ডেস্ক রিপোর্ট:: সুনামগঞ্জের শাল্লায় ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে দুই সন্তানকে নিয়ে বিষপান করেন মা আখিয়া বেগম (২৮)। বিষক্রিয়ায় মায়ের মৃত্যু পর মারা গেল তার এক ছেলেও। মঙ্গলবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে তার মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন— উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের শামসুল হকের স্ত্রী আখিয়া বেগম (২৮) ও তার ছেলে রবিউল (৬)। আহত আরেক ছেলের নাম সিয়াম (১০)।
সোমবার উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম।
তিনি জানান, ‘সোমবার গৃহবধূ আখিয়া বেগম দুই ছেলেকে নিয়ে বিষপান করেন পারিবারিক কলহে। সিলেট নিয়ে যাওয়ার পথে আঁখি আক্তারের মৃত্যু হয়। তার দুই ছেলেকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের সিলেটে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখানে রবিউলের মৃত্যু হয়।’
মৃত আখিয়া বেগমের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কেন মা, দুই ছেলে বিষপান করল প্রাথমিকভাবে কোনো কারণ জানা যায়নি। অসুস্থ অন্য ছেলে শঙ্কামুক্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের দরিদ্র জেলে শামসুল হক হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু হাওরে এখন আর আগে মতো মাছ পাওয়া যায় না। তাই সারা বছর তাদের সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। এনিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে প্রায় সময় ঝগড়-বিবাধ হতো। একারণে তাদের সংসারে শান্তি ছিলনা। এমতাবস্থায় প্রতিদিনের মতো আজ সোমবার (৪ অক্টোবর) ভোরে জেলে শামসুল হক হাওরে মাছ ধরে যায়। সেই সুযোগে সকাল অনুমান ৯টার দিকে তার স্ত্রী আখি আক্তার ও তার দুই ছেলে সিয়াম মিয়া, রবিউল মিয়া বাড়িতে থাকা জমিতে দেওয়ার বিষপান করে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এঘটনার পরপর জেলে শামসুল হক বাড়িতে ফিরে স্ত্রী ও দুই ছেলে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং তাদের শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
শাল্লা থেকে দিরাই যাওয়ার পথে আখিয়া বেগমের মৃত্যু হয় বলে জানান মৃতের আত্মীয়রা।
এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ভূঁইয়া বলেন, ‘সোমবার সকাল ১০টার দিকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে এলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। দিরাই পৌঁছার আগেই আখিয়া বেগম নিস্তেজ হলে তাকে পুনরায় শাল্লা হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’