ঢাকাTuesday , ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

টাকায় পাগল এক চেয়ারম্যানের কান্ড!

নিউজ পোর্টাল ২৪
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১ ৯:৩০ অপরাহ্ন
Link Copied!

সাকিব আহমেদ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ): টাকা, টাকা, টাকা। সরকারি ঘরের তালিকায় নাম লেখাতে টাকা, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য টাকা, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা। সব কিছুতেই শুধু টাকা। তার কাছে সবার আগে টাকা।

যার কথা বলা হচ্ছে তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই সকলের কাছে ভোট চেয়েছিলেন। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর সব ভুলে গেলেন।

গত পাঁচ বছর চেয়ারম্যান থাকার সময় টাকা ছাড়া কোন কাজ করেননি তিনি। এজন্য একবার সাময়িক বহিষ্কারও হয়েছিলেন। তবে এতেও লজ্জিত হননি। একই কাজ করেছেন পুন:পুন।

প্রবাদ আছে, “কয়লা যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে” ও “কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না”। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেনের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। তার অপকর্মের ঘটনা নিয়ে বারবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

ঘটেছে মারামারির মতো ঘটনা। চেয়ারম্যান থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হয়েছেন। তবে শোধরাননি তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের কয়েকজন জানান, সরকারি প্রত্যেকটা ঘরের জন্য কামাল চেয়ারম্যান ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে থাকেন। যারা তার দাবী পূরণ করেন কেবলমাত্র তাদেরকেই সরকারি ঘড় বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে।

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সালেহা জানান, আমি টাকা দিব না সে জোর করে ১৫ দিনের মধ্যে ঘর দিবে বলে আমার বাসায় এসে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর সরকারি ৩ লাখ টাকার ঘর দিবে বলে আবারও ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে।

ইশাখাবাদ গ্রামের পাল কৃষ্ণ রাজ বংশী জানান, তিন বছর আগে ভুয়া খাতায় নাম দেখিয়ে ঘর দিবে বলে তার পরিবার থেকে ৩৯ হাজার টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান। ঘর না দেয়ায় টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করছেন তিনি। ঘর দেয়া হবে বলে এখনো আশ্বাস দিচ্ছেন।

নয়াকান্দী গ্রামের বৃদ্ধা আলোজান জানান, চেয়ারম্যান ৬ হাজার টাকা নিয়ে ২ বছর তার পেছনে ঘোড়ানোর পর এবার বয়স্কভাতার কার্ড করে দিয়েছে।

মানিকনগড় পূর্ব পাড়া গ্রামের সাহেরা খাতুনের মেয়ে চায়না জানান, আমার মায়ের থেকে ২ বছর আগে কামাল চেয়ারম্যান এক হাজার টাকা নিয়েছে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিবে বলে। কিন্তু এখনও কোন কার্ড করে দেয়নি।

প্রতিবন্ধী রুবেলের মা আসমা বেগম জানান, চেয়ারম্যানের কাছে আমার বড় ছেলে প্রতিবন্ধী রুবেলের জন্য গেলে সে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেবে বলে ৩ হাজার টাকা নেয় কিন্তু সে কোন কার্ড করে দেয়নি।

তবে টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “আমি কোন টাকা পয়সা নেই নাই ৷ আমি একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান। সামনে নির্বাচন, কাজেই আমাকে সব দল থেকে থামানোর জন্য সবাই আমার পেছনে উঠে-পড়ে লেগেছে। আমি রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে যে কাজ করেছি সে কাজ ৫০ বছরেও হয় নাই।”

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।