ভাতার টাকা প্রতারক চক্রের অ্যাকাউন্টে, দুচিন্তায় মারা গেলেন বিনোদিনী – News Portal 24
ঢাকাTuesday , ২৯ জুন ২০২১
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. এক্সক্লুসিভ
  6. কৃষি ও কৃষক
  7. ক্যাম্পাস
  8. ক্রীড়াঙ্গন
  9. খুলনা
  10. চট্টগ্রাম
  11. চাকরির খবর
  12. জাতীয়
  13. জানা-অজানা
  14. ধর্ম
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভাতার টাকা প্রতারক চক্রের অ্যাকাউন্টে, দুচিন্তায় মারা গেলেন বিনোদিনী

নিউজ পোর্টাল ২৪
জুন ২৯, ২০২১ ২:৪৮ অপরাহ্ন
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট:: ভাতার টাকা না পেয়ে দুচিন্তায় মারা গেছেন বিনোদিনী বর্মনী নামের এক সুবিধা ভোগী নারী। তার আইডি নং-০১৪৯০০১৯৭৮৯। তার বাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নাওডাঙ্গা গ্রামের মৃত যোগেন্দ্র নাথের স্ত্রী।

মঙ্গলবার সকালে ভাতাভোগী বিনোদিনীর বাড়ীতে গেলে তার ছেলে বিজয় চন্দ্র রায় ও বিনোদ চন্দ্র কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ‘আমার মা র্দীঘদিন ধরে ভাতার টাকা তুলে আসছেন। কিন্তু চলতি অর্থ বছরের ভাতার টাকা তোলার জন্য আমার মা গত ১০ থেকে ১৫ দিন থেকে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে গেলেও ভাতার টাকা তুলতে পারেনি।’

অন্যদিনের মতো সোমবার সকালেও ভাতার টাকার জন্য সমাজসেবা অফিস গিয়েছিল।

প্রায় দুই ঘন্টা অপেক্ষা করে টাকা না পেয়ে মনের দুঃখে বাড়ীতে চলে আসেন।বাড়ীতে আসলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমার মনে হয় আমার মা টাকা না পাওয়ার কষ্টে হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছেন।

বিনোদিনীর ছেলে বিজয় চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী জ্যেতিকা রানী জানিয়েছেন,তার মা বিনোদিনী বর্মনী ভাতার টাকা দিয়েই কোন রকমেই সংসার চলতো। তাই ভাতার টাকা তুলতে না পেয়ে কয়েকদিন থেকে তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন।

একদিকে অভাব ও অন্যদিকে ভাতার টাকা না পাওয়ায় টেনশনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তার পরিবার ও স্থানীয়রা।

বিনোদিনীর তিন ছেলে। বড় ছেলে গোরকমন্ডল আবাসনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকেন। বাকি দুই ছেলে মায়ের বাড়ীর সাথেই আলাদা বাড়ীতে তারাও আলাদা সংসারে থাকেন। তিন ছেলে কোন রকমেই দিনমজুরের কাজ-কাম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে।

অন্য দিকে ঘরে খাবার নেই। ভাতার টাকা না পাওয়ায় ধার-দেনা করে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাছেন খলিলুর রহমান, কার্ড নম্বর ২১৫ ও কান্দিরী বেওয়া,কার্ড নম্বর-৯৭৫।কান্দিরী বেওয়ার বাড়ী উপজেলার কুটিচন্দ্রখানা গ্রামে এবং খলিলুর রহমানের বাড়ী উপজেলার রামরামসেন গ্রামে।

খলিলুর রহমান ও কান্দিরী বেওয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ‘আজ আইত পোয়াইলে কি খামু বাহে! এ চিন্তায় বাঁচি না। সবাই টাকা পেল। আমরাই এখনো পেলাম না। বয়স হওয়ায় আগের মতো কাজ-কর্ম করতে পারি না। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি বাহে!’

শেখের বেটি হামাক গুলাক ভাতার কার্ড করে দিয়েছে। টাকা আসবে সেই আশায় অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু এহন পর্যন্ত ভাতার টাকা মেবাইলে আসলো না বাহে!

হামার ভাতার টাকার জন্য প্রতিদিন অফিসে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ধর্না দিচ্ছি বাহে! তাও হামার ভাতার টাকা জুটলো না বাহে! এহন শুনছি হামার ভাতার টাকা না কি মানষের পেটে গেইছে বাহে!

শুধু বিনোদিনী, খলিলুর রহমান ও কান্দিরী বেওয়া নন ফুলবাড়ীতে ৬ শতাধিক অসহায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ভাতাভোগীর প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকা অন্য বিকাশ নম্বরে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র।

ভাতার টাকা না পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিস কার্যালয়ের সামনে দিনের পর দিন ধর্না দিলেও সুফল পাচ্ছে না ভাতাভোগিরা। এ ঘটনার সচেতন মহলসহ উপজেলা বাসীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা গেছে।

জানা গেছে, ‘উপজেলায় ৯ হাজার ৮২৩ জন বয়স্ক, ৪ হাজার ৮৫১ জন বিধবা এবং ৩ হাজার ২২৬ জন প্রতিবন্ধিসহ মোট ১৭ হাজার ৯০০ জন ভাতাভোগি রয়েছে। ভাতাভোগীরা পুর্বে বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলেও ২০২০-২০২১ অর্থ বছর থেকে ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে টাকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করে সরকার।ফলে সারা দেশের ন্যায় ফুলবাড়ীতেও ভাতাভোগীরা একাধিকবার তাদের নিজ নিজ বিকাশ নম্বর অফিসে জমা দেন।’

চলতি জুন মাসে ভাতাভোগিদের বিকাশ নম্বরে বয়স্ক ও বিধবা জনপ্রতি ৩ হাজার এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধি জনপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ আসে । কিন্তু ১৬৬৪ নম্বর বইধারী অসচ্ছল প্রতিবন্ধি ভাতাভোগি দোলেনা বেগমের বিকাশ নম্বর- ০১৭২৩৬৪০১৬১ তার টাকা গেছে- ০১৭২৫৩৯৫০০৭ নম্বরে, ২১৫ নম্বর বইধারী অসচ্ছল প্রতিবন্ধি ভাতাভোগি খলিলুর রহমানের বিকাশ নম্বর- ০১৭৯৬৮০৭৪৯০ তার টাকা গেছে- ০১৭১০৪১৩০৯২ নম্বরে, ৬৯১ নম্বর বইধারী বয়স্ক ভাতাভোগি ক্ষিতিশ চন্দ্রের বিকাশ নম্বর- ০১৮৪১৩৯১০২৭ কিন্তু টাকা গেছে- ০১৭৬৩৯৭৯১০৩ নম্বরেসহ প্রায় ৬ শতাধিক ভাতাভোগির টাকা প্রতারকদের বিকাশ নম্বরে চলে যায়।

ওই সকল নম্বরে কল দিলে প্রত্যেকটি নম্বর সব সময় বন্ধ থাকে বলে ভাতাভোগীরা জানিয়েছেন।

ভাতা বঞ্চিত অনেকেই জানান, ‘উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সুপারভাইজার কাম কমম্পিউটার অপারেটর অমিতাভ কুমারসহ অফিসের একটি চক্র ভাতাভোগিদের নম্বর পরিবর্তন করে ঢাকায় তালিকা প্রেরণ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এ ব্যাপারে সমাজ সেবা অফিসের সুপারভাইজার অমিতাভ কুমার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, ‘এর সাথে অফিসের কারও যুক্ত হওয়ার সুযোগ নাই।’

এ বিয়য়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রায়হানুল ইসলামের কার্যালয়ে গেলে ভাতা ভোগীর টাকা অন্য নম্বরে চলে যাওয়ার বিষয় স্বীকার করে জানান, ‘অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক যে সকল ভাতাভোগির টাকা অন্য নম্বরে গেছে তাদের তালিকা করে অফিসের পক্ষ থেকে ওই নম্বরগুলোর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হবে।এর সাথে অফিসের কোন চক্র জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন , এটা সত্য নয়।’

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খোঁজ খবর নিয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষে জানানো হবে। ভাতার টাকা না পেয়ে বিনোদিনীর মৃত্যুর খবর খুবই দুঃখজনক। তার পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।’ সূত্র: সময়ের কণ্ঠস্বর