অনলাইন ডেস্ক:: টানা ১৭ দিন পর গণপরিবহণ বন্ধের পর বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ভোর থেকে। সকাল থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় লেগেছে। এদিকে যাত্রীবাহী পরিবহনে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া নেওয়ায় আপনজনের সঙ্গে কোরবানির ঈদ পালন করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছেন স্বল্প আয়ের মানুষরা।
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে আজ থেকে আট দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। আগামী ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহা। আর ২৩ জুলাই থেকে ফের লকডাউন শুরু হবে।
সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে দেখা যায়, বাসের ছাদ ও ট্রাকের ঢালায় বসে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতায়াত করছে নিম্ন আয়ের অসংখ্য মানুষ।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও মালবাহী কন্টেইনারে চেপে গার্মেন্টসকর্মী শরীফা খাতুন, শেফালি, শাহনুর রহমান এবং জামালসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাচ্ছেন।
গার্মেন্টসকর্মী শেফালি বলেন, ‘গার্মেন্টেসে কাজ করে যে বেতন পাই, তা দিয়ে বাড়ি ভাড়া ও সংসার খরচ চালানো যায় কোনো মতে। ঈদে বাড়ি ফিরতে বাড়তি খরচ করার মতো টাকা আমাদের কখনোই হয় না।’
নির্মাণ শ্রমিক সোবহান আলী বলেন, ১৫ দিন ধরে ঢাকায় কাজ করছি। মজুরি পেয়েছি সাড়ে ৬ হাজার টাকা। ওই টাকায় থাকা-খাওয়ার পর পরিবারের ঈদ খরচের জন্যও কিছু নিতে হবে। তাই অতিরিক্ত ভাড়া দেব কোথা থেকে। তাই প্রচণ্ড রোদ মাথায় নিয়ে যানজটের ভোগান্তির মধ্যেও ট্রাকেই বাড়ি ফিরছি।
মালবাহী কন্টেইনারে তাদের ভাড়া লেগেছে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। এছাড়াও হাজার হাজার নির্মাণ শ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর ঈদযাত্রার অন্যতম বাহন খোলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান অথবা বাসের ছাদ। তাঁদের সবার উদ্দেশ্য বাড়ি যাওয়া।
ঢাকায় তেজতুরী বাজারে একটি মেসে থেকে দিনমজুর হিসবে কাজ করতেন রফিক মিয়া। চলমান কঠোর বিধিনিষেধে কাজের সুযোগ কমে গেছে। একদিন কাজ জুটলে আরেকদিন জুটে না বলছিলেন তিনি। রফিক মিয়া বলেন, ‘ঢাকায় থাকলে তো না খেয়ে মরা লাগব। মেস বন্ধ, কাজ নেই, দোকানি বাকি দেয় না। এর চাইতে গ্রামে গিয়ে বাড়ির লোকদের সঙ্গে মরাই ভালো।’
হতদরিদ্র এসব শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ‘ঢাকা থেকে যেকোনো বাসে উঠলেই দিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। চন্দ্রা থেকে বগুড়া পর্যন্ত আসন বিহীন যেতে চাইলেও ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। আর ভালো বাসে যেতে হলে ভাড়া আরও বেশি। টাকা বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় চলতে হচ্ছে তাদের।’
তারা আরও বলেন, ‘দুর্ভোগ আর ভোগান্তি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আপনজনকে নিয়ে একসঙ্গে ঈদ করতে রোদ বৃষ্টি যাই আসুক, যানজটের কারণে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা যতই সময় লাগুক, আমাদের এভাবে বাসের ছাদে বা ট্রাকে করেই বাড়ি ফিরতে হবে।’
পাবনা থেকে সবজি নিয়ে আসেন ট্রাক চালক বাবুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফেরার সময় রাস্তায় অনেক লোক দাঁড়িয়ে থাকে। তারা নিয়ে যেতে অনুরোধ করে।আমরাও নিয়ে যাই। বিনিময়ে যাত্রীরা কিছু টাকা দেয়।’