অনলাইন ডেস্ক:: বিশ্বে যেসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরা গর্ব করতে পারে তার অন্যতম হলো মসজিদ। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা-কে বহির্বিশ্ব চেনে মসজিদের নগরী হিসেবে।
রাজধানী ঢাকার বয়স ৪০০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মসজিদের নগরী হিসেবে ঢাকার বয়স আরও বেশি, ৫৬০ বছর। বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক ইসলামিক নিদর্শন। বাঙালির ইতিহাস হাজার বছরের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই ছড়িয়ে ছিটিতে আছে নান্দনিক, ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক নানান মসজিদ।
বাংলার ১২৭৫ (ইংরেজি ১৮৬৮; হিজরি ১২৮৫) সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ। মসজিদটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন দারোগা আমিনউদ্দীন আহম্মদ।
এই কারণে শুরুতে এটি পরিচিত ছিলো ‘দারোগা মসজিদ’ নামে। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু ইতিহাস আর ঘটনার সাক্ষী। আমিনউদ্দীন আহম্মদের ছেলে মইজ উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন মসজিদের প্রথম মোতোয়ালি।
বংশ পরম্পরায় মসজিদটির নির্মাণ ও সংস্কার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। খিদির বক্স-কাদের বক্স নামে দুই সহোদর এবং মইজ উদ্দিনের পরিবার। কাদের বক্সের দৌহিত্র সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হামিদুর রহমান ১৯৬৮ সালে মিনারসহ মসজিদটির বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন।
পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবং মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার করেন অধ্যাপক হামিদুর রহমানের ছেলে বর্তমান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ (Doleshwar Hanafia Jame Mosque) যাকে বলা হয় আয়না বা কাচেঁর মসজিদ। এটি ঢাকার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপত্যের দুর্দান্ত স্থাপত্যশৈলী, গঠন এবং সৌন্দর্যের।
ব্যতিক্রমধর্মী নান্দনিক স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত মসজিদের নকশা করেছেন আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রাপ্ত স্থাপত্যবিদ কাসেফ মাহবুব চৌধুরী। মূল পুরাতন মসজিদের সাথের বর্ধিত অংশ অত্যন্ত চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে।
মসজিদটি এমন ভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে, যার ভেতরে বসেই যেমন ঝকঝকে রোদের দেখা মিলবে, তেমনি ঝুম বৃষ্টিতে এখানে বসেই বর্ষার দারুন আবহ উপভোগ করা যাবে। ভবনটিতে এমন ভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার ফলে যে কোন ঋতুতেই মসজিদটির ভিতরের তাপমাত্রা থাকবে প্রায় অপরিবর্তিত।
এছাড়াও আলো প্রবেশের পথ এবং ভবনের ছাদের বৈচিত্র্য নিমার্ণ শৈলীর কারণে আয়না ছিদ্র করে আলো প্রবেশের ব্যাবস্থা এবং একই সাথে আলো নান্দনিক আলো ছায়ার খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দিনের বেলা এখানে কখনোই কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন পরবে না নান্দনিক এই মসজিদ ভবনটি। মসজিদটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি, কোন রঙ বা প্লাস্টারের কাজ এখানে করা হয়নি। লাল ইটের ছিদ্রযুক্ত দেয়াল তৈরী করা হয়েছে যা প্রাচীন মসজিদের জালির প্রতিনিধিত্ব করছে। মিনার, গম্বুজ ও নানান নকশার ভিত্তিতে তৈরি এক অনন্য নান্দনিক দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ।