ডেস্ক রিপোর্ট:: দেশে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিশাল এক চমক নিয়ে এসেছিল ইভ্যালি। শুরুতে নানা অফারের প্রলোভনে পড়ে গ্রাহকও এলো হুড়মুড়িয়ে, তবে গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অর্ডার নিয়ে দিতে হলো ব্যর্থ। মাত্র ৪ বছরে প্রতিষ্ঠানটির দেনা হাজার কোটি টাকা। শেষ দিকে এসে ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে। থানায় হলো প্রতারণার মামলা এবং সবশেষ ইভ্যালির সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার।
ইভ্যালি নামের এক ই কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্য কিনেই অল্প দিনে বড়লোক হয়ে যেতে চাইল কিছু মানুষ, তাদের সেই স্বপ্ন এখন পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নতকোত্তর শেষ করলেও হিসাববিজ্ঞান ভালোই বুঝতেন ইভ্যালির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ রাসেল। গ্রাহকের নজর কাড়ার কৌশলও করেছিলেন রপ্ত। পড়াশোনা শেষে ২০১১ সালে চাকরি নেন ঢাকা ব্যাংকে। ৬ বছর পর চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ডায়াপার ব্যবসা। ইভ্যালিও শুরু করেন ২০১৭ সালেই।
ইভ্যালির বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর ক্যাশব্যাকের কারণে বাড়তে থাকে গ্রাহক। তবে গত এক বছরে তাদের ভোগান্তি পৌঁছে চরমে। সেখানে হাজার হাজার গ্রাহক বেশি লাভের আশায় লোভে পড়ে ‘বিশাল ছাড়’ এর ফাঁদে পড়েছেন। টাকা বা পণ্য ফিরে পেতে এখন ধর্না দিতে হচ্ছে তাদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত তাদের দায়দেনার পরিমাণ ছিল ৫৪৩ কোটি টাকা। দিনে দিনে যা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজার ধরতে বিপণনের যে আগ্রাসী কৌশল নিয়ে রাসেল এগিয়েছেন, তার মূল নিশানায় ছিলেন তরুণরা। ইভ্যালির কাছ থেকে অর্ধেক দামে গ্রহস্থালির আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, শখের মোটরসাইকেল, ওয়াশিং মেশিনসহ অন্যান্য বিলাসী পণ্য কিনে বহু তরুণ এ কোম্পানির ‘ভক্ত’ হয়ে গিয়েছিলেন। এদের কেউ কেউ আবার বেশি লাভের লোভে পেশাদার ক্রেতাও বনে গিয়েছিলেন।
যিনি প্রথমবার অর্ধেক দামে একটি মোটরসাইকেল কিনতে পেরেছিলেন, তিনি পরে আরও লাভের আশায় ১০টা মোটরসাইকেল কেনার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে বসলেন ইভ্যালিতে। কিন্তু এবার আর পণ্য বুঝে পেলন না, টাকাও ফেরত এল না। ক্রতা পড়লেন গাড্ডায়।
এভাবে প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনা করে, জমি বা গয়না বেচে সেই টাকা ইভ্যালিতে লগ্নি করে এখন মহাবিপদে আছেন বহু গ্রাহক।
এছাড়া নামিদামি মডেল-তারকাদের দিয়ে ব্র্যান্ডিং, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে তাদের বিনিয়োগ ছিল কম। নতুন গ্রাহকের টাকায় পুরোনো গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের পাওয়া দেয়া হচ্ছিল।
স্ত্রী শামীমা নাসরিনসহ রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর, র্যাব জোনিয়েছে, গ্রাহক-সরবরাহকারীদের কাছে ইভ্যালির দেনা এক হাজার কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারিতেও এর পরিমাণ ছিল ৪০৩ কোটি।
ইভ্যালি থেকে সিইও হিসেবে রাসেল বেতন নিতেন ১০ লাখ টাকা, আর তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বেতন ছিল ৫ লাখ। ২ হাজার কর্মচারী দিয়ে শুরু করে শেষে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩শ । শুরুতে স্টাফদের বেতন ৫ কোটি টাকা থাকলেও এখন তা কমে দেড় কোটি টাকায় দাড়িয়েছে।