নিজস্ব প্রতিবেদক:: গোলাপগঞ্জে যৌতুকের জন্য বেদানা বেগম (৩৫) কে নির্যাতন করে দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত হামিদ আলীর ছেলে আখলিছ উদ্দিন (৫৫)।
আকলিছ উদ্দিন সহ ৩ জন ও অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ থানায় বিগত ১২ আগষ্ট ১০:৩০ মিনিটের সময় অভিযোগ করেছেন স্ত্রী বেদনা বেগম।
এরপর গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা না নিলে ১৩ আগষ্ট সিলেট পুলিশ সুপারের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেন বেদনা বেগম। তারই প্রক্ষিতে বিগত ১৯ আগষ্ট গোলাপগঞ্জ থানা মামলাটি এফআইআর করে। যার মামলা নং-২০/২২৭ তারিখ ১৯/০৮/২১ ইং,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সং-০৩) এর ধারা ১১(গ)/৩০।এই মামলার আসামীরা সবাই হাইকোর্টের জামিনে মুক্ত আছেন।
এরপর বিগত ০৭ সেপ্টেম্বর বেদানা বেগমের স্বামী আকলিছ উদ্দিন তার স্ত্রী-শ্বাশুড়ী সহ সাত জনকে অভিযুক্ত করে ডিআইজি অব পুলিশ বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে আসক্ত। আমার সারা জীবনের রোজগারকৃত অর্থ বেদানা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিকের মাধ্যমে আত্মসাৎ করার পায়তারা করছে। আমার টাকায় বাবার বাড়িতে ২ তলা বাসা নির্মান করে বেদানা বেগম। শুধু তাই নয় তার ব্যাংক একাউন্টের তার মা রিনা বেগমকে নমিনী প্রদান করে যাতে আমি কখনো আমার টাকা বলে দাবী করতে না পারি। পরবর্তীতে আমি কুয়েত থেকে এসে আমার টাকা পয়সার হিসাব চাইলে আমার স্ত্রী আমাকে প্রাননাশের হুমকি,তালাক প্রদানসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
এদিকে বেদনা বেগম জানান আমার স্বামী আমার ও আমার মা-ভাইদের সম্পর্কে যেসব ডিআইজি বরাবর যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তা সম্পুর্ন মিথ্যা বানোয়াট। আমার কারো সাথে পরকীয়া সম্পর্ক নাই। আমার উপর তাহার ও পরিবারের সকলের নির্যাতন ও যৌতুক দাবির প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দিতে তিনি এমন অভিযোগ দায়ের করেন। আমার সম্পর্কে অনলাইন নিউজ পোর্টালে বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে আমার স্বামী। তাছাড়া আমাকে স্বামীর বাড়ির থেকে বের করে দিতে আমার স্বামী আখলিছ উদ্দিন তার ভাই চান মিয়া, চান মিয়ার ছেলে শাহীন আহমদ, চান মিয়ার স্ত্রী আফসারা বেগম গত ১৪ আগস্ট আমাকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করেন।
আহত হয়ে আমি সু-চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসিতে তিন দিন চিকিৎসা শেষে ১২ আগস্ট গোলাপগঞ্জ থানায় আখলিছ উদ্দিনসহ ৪ জনকে আসামি করে একটি এজাহার দাখিল করি। এ ঘটনায় মামলা না হওয়ায় সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করি।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, আখলিছ উদ্দিনের দুইটি সন্তান রয়েছে। মো. ইয়াছিন বেগম (১১), রুহান (৬)। আখলিছ উদ্দিন কুয়েতে যাওয়ার জন্য তার পিতার কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা নেন। কুয়েত থাকা অবস্থায় ঘর নির্মাণের জন্য আরো পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করলে বিষয়টি আমার পিতা জানার পর তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। তাতে ক্ষান্ত না হয়ে তার ভাইদের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনে সে দেশে আসলে টাকা দিতে হবে বলে জানায়।
এর আগে তার ভাইয়েরা ও টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি ও মারধর করলে গত বছর থানায় অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে চরম মানবের দিনাতিপাত করছি। আমার স্বামী আমাক ও আমার সন্তানদের কে ভরপোষন দেয় নি। বরং আমাকে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমান না দিয়ে পরকীয়া প্রেমের মিথ্যা অভিযোগ তুলে সংসার নষ্ট করার পায়তারা করছে। আমার দেওয়া থানার অভিযোগ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এরকম কৌশল অবলম্বন করছে।
আমি আমার সংসার চাই। মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগের কারনে আমার সাজানো সংসার নষ্ট করতে চাইনা। আমাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন ও আমার অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের সকল মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এব্যাপারে বেদানা বেগমের দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সুরঞ্জিতের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া মামলার সকল আসামি মহামান্য হাইকোর্টের জামিনে আছেন।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশীদ চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মামলায় জটিলতা আছে এই ঘটনার সময় বেদানা বেগমের স্বামী দেশে ছিলেন কি না দেখতে হবে। তবে মামলার তদন্ত চলছে, সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।