশেরও বেশি হ্রাস করতে সক্ষম। সুতরাং, পরের বার চিনিযুক্ত পানীয়, কোল্ড ড্রিংস, চা, কফি বা যে কোনও কিছু পান করার আগে দুবার ভাবুন’।
৫. অ্যালকোহল গ্রহণ কমিয়ে আনুন:
নাইট্রিক অক্সাইড এমন এক উপাদান যা পুরুষের লিঙ্গ উত্থিত করে এবং উত্থান দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে। আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এই যাদুকরী উপাদান নিঃসরণ ঘটিয়ে থাকে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। অ্যালকোহল আমাদের দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন হ্রাস করে এবং আপনার উত্থানকে প্রভাবিত করে। সুতরাং, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ সম্পর্কে সচেতন হন।
৬. ইরেকটাইল ডিসফাংশানে চিকিৎসায় ভেষজ উপাদান:
প্রকৃতিতে এমন কিছু গাছ গাছরা আছে যা উত্তেজক বা আফ্রোডাইজিয়াক হিসেবে কাজ করে। লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যার চিকিৎসায় প্রাকৃতিক এসব ঔষধি খুবই কার্যকর। কিছু ভেষজ টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় এবং স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে। লিঙ্গের উত্থান জনিত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য রসুন, প্যানাক্স জিনসেং, অশ্বগন্ধা এবং তরমুজ আপনার ট্রাম্প কার্ড হতে পারে। এসব আফ্রোডাইজিয়াক বা উত্তেজক ভেষজ আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশন নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।
৭. যৌন দুর্বলতা দূর করবে মেডিটেশন:
মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বেগ যৌন স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। দীর্ঘ কালীন মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বেগ যৌন ক্ষমতা হ্রাস করে। এর ফলে পুরুষের ইরেক্টাইল ডিসফাংশান দেখা দিতে পারে। আপনার স্ট্রেস হরমোন, উদ্বেগ বা হতাশাকে হ্রাস করতে এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলি পরিবর্তন করতে নিয়মিত ধ্যান করুন। এটি হৃৎস্পন্দন কমায় এবং রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৮. যৌন অক্ষমতা দূর করতে সব থেকে বড় ভূমিকা রাখতে পারে সঙ্গিনী:
আপনার সঙ্গিনী এমন একজন, যিনি সত্যিকার অর্থে সহায়তা করতে পারেন। তার ভালবাসা এবং সমর্থন আপনাকে যৌনশক্তি পুনরুদ্ধার করার সাহস যোগাবে এবং সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করার মানসিক শক্তি দেবে। তাকে সবকিছু খুলে বলুন এবং তার কাছে আশ্রয় চাইতে পারেন। মনে রাখবেন আপনার উত্থান জনিত সমস্যা শুধু আপনাকে কেবল ভোগাচ্ছে এমনটা নয়, সেও এর সমান ভুক্তভোগী। সঙ্গিনীর কাছ থেকে সমস্যাটি লুকিয়ে রাখলে হতাশা আর মানসিক চাপ বাড়তে থাকবে। এর ফলে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আপনার প্রেয়সীকে সব খুলে বলুন। সঙ্গিনীকে বলতে লজ্জা বোধ করবেন না। তিনি অবশ্যই সব বুঝতে পারবেন এবং আপনাকে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সাহায্যের হাত বড়িয়ে দেবেন।
তিনি যখন আপনার সমস্যা বুঝতে পারবেন তখন আর আপনার কিছু হারাবার ভয় পেতে হবে না। এই শান্তি ও আত্মবিশ্বাস আপনাকে ইরেকটাইল ডিসফাংশানের বিরুদ্ধে জয় এনে দেবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
৯. ওজন হ্রাস করুন:
গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্থুলকায় পুরুষদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সমস্যা বেশি হয়। যদি আপনি আপনার আদর্শ ওজনের চেয়ে ২০ শতাংশ ভারী হন, তাহলে কয়েক পাউন্ড ওজন কমানোর কথা বিবেচনা করুন। ক্যারাটে অথবা কোনো ওয়েট ট্রেনিং প্রোগ্রামের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। ফিট শরীর কেবলমাত্র ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা কমায় না, আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করে। ডা. গোল্ডস্টেইন বলেন, ‘একজন পুরুষ যতবেশি শারীরিকভাবে ভালো অনুভব করবে, সে ততবেশি নিজেকে যৌনসঙ্গমের জন্য ফিট মনে করবে।’
১০. বেশি করে সংগম করুন:
৫৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সের ১,০০০ ফিনিশ পুরুষের ওপর করা পাঁচ বছরের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যারা একসপ্তাহে একবারও যৌনসহবাস করেনি তাদের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন সমস্যা সপ্তাহে একবার যৌনসহবাস করা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল। গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, নিয়মিত যৌনসঙ্গম পুরুষকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন থেকে রক্ষা করে।
১১. রিল্যাক্সে থাকুন:
লিঙ্গ উত্থানের জন্য মনকে রিল্যাক্সে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কেন? আপনার নার্ভাস সিস্টেম দুই রকম মোডে চালিত হয়: একটি হচ্ছে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম এবং অন্যটি হচ্ছে প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম। যখন আপনার সিম্প্যাথেটিক নার্ভ নেটওয়ার্ক প্রভাব বিস্তার করে, তখন আপনার শরীর আক্ষরিক অর্থে সতর্ক থাকে। অ্যাড্রিনাল হরমোন আপনাকে ফাইট অথবা ফ্লাইট করার জন্য প্রস্তুত রাখে। স্নায়বিক দুর্বলতা এবং উদ্বিগ্নতা আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এবং পেনিস থেকে রক্ত পেশীর দিকে টেনে আনে, যার ফলে লিঙ্গ উত্থানে বাধা পড়ে। ডা. বাউম বলেন, ‘উদ্বিগ্নতা আপনার সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে।’ কিছু পুরুষদের ব্যর্থতার ভয় এতটাই অভিভূত করে রাখে যে তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যাড্রিনাল হরমোন নরোপিনেফ্রাইন নিঃসরণ হয়, যা লিঙ্গ খাড়া হওয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ইরেক্টাইল ডিসফাংশন থেকে রক্ষা পেতে রিল্যাক্সে থাকুন এবং আপনার প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৌঁছানো সিগন্যাল রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে পেনিসের আর্টারি ও সাইনাসকে নির্দেশ দেবে।
১২. বডি স্টিমিউল্যান্ট এড়িয়ে চলুন:
বডি স্টিমিউল্যান্ট বা শরীর চাঙ্গাকারী খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন, যেমন- ক্যাফেইন সমৃদ্ধ কফি। এসব খাবার ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ হতে পারে। ডা. গোল্ডস্টেইন বলেন, ‘যৌনসহবাসের সময় রিল্যাক্সে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। স্টিমিউল্যান্ট পেশীকে সংকুচিত করে, কিন্তু লিঙ্গ উত্থিত হওয়ার পূর্বে পেশীকে অবশ্যই রিল্যাক্সে রাখা উচিত।’
১৩. ফোরপ্লে খেলুন:
রিল্যাক্স হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে, সঙ্গীকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ফোরপ্লে। লিঙ্গ উত্থিত হচ্ছে কিনা এ চিন্তা বাদ দিয়ে একে অপরকে উপভোগ করুন। ডা. গোল্ডস্টেইন বলেন, ‘ত্বক হচ্ছে শরীরের সবচেয়ে বড় সেক্সুয়াল অর্গান, পেনিস নয়।’
১৪. বেশি করে তরমুজ খান:
রসালো তরমুজ হতে পারে নতুন রোমান্টিক ফুড। টেক্সাসের কলেজ স্টেশনের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল ইম্প্রুভমেন্ট সেন্টারের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, তরমুজের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ভায়াগ্রার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এ রসালো ফলে সাইট্রুলাইন থাকে যা শরীরের রক্তনালীকে রিল্যাক্সে রাখে- এর ফলে আপনার হার্ট, সারকুলেটরি সিস্টেম এবং ইমিউন সিস্টেম উপকার পেয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।