অনলাইন ডেস্ক:: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের নিয়মকানুন, রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান প্রচলিত রয়েছে। এসব অদ্ভুত সব নিয়মকানুন বা আচার অনুষ্ঠান বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা যুগ যুগ ধরে মেনে আসছে। এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও সেসব নিয়মকানুন এখনো মানা হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের এমনি ১০টি অদ্ভুত আচার অনুষ্ঠানের তথ্য
০১. দাঁত ফাইলিং
বালিনিস হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের অন্যতম এক অনুষ্ঠান হচ্ছে দাঁত ফাইলিং। ‘বালিনিস’ বিয়ের সময় বর এবং কনের দাঁত ফাইলিং করা হয়। এটি ‘বালিনিস’ সংস্কুতির অন্যতম এক প্রধান অনুসঙ্গ। তাঁদের বিশ্বাস এর ফলে আগামী জীবনে সব রকম বিপদ থেকে দূরে থাকা যায়।
০২. হাউস তাম্বারান
পাপুয়া নিউগিনির কানিনগারা উপজাতিদের মধ্যে এই প্রথাটি প্রচলিত। শরীরে পরিবর্তনের মাধ্যমে বিরুদ্ধ পরিবেশে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদেরকে আরো শক্তিশালী করা এবং চারপাশের প্রকিৃতি ও পরিবেশের সাথে আত্মিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্যই তারা এই অনুষ্ঠান করে থাকে। বয়সন্ধিকাল আগত এমন ছেলেকে দুই মাসের জন্য ‘হাউস তাম্বারান’ বা ‘আত্মার ঘরে’ এক আচারিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্জন বাস করতে হয়। এসময় তাকে কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলতে দেয়া হয় না । এরপর একজন উপজাতি বিশেষজ্ঞ বাশেঁর ধারালো কঞ্চি দিয়ে ছেলেটির সারা পিঠে কুমিরের চামড়ার ন্যায় দাগ আঁকতে থাকেন। এই উপজাতিদের ধারনা কুমির মানুষের স্রষ্টা। তাদের বিশ্বাস কুমিরের দাতেঁর এই চিহ্নের মাধ্যমে কুমিরের আত্মা ছেলেটিকে পরিপূর্ণ পুরুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
০৩. সূর্য নৃত্য
নেটিভ আমেরিকানরা পৃথিবীকে প্রসন্ন রাখার জন্য নানারকম আচার অনুষ্ঠান করে থাকে। সূর্য নৃত্য তাদের এমনই এক প্রথা। এর মাধ্যমে সর্বশক্তির আধাঁর সূর্যের কাছে প্রার্থনা জানানো হয় এবং নিজেকে উৎসর্গের দ্বারা বৃক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা যায় বলে তাদের বিশ্বাস। এই আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির বুকের চামড়া ফুঁটো করে তাতে দড়ির একটি অংশ লাগানো থাকে। দড়ির অপর অংশটি মাটিতে দন্ডায়মান একটি লাঠির সাথে যুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে একটি জীবনের সাথে বৃক্ষের সংযোগ স্থাপন করা হয়। লাঠির দড়ির সাথে যুক্ত অংশগ্রহণকারী লাঠির চারদিকে উত্তাল নৃত্য করতে করতে সূর্যকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করতে থাকে।
০৪. লা টমেটিনা
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া রাজ্যের বুনল শহরে প্রতি বছর আগস্টের শেষ বুধবার পৃথিবীর বৃহৎ এই টমেটো যুদ্ধের আয়োজন করা হয়। ১৯৪৫ সাল হতে আয়োজিত এই উৎসবের নাম ‘লা টমেটিনা’। এই উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা পরষ্পরকে টমেটো নিক্ষেপ করে।
০৫. শিশু নিক্ষেপ
কর্নাটকের শান্তেশ্বর মন্দিরের কাছে প্রায় পঞ্চাশ ফুট উঁচু থেকে শিশুকে নীচে ফেলে দেওয়া হয় আর নিচ থেকে কাপড়ের সাহায্যে শিশুটিকে আটকানো হয়। এই ভয়ানক প্রথা বিগত পাঁচশো বছর ধরে চলে আসছে ভারতের কর্নাটক রাজ্যে। এর মাধ্যমে নবজাতক শিশুটির ভাগ্য, স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধি আসবে বলে এ অঞ্চলের লোকদের বিশ্বাস। শিশুর বয়স দুবছর হলে শিশুকে নিক্ষেপের মাধ্যমে এই রীতি সম্পন্ন করা হয়।
০৬. কারেন উপজাতির গলা লম্বা করা
থাইল্যান্ডের ‘কারেন’ উপজাতিদের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। বিশেষত কারেন মহিলাদের জন্য এই অনুষ্ঠান করা হয়। এই প্রথায় মহিলাদের গলায় অদ্ভুত একটি রিং পরানো হয়। এখানকার লোকদের বিশ্বাস, এর ফলে মহিলাদের গলা অনেকটা লম্বা হয় যা তাদের দৈহিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাঁচ বছর বয়সেই মেয়েদের গলায় এই রিং পরিয়ে দেওয়া হয়।
০৭. টাওয়ার অফ সাইলেন্স
পার্সী ধর্মাবলম্বীরা মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে এই রীতি অনুসরণ করে থাকে। এই প্রথা অনুসারে মৃতদেহের সৎকারও হয় না, এমনকি কবরও দেওয়া হয় না৷ বরং নগ্ন মৃতদেহ খোলা আকাশের নিচে রেখে যাওয়া হয়৷ যাতে চিল শকুনে ছিঁড়ে খেতে পারে ৷ পার্সী ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মারা যাওয়ার পরও পৃথিবীর খানিক উপকারে নিজেদের নিয়োগ করার মধ্যেই মানব জীবনের পরিপূর্ণতা। পার্সিদের সৎকার স্থানটিকে বলা হয় ‘টাওয়ার অফ সাইলেন্স’৷
০৮. পিঁপড়ের কামড়ে মোক্ষলাভ
আমাজনের ‘সাতেরে-মাওয়ে’ উপজাতিদের মধ্যে এই প্রথা প্রচলিত। বলতে গেলে এই প্রথা এখানকার উপজাতিদের তার সঙ্গীর সাথে দৈহিক মিলনের অনুমতিপত্র। এই রীতি অনুসারে উপজাতি পুরুষের দৈহিক মিলনের আগে পিঁপড়ের কামড় খাওয়া বাধ্যতামূলক! পিঁপড়ে দিয়ে কামড়িয়ে না নিলে দৈহিক মিলনের অনুমতি পায় না ওই উপজাতির পুরুষরা।
০৯. মাইনেনে
ইন্দোনেশিয়ার বিচিত্র এই রীতি সব আচার-অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে যাবে। এই অনুষ্ঠানের নাম হল, ‘মাইনেনে’ বা মরদেহ পরিষ্কারের অনুষ্ঠান। দেশটির দক্ষিণ সুলাওয়েসির তোরাজা গ্রামে এই রীতি প্রচলিত। এই প্রথা অনুসারে, প্রতিবছর মৃত স্বজনদের কবর থেকে তুলে মরদেহ পরিষ্কার করা। তারা শুধু মৃতদেহটিকে পরিষ্কারই করে না, বরং মরদেহকে নতুন কাপড় পরিয়ে, যেখানে তিনি মারা গিয়েছিলেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সোজাপথে আবার ফিরিয়ে আনা হয় কবরে। এ গ্রামের লোকেরা মারা যাওয়ার পর বিশেষ উপায়ে তাদের মমি করে সমাহিত করা হয়। মমি করে রাখার ফলেই বহুদিন পর্যন্ত মরদেহ অনেকটা অবিকৃত অবস্থায় থাকে। প্রতিবছর আগস্ট মাসে চলে এই মরদেহ পরিষ্কারের রীতি। গ্রামবাসীর বিশ্বাস, এতে করে মৃত ব্যক্তির আত্মা আবার গ্রামে ফিরে আসে।
১০. অগ্নি পরীক্ষা
চীনের বেশ কিছু প্রদেশে এই প্রথাটি চালু রয়েছে। এই প্রথা অনুসারে একজন স্বামী যখন তার নববধুকে নিয়ে গৃহে প্রবেশ করে সেসময় স্বামী স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে জ্বলন্ত কয়লার উপরে হেঁটে যেতে হয়। একজন মহিলার বাচ্চা প্রসবের যাতনা কেমন হয় তা স্বামীকে উপলব্ধি করানোর জন্য অদ্ভুত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানকার লোকদের বিশ্বাস এই প্রথার ফলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক দৃঢ় এবং দীর্ঘ হয়।
তথ্য ও ছবি : ইন্টারনেট