ডেস্ক রিপোর্ট:: ঈদের পর টানা ১৪ দিনের লকডাউনে চাল, ভোজ্যতেল ও চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদনের কারখানা খোলা থাকবে।
রোববার (১৮ জুলাই) রাতে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখা হবে কি না সে বিষয়ে রোববার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। ঈদের আগে সোমবার শেষ কর্মদিবসে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানা গেছে।
তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা জানিয়েছেন, ‘লকডাউনে কারখানা খোলা থাকবে নাকি বন্ধ রাখা হবে এ নিয়ে রোববার পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো বার্তা সরকারের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি। সোমবার ঈদের আগে শেষ কর্ম দিবস। এখনও শ্রমিক এবং উদ্যোক্তারা জানেন না কত দিন কারখানা ছুটি থাকবে। এ নিয়ে দ্বিধা সংশয়ে আছেন তারা। বিদেশি ক্রেতারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রোববার দিন ভর ই-মেইল এবং ফোনে বিভিন্নভাবে উদ্যোক্তাদের কাছে সর্বশেষ খবর জানতে চেয়েছেন তারা। এর মধ্যে রপ্তানি আদেশ স্থগিতের ঘটনাও বাড়ছে। রোববার পর্যন্ত অন্তত ১৫০ কারখানার রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। আলোচনার পর্যায়ে থাকা রপ্তানি আদেশ প্রক্রিয়াও এক রকম বন্ধ।’
এদিকে, আগামী ১ আগস্ট পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হতে পারে; এমন একটি খবর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজিএমইএর বরাত দিয়ে এ বিষয়ে অনেকের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) আসে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন এসএমএস পাঠানো হয়নি।
কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘তারা এসএমএস পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তারা এসএমএস পাননি, তবে এরকম খবর শুনেছেন। অ্যাডাম অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম মুকুল সমকালকে বলেন, তিনি এসএমএস পেয়েছেন। তবে বিষয়টি তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।’
এদিকে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘তারা কোনো ধরনের এসএমএস পাঠান নি। লকডাউনে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে সার্কুলার জারি না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই বলা যাচ্ছে না।’
সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘পচনশীল পণ্যসহ বিভিন্ন খাতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারখানা আছে, যা চালু রাখা ছাড়া উপায় নেই। এসব কারখানা চালু রাখার বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন। কারখানা চালু রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করেন তিনি।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘কোরবানির ঈদের সময়ে চামড়া শিল্প খোলা রাখা ছাড়া উপায় নেই। বিশেষ করে ট্যানারিগুলোতে ঈদের দিন থেকেই সংরক্ষণ করা হয়। এবার কারখানা বন্ধ থাকলে চামড়া কোথায় যাবে? এছাড়া মৎস্য ও দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাতের কারখানা বন্ধ করার সুযোগ নেই। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতের কারখানা বন্ধ রাখলে রপ্তানি বিঘ্নিত হবে। অনেক রপ্তানি আদেশ হারাতে হবে।’
মো. জসিম উদ্দিন আরো যোগ করেন, ‘এমন অনেক কারখানা আছে, যা কখনও বন্ধ করা হয়নি। কিছু কারখানা আছে বন্ধ করলে আবার চালু করতে এক মাস লাগবে। এ ক্ষেত্রে নিত্যপয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বড় সংকট তৈরি হবে। বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা খোলা রাখা জরুরি। যাতে কোনোভাবেই খাদ্যপণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়।’
তিনি বলেন, ‘এমন ধরনের অনেক কারখানা আছে যেখানে সব বন্ধ থাকলেও বর্জ্য পরিশোধনাগার চালু রাখতে হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন তিনি।’
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের ৫টি সংগঠনের নেতারা বৈঠকে করে ঈদের পর লকডাউনে কারখানা খোলা রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেন তারা।
চিঠিতে সংগঠনগুলো বলেছে, ‘টানা ১৪ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে রপ্তানি আদেশ হারাতে হবে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় পরিস্থিতি প্রায় করোনার পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। সব মার্কেট, দোকান-পাট ও ব্র্যন্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর ফ্লোর খুলে দেওয়া হয়েছে। পোশাকের এখন ব্যাপক চাহিদা। এ অবস্থায় কারখানা বন্ধ থাকলে ক্রেতারা প্রতিযোগি অন্য দেশে চলে যাবে।’
সূত্র: সমকাল