শাহাদাত হোসেন রাসেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি:: সাত মাস পর জানা গেল ফেনীর সোনাগাজীতে ধ’র্ষণে আ’ত্মহত্যাকারীণীর গর্ভের সন্তানের পিতা কে? এর দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন সেই পিতা।
জীবদ্দশায় গর্ভের সন্তানের স্বীকৃতির জন্য গর্ভের সন্তানসহ আ’ত্মহননকারী কিশোরীর স্বীকৃতি না মিললেও অনাগত সন্তান নিয়ে মৃত্যুর সাত মাস পর জানা গেল সেই সন্তানের পিতা হলেন আবু ইউসুফ। এবার কিশোরী স্কুল ছাত্রীর আত্মা শান্তি পাবেতো? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। সাত মাস পর ক্লু-লেস স্কুল ছাত্রী ধ’র্ষণ ও আ’ত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার এক আসামিকে গ্রেফতার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তার নাম আবু ইউসুফ (৩০) ওরফে নয়ন, মায়ন ও বড় মিয়া। সে এক কন্যা সন্তানের জনক এবং উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের বগাদানা গ্রামের সাহাব উদ্দিন খোনারের ছেলে। পেশায় একজন সিএনজি অটোরিক্সা চালক। বুধবার রাতে তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ খানের আদালতে সে নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পুলিশ ও স্কুল ছাত্রীর পরিবার জানায়, উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মঙ্গলকান্দি গ্রামের নূর আমিনের পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত সিএনজি অটোরিক্সাযোগে বহন করত বগাদানা ইউনিয়নের আবু ইউসুফ ওরফে নয়ন, মায়ন ও বড় মিয়া। সে সুবাধে মঙ্গলকান্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ও নূর আমিনের কন্যা বিবি কুলসুম (১৫) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তাকে একাধিকবার ধ’র্ষণ করে সে। এতে ওই ছাত্রী চার মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। ইউসুফকে বিয়ে করার জন্য বললে সে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর দুপুরে বক মারার বিষ জাতীয় ট্যাবলেট খেয়ে ওই ছাত্রী নিজ ঘরে আ’ত্মহত্যা করে। বিষয়টি তখনো তার পরিবারের সদস্যরা জানতো না। কোন প্রকার মামলা-মকাদ্দমা ছাড়াই লাশ দাফন করতে চেয়েছিলেন তারা।
ঘটনাটি রহস্যজনক হওয়ায় একই দিন বিকালে পুলিশ ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
ছাত্রীর পিতা নূর আমিন বাদী হয়ে একই দিন রাতে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৯, তাং- ২৮-১১-২০২০খ্রিস্টাব্দ। পরদিন ২৯ নভেম্বর ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে তাকে পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়।
ময়না তদন্তের পর প্রতিবেদনে জানা যায়, ওই স্কুল ছাত্রী ৪মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা এবং গর্ভের সন্তানটি ছিল ছেলে। ঘটনার ১২ দিন পর ওই ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ধ’র্ষণ ও আ’ত্মহত্যায় বাধ্য করার অপরাধে মামলা দায়ের করেন।
সোনাগাজী মডেল থানার মামলা নং- ১১, তাং- ১০-১২-২০২০ খ্রিস্টাব্দ। পুলিশ অনুসন্ধানে নেমে এলাকার ও বাইরের সন্দেহভাজন পাঁচ যুবকের ডিএনএ পরীক্ষা করান। পাঁচ যুবকের মধ্যে ইউসুফের ডিএনএ’র সাথে মিলে যায় কুলসুমের গর্ভের সন্তানের ডিএনএ।
ময়নাতদন্তে তাঁর গর্ভে থাকা চার মাসের সন্তানের পিতা হিসেবে আবু ইউসুফ, প্রকাশ নয়ন, মায়ন ও বড় মিয়াকে সিআইডি’তে সনাক্ত করা হয়।
সে সূত্রে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে সে স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।