মো. জুয়েল চৌধুরী, স্টাফ রিপোর্টার:: বাঙালির আত্মপরিচয় রক্ষার প্রধানতম যে আন্দোলনটি ছিলো সেটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালে রক্তদিয়ে আমরা সেটি রক্ষা করেছিলাম। ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় সংখ্যাঘরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সংখ্যাঘরিষ্ঠতার চেয়ে জাতিগত সংখ্যাঘরিষ্ঠতা যে আরো গুরুত্বপূর্ণ সেটি তৎকালীন সময়ে এতো প্রকাশিত হয়নি। ৪৭ এর পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্থান পূর্ব পাকিস্থানের উপর যে সমস্ত বৈষম্য চাপাতে শুরু করেছিলো এর প্রধানতম একটি বৈষম্য ছিলো ভাষাকে উর্দূ করার প্রস্তাব।
পশ্চিম পাকিস্থানিরা বাঙালির সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে মোছার একটি গভীর ষড়যন্ত্র করেছিলো। এই ষড়যন্ত্রের প্রথম ধাপটি ছিলো ভাষাকে পরিবর্তন করে দেওয়া। কেননা, একটি জাতির নিজস্ব সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিল্পকে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে শেষ করতে হলে তার ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমকে পরিবর্তন করতে পারলেই মূলত সেটি সম্ভব। এ জন্য আমাদের বাঙলা ভাষাকে মুছে দিতে চেয়েছিলো হায়েনারা। আমরা আমাদের ভাষার দাবি রক্ষা করেছি।
বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতি বাঙালির ঐতিহ্য। এগুলো আমাদের নিজস্ব সম্পদ। এগুলো আমাদের আত্মপরিচয় দানের উদাহরণও বটে। এগুলোকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন আমাদের সংস্কৃতির নিয়মিত চর্চা। আমাদের শিল্পের চর্চা। শিল্প ও সংস্কৃতির নিয়মিত চর্চার মাধ্যমেই আমরা আমাদের আত্মপরিচয় দানের উদাহরণগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারি।
ইতিহাস বলে, যতবার আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কালোশক্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ঠিক ততবার বাঙালিও তার শিল্প-সংস্কৃতিকে রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে। রমনার বটমুলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে মৌলবাদী – সাম্প্রদায়িক শক্তি কর্তৃক বোমা হামলার ঘটনা সকলেরই জানা। মৌলবাদী – সাম্প্রদায়িক শক্তির মাথাচড়া আমাদের ভিত নাড়াতে পারেনি। বরং পহেলা বৈশাখ উদযাপন তৃনমূল পর্যায়েও পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সংস্কৃতি চর্চায় নিয়ামক ও প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করছে। যদিও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা সহ নানান সংকটের দরুণ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে পারছে না। এরপরেও চেষ্টা থেমে নেই। নাটক, গান, আবৃত্তি, পুঁথি সহ নানান কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখার অন্তপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে সংগঠনগুলো।
কালের আবর্তে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকেও শক্তিশালী হওয়া এখন সময়ের দাবি। মৌলবাদী- সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তেমনিভাবে ভিত শক্ত করছে তেমনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনকেও ভিত শক্তিশালী করা প্রয়োজন৷ সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে প্রতিহত করতে অবশ্যই সাংস্কৃতিক বিপ্লব জরুরি। এবং এই সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সংগঠন জরুরি।
নতুন প্রজন্মকে বিস্তৃত পরিসরে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় যুক্ত করা একটি অন্যতম কাজ। কেননা প্রাণশক্তি তরুণেরা, প্রজন্মেরা। নেতৃত্বের লালসা ও লোভ যখন চারিপাশে মরিয়া হয়ে সুস্থ সমাজ বাস্তবতার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে ঠিক তখনই প্রজন্মকে শেখাতে হবে। লালন করা ও ধারন করা শিখাতে হবে সংস্কৃতিকে। সংস্কৃতির আগ্রাসনে লিপ্ত আগ্রাসীদের ঠাঁই তখন হবে না।
এভাবেই চালিয়ে যেতে হবে আমাদের সংস্কৃতির সংগ্রাম। এভাবেই আনতে হবে সাংস্কৃতিক জাগরণ।
লেখক:
এসোসিয়েটস্ সদস্য
এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ।