ডেস্ক রিপোর্ট:: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী ভিলেজারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, স্থানীয় সৈয়দ আলমের ৫ সন্তান শুক্কুর, জুবাইর, রহিম, কোহিনুর ও জাইনবা।
টেকনাফের নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী জানান, ‘সৈয়দ আলমের বাড়ি পাহাড়ের পাদদেশে। ভারি বৃষ্টিতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে বাড়ির ওপর। মাটিচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান সৈয়দ আলমের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। এ সময় আহত হন সৈয়দ আলম ও তার স্ত্রী।’
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের নারী-শিশুসহ ৫ জন এবং হোয়াইক্যং ও মহেশখালীতে স্থানীয় আরো দু’জন নিহত হয়েছেন।
এর ১৫ ঘণ্টার মাথায় হ্নীলার পাহাড়ি এলাকায় ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি চাপায় একই পরিবারের নারী-পুরুষসহ ৫ জনের মৃত্যু হলো।
এদিকে গত সোমবার বিকাল থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভাসছে কক্সবাজার জেলার ৯ উপজেলার শতাধিক গ্রাম। টানা বৃষ্টি ও সেইসাথে পূর্ণিমার জোয়ারে নদী-সাগরের পানি বেড়ে যাওয়া ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের অন্তত ৫ লাখ মানুষ।
পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলো হলো- কক্সবাজার সদরের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল,
রামুর ৫ ইউনিয়ন, উখিয়ার ৫ ইউনিয়ন, ঈদগাঁওয়ের ৫ ইউনিয়ন, চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও কুতুবদিয়ার মহেশখালি বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার শত শত গ্রাম, রাস্তাঘাট, স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পাহাড়ি ঢলে বিধস্ত হয়েছে দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সোমবার রাত থেকে কক্সবাজার জেলায় টানা বর্ষণ চলছে। এতে জেলার ৯টি উপজেলাতেই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালিতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল সমিতিপাড়া, পেশকার পাড়া ও আলীর জাহালের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া খুরুশ্কুল, পিএমখালি, মাছুয়ারঘোনা পাহাড়ি প্লাবনে তালিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানি প্রবেশ করে ঈদগাঁওয়ের জালালাবাদ, ঈদগাঁও, পোকখালীর দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জানা গেছে, ঈদগাঁও বাজারের ডিসি সড়কসহ প্লাবিত হয়েছে জালালাবাদ ইউনিয়নের মাছুয়াপাড়া, বাজারপাড়া, বাঁশঘাটা, তেলীপাড়া, দঃ এবং পূর্ব লরাবাগ, ছাতিপাড়া, মিয়াজীপাড়া, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনা, মাইজপাড়া, কানিয়াছড়া, জাগিরপাড়া, সাতঘরিয়াপাড়া, দরগাহপাড়া, লালসরিপাড়া, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ইউছুফেরখীল, ওয়াহেদের পাড়া, খোদাইবাড়ী, রাবার ড্যাম, চরপাড়া, পোকখালী ইউনিয়নের মধ্যম পোকখালী এলাকার কয়েকটি গ্রাম।
এ বিষয়ে পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, ইউনিয়নের নাছির মৌলভীর বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধের দু’শ’ ফুটেরও মতো অংশ ভেঙে গিয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ঈদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম জানান, ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম পানির নিচে। যেকোনো মুহূর্তে ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ঈদগাঁওর সাথে ঈদগড়ের সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
এদিকে, উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং, রত্নাপালং, রাজাপালং ও পালংখালী। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পালংখালী ইউনিয়নের মানুষ।
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে উখিয়ার জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং, রত্নাপালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পালংখালী ইউনিয়নের প্রায় বাড়িঘর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাহাড় ধসে ১৩টি বাড়ি ভেঙে গেছে। জালিয়াপালং, রত্নাপালং ও রাজাপালংয়ের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস ও স্থাপনায় পানি ডুকে গেছে।’
এদিকে, মহেশখালীতে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো বাজারের শতাধিক দোকান। রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির পাড়া ও হরিয়ার ছড়া গ্রামে। দুটি গ্রামেই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি সহায়তার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’
এছাড়াও ভারী বর্ষণে টেকনাফ পৌরসভাসহ হ্নীলারি রঙ্গিখালী জেলেপাড়া, মৌলভীবাজার হোয়াইক্যংয়ে উলুবনিয়া, উনচিপ্রাং নয়াবাজার ও খারাংখালীর বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষয়িক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পারভেজ চৌধুরী।
মহেশখালি-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘মহেশখালির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘উখিয়ার প্লাবিত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে তাদের রাতের খাবারসহ শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ইউএনওদের নিদের্শনা দিয়েছি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার করার জন্য।’