ডেস্ক রিপোর্ট:: রাতের আঁধারে প্রত্যেকেই বোরকা পড়া। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘুরাফেরা করছেন। আবার কেউ কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সুযোগ বুঝে কারো সঙ্গে আলাপ করছেন কেউ কেউ। কিন্তু কারো বাসায় ফেরার তাড়া নেই। বরং রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছেন তারা। রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা গেছে, ‘রাজধানীর বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সংসদ ভবন এলাকায় প’তিতারা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করে। সুযোগ বুঝে খদ্দর নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায় তারা। এমন খবরের জন্য অনুসন্ধানে উঠে আসে অজানা অনেক তথ্যই।’
প্রতিদিন সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প’তিতাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সুযোগ বুঝে বাসযাত্রী ও সাধারণ মানুষকে তারা জিম্মি করে বেকায়দায় ফেলে হাতিয়ে নেয় টাকা ও মোবাইল। তবে ইজ্জতের ভয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে হয় ভুক্তভোগীদের।
শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করা প’তিতারা অফিস ফেরত যুবকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কেউ কেউ কথা বলেন। আবার কেউ কেউ এড়িয়ে যান। তবে কথা না বলেও কেউ কেউ বিপদে পড়েন। আর বললে তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘বোরকা পড়া নারী সিন্ডিকেট সদস্যরা উঠতি বয়সী যুবক ও তরুণদের টার্গেট করে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের ফাঁদে ফেলে কখনো রিকশায় আবার কখনো সিএনজিতে লিফট দেওয়ার কথা বলে আটকে টাকা পয়সা আদায় করে থাকে। এছাড়াও কখনো বিজয় সরণি এলাকায় আবাসিক হোটেল ও ফুটওভার ব্রিজের নির্জন এলাকায় নিয়ে ফাঁদে ফেলা যুবকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় টাকা পয়সা ও মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। ফার্মগেটে এমন অন্তত ২৫ নারীর একটি চক্র রয়েছে।’
তাদের পাতানো ফাঁদে প্রতিদিনই পা দিচ্ছেন অসংখ্য যুবক। মাঝে মধ্যে পুলিশ এসব নারীদের ধরপাকড় চালালেও ঘুরেফিরে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠে তারা।
এদিকে ওদের প্রতারণা শিকার অনেকেই লজ্জা ও বাসায় ফেরার তাগিদে কেউ হয়তো পুলিশে খবর দেয় না। তাছাড়া কতিপয় পুলিশ সদস্য এ প্রতারণার খবর জানলেও অজ্ঞাত কারণে ওই নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। তাছাড়া স্থানীয় পাতি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় প্রতারক নারী চক্রটি প্রতিনিয়তই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে।
এদিকে রাত ১২টার দিকে ফার্মগেট, ‘বিজয় সরণি ও আশপাশ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খদ্দেরের খোঁজে বোরকা পড়ে এখানে-সেখানে অপেক্ষা করছেন প’তিতারা। তাদের পাশেই সারি-সারি সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে। খদ্দের এসে প্রথমে দামাদামি করে। এরপর চূড়ান্ত হলে নিয়ে যায় সিএনজি করে। তাদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ মানুষকেও বিরক্ত করে। নিবি, লাগবে বলে বিভিন্ন ইশারা দেয় তারা। এতে অনেক পথচারীও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন।’
আবুল হোসেন (ছদ্মনাম) নামের এক যুবক জানান, ‘দীর্ঘদিন আগে ফার্মগেট এলাকায় জরুরী কাজে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় বোরকা পড়া এক নারীর ফাঁদে পড়তে হয় তাকে। এক পর্যায়ে সিএনজি করে তাকে নিয়ে যায় ওই নারী। বিজয় সরণি এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ও দামি একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তবে বেশি কথা বললে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভয়ে আবুল হোসেন নিঃস্ব হয়ে বাসায় ফিরেন।’
কামাল আহমেদ নামের এক পথচারী বলেন, ‘ওরা সুযোগ বুঝে ইশারা দেয়, নানান রকম অ’শ্লীল কথাও বলে।’
তাদের এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় আখি নামের এক পতিতার সঙ্গে।
তিনি জানান, ‘দীর্ঘদিন থেকে এই পেশায় জড়িত রয়েছেন। তবে তার পরিবারের সদস্যরা এসব কিছুই জানে না।’
তবে কিভাবে বাসা থেকে রাস্তায় আসেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি এই কথা বলে বাসা থেকে বের হই। পরে সকাল আটটার দিকে বাসায় ফিরে যাই।’
এদিকে রাজধানীর বিজয় সরণি, ফার্মগেট এলাকায় প্রকাশ্যে প’তিতারা অবস্থান করলেও সুখ নিদ্রায় রয়েছে প্রশাসন। তবে পুলিশকে ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফার্মগেট, বিজয় সরণি এলাকার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এমন অভিযোগ অনেক আগেই জানা গেছে। তবে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। প’তিতাদের গ্রেফতারে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযান শেষে আবারও চলে আসে তারা। তবে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলার কথা অস্বীকার করেন তিনি।’