বরযাত্রী এলে হবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, এর আগেই বিয়ে পণ্ড – News Portal 24
ঢাকাWednesday , ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

বরযাত্রী এলে হবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, এর আগেই বিয়ে পণ্ড

নিউজ পোর্টাল ২৪
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১ ৯:০৪ অপরাহ্ন
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক:: স্কুলের প্রত্যয়ন অনুযায়ী তারিন আক্তারের বয়স ১৬ বছর। কিন্তু পরিবার নকল জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে বয়স বাড়িয়ে তারিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ খবর জানতে পেরে প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সেই বিয়ের আয়োজন পণ্ড করে দেয়।

বুধবার (২২ সেপ্টম্বর) দুপুর দুইটার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে চলছিল এই বাল্যবিয়ের আয়োজন।

তারিন আক্তার ওই গ্রামের দুলাল ফকিরের মেয়ে। স্থানীয় রসুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘এক উপজেলায় ৬০০ বাল্যবিয়ে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর সারা দেশে ব্যাপক আলোচনায় আসে শরণখোলা।

সেই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে তদন্তও শুরু করেছে প্রশাসন। ঠিক সেই মুহূর্তে আরো এক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের খবরে নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দেয়।

সরেজমিন ওই বিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে বিয়ের গেট সাজানো। বাড়ির ভেতরের প্যান্ডেলে অতিথি ও বরের আসন তৈরি করা। রান্নাবান্নাসহ সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন। শুধু বরযাত্রী আসার অপেক্ষা। বর এলেই হবে কিশোরী তারিনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

এমন খবর পেয়ে বর আসার আগেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুজ্জামান খান, রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন ওই বাড়িতে হাজির হন। তবে, প্রশাসনের লোকজন আসার খবর জানতে পেরে মেয়ের বাবা দুলাল ফকির আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যেমে মেয়ের মা শিরিন বেগমকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে বার‌্যবিয়ের আয়োজন বন্ধ করেন ইউএনও। এ সময় শিরিন বেগম তার মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দেন।

বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া তারিন আক্তার বলে, আমাকে স্থানীয় বখাটে ছেলেরা বিরক্ত করে। মোবাইলে আজেবাজে কথা বলে। মা-বাবা গরিব। তাই প্রতিবাদ করতে পারেন না তারা।

এ কারণে আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আমি নিরাপত্তা পেলে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই।

মেয়ের মা শিরিন বেগম বলেন, মোরা গরিব মানুষ। মাইয়াডারে বখাইড্যা (বখাটে) পোলাপানে জ্বালাতন করে। কেউর কাছে কইতেও সাহস পাই না। মোবাইলেও হুমকি দেয় পোলাপানে। তাই মানইজ্জতের ভয়তে মাইয়ার বিয়া ঠিক করতে বাইধ্য ওইছি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বিএসসি বলেন, নিরাত্তাহীনতা, অসচেতনতা এবং দরিদ্রতার কারণে গ্রামের মেয়েদের কিশোরী বয়সেই বিয়ে হচ্ছে। তাছাড়া, অল্প বয়সে হাতে মোবাইল তুলে দেওয়াও এই বাল্যবিয়ের অন্যতম একটি কারণ।

মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং ইন্টারনেটের নানামুখী ব্যবহার শিক্ষার্থীদের কোমল মনে এর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমীন বলেন, বাল্যবিয়ের গুঞ্জন একদিন আগে শুনতে পাই। তখনই ইউএনও স্যারকে বিষয়টি জানিয়ে রাখি। এখন থেকে আমার ওয়ার্ডে একটি বাল্যবিয়েও আর হতে দেব না। তারিন ও তার পরিবারকে সবধরণের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, ‘করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের নিয়ে অনিশ্চয়তায়র মধ্যে পড়ে যায়। যার ফলে, তাদের মেয়েদের গোপনে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু,ভবিষ্যত লাভের আশায় অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।’

উপজেলা মাদ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুজ্জামান খান বলেন, করোনার বন্ধে বহু শিক্ষার্থীর বিয়ের খবর পেয়েছি। গত দেড় বছরে কি পরিমাণ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে তার তথ্য চেয়ে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) খাতুনে জান্নাত বলেন, পরিবার চালাকি করে বয়স বাড়িয়ে মেয়েটিকে অল্প বয়সে বিয়ে দিচ্ছিল। সময় মতো এসে পড়ায় রক্ষা পেল মেয়েটি। পরবর্তী উপজেলার কোথাও যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে সেব্যাপারে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, কাজী, গ্রামপুলিশ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রত্যেক পাড়ামহল্লা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভা আহবান করা হয়েছে।

ইউএনও আরো বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শরণখোলার বাল্যবিয়ে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেই রিপোর্টের তদন্ত চলমান রয়েছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ।