ঢাকাSaturday , ৩১ জুলাই ২০২১

সুনামগঞ্জে যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা

নিউজ পোর্টাল ২৪
জুলাই ৩১, ২০২১ ৭:৩১ পূর্বাহ্ন
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট:: বিয়ের কেবল সাত থেকে আট মাস পেরুলো আর এটুকু সময়ের মধ্যেই স্বামীর মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার হতে হলো মাইফুল নেছা (২৩) নামের এক গৃহবধূকে।

অভিযোগ উঠেছে, ‘যৌতুকের দাবি না মেটানোর কারণে হাত পা ও মুখ স্কচটেপ লাগিয়ে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন স্বামী, শ্বশুর ও দুই দেবর মিলে। পরে এ ঘটনা প্রতিবেশীরা দেখে ফেলায় নদীর পাড় থেকে হাত-পা ও মুখে স্কচটেপ বাঁধা অবস্থায় ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেন।’

ঘটনাটি শুক্রবার (৩০ জুলাই) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদালার পাড় গ্রামের।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রায় আট মাস আগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চৌধুরীপাড়া গ্রামের সাজিদুলের ছেলে আবু তাহের জান্নাতের(২৮) সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদলার পাড় গ্রামের কারী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে মাইফুল নেছার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।বিয়ের পর স্বামী আবু তাহের জান্নাত পার্শ্ববর্তী ভোলাখালি গ্রামের এক ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সংসার করছিল এবং ওই গ্রামেই আবু তাহের জান্নাতের দুই সহোদর জাকির (২৫) ও বাবুল (২২) এবং তার বাবা মিলে পোল্ট্রি মোরগের ব্যবসা শুরু করেন।’

বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী আবু তাহের জান্নাত যৌতুক দাবি করলে কয়েক ধাপে যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা পূরণ করেন হতদরিদ্র মেয়ের পরিবারের লোকজন।

গত মাস খানেক ধরে স্ত্রীকে আবারো যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্ত্রীর উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে সে। যা প্রতিদিনকার নিয়মে পরিণত হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে মাইফুল নেছা তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাইফুল নেছা প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে গেলে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা আবু তাহের জান্নাত, তার দুই সহোদর ও বাবা মিলে মাইফুল নেছাকে জোর করে তোলে নিয়ে হাত পা ও মুখে স্কচ বেঁধে সড়কের পাশে ভাঙ্গার খাল নদীতে নিয়ে যায়।

একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা ঘটনাটি টের পেয়ে নদীর পাড়ে এগিয়ে আসলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে প্রতিবেশী কয়েকজন যুবক মাইফুল নেছাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য তাকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা জানতে পেরে পেয়ে প্রতিবেশী মো. সুমন আহমেদ ৯৯৯ করেন। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

মাইফুল নেছার ছোট ভাই মো. এবায়দুল্লাহ(২০) বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই তারা আমার বোনকে নির্যাতন করছিল। যৌতুকের ৫০ হাজার টাকার দাবি মেটানোর পরও নির্যাতন বন্ধ করেনি। আজ তারা হাত পা বেঁধে আমার বোনকে নদীতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল।’

অভিযুক্ত আবু তাহের জান্নাতের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং ওই গৃহবধূকে চিকিৎসার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’