ডেস্ক রিপোর্ট:: ‘মাগো, মা… ওরা আমার আব্বুকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলছে।’ এভাবেই বাড়িতে এসে কেঁদে কেঁদে বাবার মৃত্যুর সংবাদ পৌছান ছোট শিশু ইব্রাহিম।
সে বাড়ির পাশে কুড়াখাল শিশু সদন হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র। প্রতি জুমার মতো গত শুক্রবার বাবার সঙ্গে গোসল করে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। সেখানে আজান দেওয়ার বিষয় নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি করেন কুড়াখাল রেজভীয়া মতাদর্শের লোক।
দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করতে থাকে রেজভী মতাদর্শের লোক। তখন আবু হানিফ খান সুন্নত নামাজ পড়তে ছিলেন এমতাবস্থায় বুকের সামনে ও পেছন থেকে ছুরি বসিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এমনই নির্মম খুনের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন অবুঝ সন্তান।
এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আফরোজা আক্তার বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে একটি বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অজ্ঞাত নামা রয়েছেন আরো ৫ জন।
মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি শাহীন ভূইয়াকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। জুমার সংঘর্ষের পর এখন পর্যন্ত মসজিদ তালাবদ্ধ। সেখানে দুই দিন ধরে আজান ও নামাজ হয় না।
মসজিদের খতিব ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরের মাওলানা কামরুজ্জামান পলাতক রয়েছেন। মসজিদে এখনো রক্তের ছিটা দাগ, টুপি, ইট, পাথর ও গুলাইল মারার মারবেল পড়ে থাকতে দেখা যায়।
শনিবার আহত মুসল্লিদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘ইমাম সাহেব যে রেজভী ওটা আমরা জানতাম না। তিনি সাদা টুপি পরতেন। তবে তার কথা বার্তায় মাঝে মধ্যে বিভ্রান্ত হতাম। ইমাম বিভিন্ন সময় আজে বাজে ফতুয়া দিতেন। আমরা এগুলো নিয়ে বিতর্কে জড়াতে চাইনি। শুক্রবার ইমাম মুয়াজ্জিনকে বলেন, খুতবার আজান বাইরে দিতে। তখন আমরা বলি এই নতুন নিয়ম কেন?’
মসজিদ কমিটির সভাপতি মালেক মাস্টার কয় এখন থেকে আজান বাইরেই দিবে। এইটুকুর মধ্যে রেজভীর অনুসারীরা পকেট ও কোমর থেকে চাকু ছুরি বাহির করে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এসময় নামাজ পড়া অবস্থায় আবু হানিফ খানকে শাহীন ভূইয়া ও আবু কালাম (ওরফে ডিজে কালাম) দুই দিক থেকে ছুরি ঢুকিয়ে চাপ দেয়। এসময় মসজিদ রক্তে লাল হয়ে যায়। এই রক্তগুলো কমিটির সভাপতি মালেক মাস্টার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে নেয়। মুহূর্তে গেইট বন্ধ করে দেয়। তখন বাহির থেকে তাদের লোকেরা টেঁটা, রামদা, লোহার রড দিয়ে মসজিদ ঘেরাও করে আক্রমণ শুরু করেন।
কুড়াখাল হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ বায়োজিদ বলেন , আমরা নামাজ মাদরাসায় পড়ি। শুধু জুমার নামাজ পড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদে। শুক্রবার নামাজ পড়তে গেলে রেজভীর অনুসারীরা আমাকে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তাদের টেঁটা ও গুলাইলের আঘাতে মাদরাসার ছাত্রদের কয়েক জনের হাত পা কেটে গেছে। সবাই খুব ভয় পেয়েছে। ২০ জন ছাত্রকে তাদের অভিভাবকরা এসে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় মেম্বার নেছার সরকার বলেন, নিহত আবু হানিফ খান আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। গরুর চিকিৎসক হিসেবে তার ফার্ম দেখা শোনা করতাম। এই কারণে দিনে একবার এক সঙ্গে বসা হতো। তবে যারা কাজটি করেছে তারা একটু উগ্র। এক সময় আমিও রেজভী পন্থী ছিলাম। এখন তাদের সঙ্গে নেই। হানিফ খান আমার সঙ্গে চলে এই কারণে হয়ত ওরা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। নিহতের পরিবারে ৪টি শিশু সন্তান রয়েছে। লামিয়া (১২) ,ইব্রাহীম (১১), ফাতেমা (৫) , ইউসুফ ৮ মাসের শিশু।
খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে নিহত আবু হানিফের বাড়ি পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, স্থানীয় এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। নিহতের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময় হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। নিহতের পরিবারের পাশে সব সময় আছেন বলেও আশ্বস্ত করেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজনকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি। বাকী আসামিদের ধরার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম।