অনলাইন ডেস্ক:: তিতা স্বাদযুক্ত করলা সবার পছন্দ না হলেও এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। করলা সাধারণত আমরা ভাজি ও তরকারি হিসেবে খেয়ে থাকি। কিন্তু এতে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছে, তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আজ আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে করলার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানব।
এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে এর পুষ্টিগুণ বর্ণনা করেছেন পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম জ্যোতি। তিনি বলেন, করলায় শরীরের প্রায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিনস ও মিনারেলস বিদ্যমান। করলায় রয়েছে পালং শাক থেকে দ্বিগুণ ক্যালসিয়াম এবং কলা থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে পটাসিয়াম, যা ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়াম উভয়ের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। সাধারণত পটাসিয়াম শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত এবং হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এ ছাড়া যাদের স্কিন ডিজঅর্ডার রয়েছে, অথবা অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য করলার রস অত্যন্ত উপকারী।
পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উত্তম খাবার করলা। করলা রক্তে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্ট বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় করলা রাখা জরুরি। এটি গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া করলায় বিদ্যমান ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যা সাহায্য করে। তা ছাড়া করলার ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় করলা, করলা ভাজি বা যে কোনও ভাবে হোক, খাদ্যতালিকায় করলা রাখুন।
পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেমের পরামর্শ, মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত করলাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। প্রতিদিন দুটোর বেশি করলা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর গর্ভবতী মায়েরা অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ করলা খেতে পারবেন। করলা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।
এ ছাড়া করলায় রয়েছে ব্রকোলির চেয়েও বেশি পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন। বিটা-ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি এবং চোখের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান।
করলার জুসের গুণাগুণ:
১. ১০০ গ্রাম করলায় ক্যালরি মাত্র ১৭! তাই শরীরে ক্যালরি গ্রহণ না করে দ্রুত ওজন কমাতে নিয়মিত করলার জুস খেতে পারেন।
২. স্বাদে তিতকুটে হলেও এতে আছে ভিটামিন এ, বি ও সি।
৩. করলার জুসে আছে বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইনসহ খনিজ উপাদান আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ম্যাগনেশিয়াম।
৪. ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় করলার ভেষজগুণও রয়েছে।
৫. অগ্ন্যাশয় ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে।
৬. করলার আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
৭. দাঁত ও হাড় ভালো রাখে।
৮. দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং চোখের সমস্যা সমাধানে করলার বিটা ক্যারোটিন খুবই উপকারী।
৯. করলার রস কৃমিনাশক।
১০. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
যেভাবে তৈরি করবেন জুস:
কাঁচা করলা নিয়ে টুকরা করে কাটতে হবে। বিচিগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ব্লেন্ডারে জুস তৈরি করে নিতে হবে। যাঁরা লবণ খান, হালকা লবণ দিয়ে নিতে পারেন।
তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় করলা রাখুন এবং শরীরকে সুস্থ-সতেজ রাখুন।