সিনহা হত্যায় প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ – News Portal 24
ঢাকাMonday , ৩১ জানুয়ারী ২০২২

সিনহা হত্যায় প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ

নিউজ পোর্টাল ২৪
জানুয়ারী ৩১, ২০২২ ৫:০৩ অপরাহ্ন
Link Copied!

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া ৬ জনের যাবজ্জীবন ও ৩ এপিবিএন সদস্যসহ ৭ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

সোমবার আদালতে ১৫ আসামির উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বেলা আড়াইটার দিকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার ৩০০ পৃষ্ঠার এ রায় পড়া শুরু করেন।

এর আগে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ আসামিকে দুপুর ২টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশের সঙ্গে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। অপ্রয়োজনীয় যানবাহন নিয়ে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে সেটি দেখা হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী ছাড়া কাউকে আজ আদালতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।”

আদালতের প্রবেশ পথ, জেলা প্রশাসক কার্যালয় এলাকা ও কাঁচা বাজার এলাকায় পুলিশের মোট ছয়টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

আদালত এলাকায় ৮০ জনের মত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে সদর থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পাশাপাশি পুলিশের একটি দলকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখা হয়েছে।

সকালে আদালতে প্রবেশের সময় দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা ফটকে অবস্থান নিয়ে আছেন। কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। আদালতের ভবনগুলোর বিভিন্ন তলাতেও পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে।

এদিকে ছেলের হত্যার রায় শুনতে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার এখন কক্সবাজারের অবস্থান করছেন। মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলন, ‘আমার ভাই সিনহা হত্যা মামলায় রায় শুনতে সকালে মাকে নিয়ে আমরা উত্তরার বাসা থেকে রওনা হই। এখন আমরা কক্সবাজারে।’

এই মামলার ১৫ আসামি হলেন, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। দেড় বছর আগে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়। আদালত কক্সবাজারের র‍্যাব-১৫-কে মামলাটির তদন্তভার দেন।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। তিনটি মামলার দুটি মাদক রাখার অভিযোগে এবং একটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে।

মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভূক্ত করার পর আদালত তদন্তভার দেয় র‍্যাবকে । র‍্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেয়।

২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষী দেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা আদালতে জবানবন্দি দেন। সবশেষে ৯ থেকে ১২ই জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায়ের দিন ঠিক করে।

রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। মামলার ১৫ আসামির মধ্যে পুলিশের ৯ জন ও এপিবিএন এর ৩ জন। আর অপর ৩ জন পুলিশের দায়ের মামলার সাক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দা।