ঢাকাSaturday , ২৮ অগাস্ট ২০২১

জঙ্গল কাটতেই দৃষ্টিতে ভেসে উঠল সাড়ে চার শ’ বছরের প্রাচীন এক মসজিদ

নিউজ পোর্টাল ২৪
অগাস্ট ২৮, ২০২১ ৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

ছিল বন-জঙ্গল। দেখা যেত বড় শাখা-প্রশাখার নিচে মোটা শক্ত শিকড়। লোকমুখে প্রচলিত গাছটি অচিন। দেখতে বট-পাকুড়ের মতো। সামনে বড় মাঠ। স্থানীয় গৃহস্থ ও জোতদার ওই মাঠটি ঈদগাহের জন্য দান করেছেন। সেই থেকে ঈদগাহ। ওই জঙ্গল কাটতেই দৃষ্টিতে আসে পুরনো অবকাঠামো। উঁকি দেয় প্রাচীন মসজিদ। তারপর লোকজনের কাছে জায়গাটির সম্মান বেড়ে যায়। গ্রামের নাম বোরতা গুন্নিপাড়া। বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে কাহালু উপজেলা সদর। সেখান থেকে আরও প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে সদর ইউনিয়নের মধ্যে।

বিভিন্ন এলাকার মানুষ মসজিদটি দেখতে আসেন। অনেকই মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করে। মসজিদের ভিতরে নামাজের জন্য দশ জনের সঙ্কুলান হতে পারে। ভিতরের দেয়ালের কিছুটা অংশ খসে পড়েছে। মসজিদটি অনেক পুরনো দেখেই ধারণা পাওয়া যায়। প্রাচীন স্থাপনাগুলোর অনুরূপ এই মসজিদটি দেখে অনুমান করা যায় অন্তত সাড়ে চারশ’ বছর আগের।

ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি সংরক্ষণ করা হয়নি। স্থানীয়রা ধর্মীয় অনুভূতিতে (সেন্টিমেন্ট) মসজিদের আশপাশে পরিষ্কার রাখে। অনেকেই মসজিদের দুয়ারের কাছে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। গ্রামের গোলাম রব্বানী বললেন, মসজিদের ভিতরে পরিষ্কার রাখা হয়। মাঝেমধ্যে সুড়কি ভেঙ্গে পড়ে।

যে কারণে নামাজ আদায় করা যায় না। দেয়ালগুলো বিশেষ ধরনের ৫ ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি ছোট ইটে গাঁথা। অলঙ্করণ খসে পড়েছে। বাইরে থেকে দৃষ্টিতে তিনটি গম্বুজ। কাছে গিয়ে আরও একটি একটি আধোভাঙ্গা। দুটি গম্বুজ টিকে আছে। মই বেয়ে উঠে গম্বুজ পরিষ্কার করা হয়। মসজিদটির দৈর্ঘ্য আট মিটার ও প্রস্থ চার মিটার।

স্থাপনাশৈলী অনেকটা মুঘল কীর্তির মতো। ইতিহাসের সাক্ষ্য, মুঘল আমলে বগুড়া অঞ্চলে বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁর প্রশাসনিক নির্দেশ পালন করতেন দেওয়ানরা। ফৌজদার (বরকন্দাজ) তাদের সহায়তা করত। দেওয়ানদের কাছে প্রজারা এলাকার উন্নয়নে অনেক কিছু চাইত। পৌঁছে দেয়া হতো মুঘলদের কাছে। মুঘলদের নির্দেশে বিভিন্ন স্থানে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য গড়ে তোলা হয় ছোট-বড় মসজিদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ছোট-বড় মঠ মন্দির নির্মিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে মুঘল কীর্তি। কাহালুর গ্রামের ছোট মসজিদটি এমন একটি কীর্তি হতে পারে, এমনটি মনে করেন প্রবীণ ব্যক্তি ইতিহাস অনুসন্ধানী বগুড়ার কাটনারপাড়ার আব্দুর রহিম বগ্রা।

কাহালুর সমাজসেবী রেজাউল করিম জানালেন, জঙ্গল না কাটলে মসজিদ বোঝাই যেত না। দৃষ্টিতে ছিল বিরাট এক বৃক্ষ। কুসংস্কারের লোকজন বৃক্ষকে সামনে রেখে মনের আশা ব্যক্ত করত (কুসংস্কার)। মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ থাকায় মাঠটি পরিষ্কার রাখা হয়।

এই বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, মসজিদটির কথা তিনি শুনেছেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।