‘লেগুনার হেলপার সেজে হত্যার রহস্য বের করলেন পুলিশ কর্মকর্তা’ – News Portal 24
ঢাকাSunday , ৩০ জানুয়ারী ২০২২

‘লেগুনার হেলপার সেজে হত্যার রহস্য বের করলেন পুলিশ কর্মকর্তা’

নিউজ পোর্টাল ২৪
জানুয়ারী ৩০, ২০২২ ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অজ্ঞাতপরিচয়ে এক ব্যক্তির লাশ পড়ে ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, চলন্ত এক লেগুনা থেকে কেউ ওই ব্যক্তিকে ফেলে যাচ্ছেন। কিন্তু ফুটেজে সেই লেগুনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট দেখা যাচ্ছিল না। এতে বিপাকে পড়ে যায় পুলিশ।

শেষপর্যন্ত লেগুনা হেলপার সেজে সন্ধান চলে সেই লেগুনার। সেই হেলপার হন যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক বিলাল আল আজাদ।

টানা পাঁচদিন ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, কোনাবাড়ী, ডেমরা, চিটাগাং রোড আর নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি লেগুনাস্ট্যান্ডে হেলপারি করে তিনি উদঘাটন করেন ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য। শনাক্ত করেন সেই লেগুনা এবং গ্রেপ্তারও করা হয় চারজনকে।

উপ-পরিদর্শক বিলাল আল আজাদ বলেন, ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা সংলগ্ন ফ্লাইওভারের ওপর ওই ব্যক্তিকে ফেলে যেতে দেখা যায়। ওই ঘটনায় মামলার পর আমি তদন্তের দায়িত্ব পাই। কিন্তু আলামত কিছুই ছিল না আমার কাছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে শুধু দেখতে পাই, লেগুনার পা-দানির রং লাল। সেই সূত্র ধরেই লাল পা-দানির লেগুনা খুঁজতে থাকি। সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করি, ফুটেজে দেখা মডেলের লেগুনা কোন রুটে চলাচল করে।

এই কর্মকর্তা বলেন, পূর্ব পরিচিত লেগুনাস্ট্যান্ডের এক লাইনম্যানের মাধ্যমে সাইনবোর্ডে গিয়ে নিজের পরিচয় গোপন রেখে হেলপারের চাকরি নিই। ২৩ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হেলপারি করে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে পেয়েছি। কখনও কখনও স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাকরি খোঁজার নামে খুঁজতে থাকি সেই লাল রঙের পা-দানির লেগুনাটি। হেলপার সেজে ঘুমিয়ে ছিলাম গাড়ির ভেতরেই। এভাবে অন্তত ৩০০ লেগুনা যাচাই করেছি।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চালানোর আগ্রহের কথা জানাই অন্য চালক সহকর্মীদের কাছে। লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি-না, তা খুঁজতে থাকি। শেষপর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা নষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করে চালানো যাবে। কারণ এর চালক অসুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষপর্যন্ত কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে গিয়ে পাই সেই লাল পা-দানির লেগুনা।

বিলাল আল আজাদ বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম রহস্য উদঘাটনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এরপর সেই লেগুনার মালিককে খুঁজে বের করি। তার কাছে জানতে চাই, এর আগে কে চালিয়েছিল এই লেগুনা। ঠিকানা নিয়ে জানতে পারি, ফরহাদ নামে সেই চালক মাদারীপুর শ্বশুড়বাড়ি রয়েছেন। এরপর ২৪ জানুয়ারি রাতে টিম নিয়ে চলে যাই মাদারীপুর। পেয়েও যাই চালককে। কিন্তু চালক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলতে থাকেন, ২১ জানুয়ারি তিনি লেগুনা জমা দিয়ে চলে এসেছিলেন। প্রযুক্তিগত তদন্তেও তার কথার প্রমাণ মেলে। এতে রহস্য উদঘাটনে হতাশ হয়ে যাই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, তার ডিসি স্যার, এসি স্যার আর ওসি স্যার তাকে নানাভাবে দিকনির্দেশনা আর সাহস দিয়ে চলছিলেন। ফের লেগুনার হেলপার সেজে যান কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে। জানতে পারেন ২২ জানুয়ারি রাতে লেগুনাটি নিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক চালক। তার হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান।

এবার রহস্য উদঘাটনের পালা-

উপপরিদর্শক আজাদ বলেন, দুইজনের নাম জানলেও তাদের কোনো মোবাইল নম্বর বা বাসার ঠিকানা পাচ্ছিলাম না। গ্যারেজ থেকে বলা হয়, ওই দুইজন বিভিন্ন স্ট্যান্ডে আর বিভিন্ন গ্যারেজে থাকেন। কিন্তু দুই-তিনদিন ধরে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর ফের আমি হেলপার সেজে অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে মঞ্জুর ড্রাইভারকে খুঁজতে থাকি। এক পর্যায়ে জানতে পারি, মঞ্জুরের হেলপার রহমান এখন বাসে হেলপারি করেন। শেষপর্যন্ত তাকে আটক করা গেলেও মঞ্জুরকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না।

তবে আটকের বিষয়টি গোপন রেখে রহমানকে মূলত চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল এবং তার মাধ্যমে মঞ্জুরকে খোঁজা হচ্ছিল। এরপর সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে কাকতালীয়ভাবেই পাওয়া যায় মঞ্জুরকে। তাদের দুইজনের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় রিপন আর রুবেল নামে আরও দুইজনকে। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে পরিচয় লুকিয়ে তার হেলপারি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর সেই লাশটি ছিল একজন মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ফ্লাইওভারে নিয়ে ওই চারজন তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর তাকে চলন্ত গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটি রাতের শেষভাগে লোকজনকে লেগুনায় তুলে সবকিছু কেড়ে নেয়। এরপর চোখে মলম বা মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে ফেলে দেয়। মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিন এই ঘটনারই শিকার হয়েছিলেন।

সূত্র: সমকাল